Main Menu

সরাইলে নিখোঁজের তিন দিন পর লাশ। প্রতিপক্ষের বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট-অগ্নিসংযোগ

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ, সরাইল ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে নিখোঁজের তিন দিন পর উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের শাখাইতি গ্রামের আবদুল হাইয়ের ছেলে জয়নাল মিয়ার (২৪) লাশ উদ্ধারের পর অন্তত ২০টি বসতবাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তিনটি বাড়িতে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। জয়নাল মিয়া হত্যা এবং বসতবাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে গ্রামে সমাবেশ হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১২ জুন বিকেলে জয়নাল মিয়া সিএনজি চালিত অটোরিকশার নিয়ে বের হন। উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর বাজার থেকে সদর উপজেলার নন্দনপুর গ্রামে যাওয়ার কথা বলে অটোরিকশাটি ভাড়া নেন একই গ্রামের আশিদ মিয়ার ছেলে সাগর (কালন) মিয়া (২২) ও ইসমাইল মিয়ার ছেলে ফায়জুল মিয়া (২৩)। এই দুই যাত্রীকে নিয়ে যাওয়ার পর অটেরিকশাসহ জয়নাল মিয়া নিখোঁজ হন। তিন দিন পর ১৫ জুন বিকেলে পুলিশ উপজেলার বেড়তলা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। কালন মিয়া ও ফায়জুল মিয়া জয়নাল মিয়া নিখোঁজের পর গা ঢাকা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) জয়নাল মিয়ার লাশ উদ্ধার পর সন্ধ্যায় কালন মিয়ার বাড়ি ভাংচুর ও ফায়জুল মিয়ার বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পর দিন (১৬ জুন) সকালে ভাঙচুর-লুটপাট-অগ্নিসংযোগ করা হয় কালন মিয়ার বংশের আবুল কাশেম, কাশেম মিয়া, রুক্কু মিয়া ও আরব আলী এবং ফায়জুল মিয়ার বংশের হাজী ইজ্জত আলী, হাবিবুর রহমান,আজিজ মিয়া, উসমান গণি চৌধুরী ও মুক্তার হোসেনের বাড়িতে।
জয়নাল মিয়া হত্যার ঘটনায় তার বড় ভাই ফারুক মিয়া বাদী হয়ে ১৬ জুন বিকেলে কালন মিয়াকে প্রধান করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও চার-পাঁচ জনকে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সাখাইতি গ্রামের উসমান গণি চৌধুরীর চাতাল কলে সমাবেশ করেছে স্থানীয় লোকজন। হাজী মোহাম্মদ আলীর সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক ইউপি সদস্য আকবর আলী, মোস্তফা মিয়া, সাদু মিয়া,উসমান চৌধুরী প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন আমরা জয়নাল মিয়া হত্যার ষুষ্ঠু বিচার চাই। জয়নাল হত্যার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু ঘটনার সাথে যারা জড়িত নয়, যারা নিরপরাধ লোক তাদের বাড়িঘর কেন ভাঙ্চুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হলো। আমরা এসবেরও বিচার চাই। বক্তরা বলেন হত্যার ঘটনার সাথে চার/পাঁচজন জড়িত। কিন্তু মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও চার/পাঁচ জনকে। এতে অন্তত ৩০-৩৫ টি পরিবার গ্রাম ছাড়া হয়ে পড়েছে।
শাখাইতি গ্রামের বাসিন্দা ও পানিশ্বর ইউপির চেয়ারম্যান দীন ইসলাম বলেন, গ্রামের কিছু লোক পূর্ব বিরোধকে কাজে লাগিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্ঠান্তমূলক বিচার চাই।
ভাঙচুরের শিকার উসমান গণি চৌধুরী (৬২), ইজ্জত আলীর ছেলে জামাল মিয়া (২৬) বলেন, ফায়জুল মিয়া বা কালন মিয়া আমাদের কেউ না। আমারা তাদের প্রতিবেশী হওয়াতে গ্রামের গোলাপ চৌধুরী, (৬০), বোরহান মিয়া (২৬), শাহআলম (৩২), বাচ্চু মিয়া (৩৫) ও মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে এক থেকে দেড়শ উছশৃঙ্খল লোক আমাদের সর্বনাশ করেছে। অপকর্ম করেছে কালন আর ফায়জুল। আমরাও তাদের বিচার চাই। কিন্ত এ ঘটনার জন্য আমাদের সর্বশান্ত করা হয়েছে। আমরা এখন নিজ বাড়িতে থাকতে পারছি না। তারা দাবি করেন ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি করা হয়েছে।
ফারুক মিয়া বলেন, আমি ভাইয়ের হত্যায় ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি। গ্রামে কারা ভাঙচুর লুটপাট করেছে জানি না। এর সঙ্গে আমরা জড়িত নয়।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপক কুমার সাহা বলেন, জয়নাল মিয়ার লাশ উদ্ধারের খবরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রামের কিছু লোক উত্তেজিত হয়ে দুই একটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ বাদী হয়ে মামলা দিয়ে আইনগত ব্যস্থা নেওয়া হবে।






Shares