Main Menu

আকবর আলি খান

+100%-

 

আকবর আলি খান

আকবর আলি খান একজন বাংলাদেশী আমলা, অর্থনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের এসডিও ছিলেন এবং যুদ্ধকালীন সময়ে সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সাথে কাজ করেন দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি সরকারী চাকুরী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা ছিলেন। পরবর্তীতে সুষ্ঠ নির্বাচন সম্পন্ন না হবার আশংকায় তিনি তিনজন উপদেষ্টার সাথে একযোগে পদত্যাগ করেন।

প্রারম্ভিক জীবন:

আকবর আলি খান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পুরো স্কুল জীবন পার করেন নবীনগর হাই স্কুলে। তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬১ সালে আই. এস. সি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান ১৯৬৪ সালে সম্মান ও ১৯৬৫ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন দুটিতেই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে। সরকারী চাকুরীতে যোগদানের পূর্বে তিনি কিছুসময়ের জন্য শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে তিনি লাহোরের সিভিল সার্ভিস একাডেমিতে যোগ দেন। সেখান থেকে এস. ডি. ও. হিসেবে বদলি হয়ে হবিগঞ্জে ফিরে আসেন ১৯৭০ সালে। তিনি তার এলাকায় সুষ্ঠুভাবে ১৯৭০ এর নির্বাচন পরিচালনা করেন।

মুক্তিযুদ্ধ:

যুদ্ধ শুরুর আগের অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি গেরিলা যোদ্ধাদের অস্ত্র যোগান দেবার সিদ্ধান্ত নেন। মুজিবনগর সরকার তখনো প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অনেক সরকারী কর্মচারীই লিখিত অনুমতি ছাড়া অস্ত্র যোগান দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র , খাদ্য ও অর্থ যোগান দেবার অনুমতি দেন। তিনি বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌছে দেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য যোগান দেবার জন্য গুদামঘর খুলে দেন এবং পরবর্তীতে আগরতলায় চলে যান। তিনি বলেন, আগরতলায় যাওয়ার পর আমরা একটা পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন গড়ে তোলার চেষ্টা করি। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা, উদ্বাস্তু শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়েছিল তাদের সহায়তা করা। প্রথমদিকে আমাদের একরকম একা একাই কাজ করতে হয়েছে। মুজিবনগর সরকার গঠিত হবার মাসখানেক পর আমাদের সঙ্গে পুরোপুরি যোগাযোগ হয়। জুলাই মাসে তাকে সরকারে যোগ দেবার জন্য কলকাতায় ডাকা হয় এবং সেখানে তিনি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে উপসচিব পদে যোগ দেন। আগস্ট মাসে তিনি একই পদে থেকে নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন।

পরবর্তী জীবন:

স্বাধীনতার পর তিনি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তিনি সেখানে ছয় মাস চাকরি করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান থেকে ফেরত ব্যক্তিদের চাকরি পেতে সহায়তা করেন। পরে তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতায় যোগ দানের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দিলেও শেখ মুজিবর রহমান তা গ্রহণে অস্বীকৃত জানান। তাকে অবসর না দিয়ে শিক্ষকতা করার জন্য ছুটি দেয়া হয়। কমন ওয়েলথ বৃত্তির জন্য মনোনীত হবার আগে তিনি অল্পসময়ের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। বৃত্তির জন্য তিনি কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়এ যোগ দেন এবং সেখানে অর্থনীতি বিভাগে মাস্টার্স এবং পি. এইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৯ সালে দেশে ফেরত আসার পরে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাকে আবারো প্রশাসনের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে যোগ দেবার জন্য আহ্বান জানানো হয়। ১৯৮৭ সালের আগ পর্যন্ত তিনি পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং কর্মকমিশন সচিবালয়ে কাজ করেন।

তিনি ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসে অর্থমন্ত্রী পদে যোগ দেন। ঢাকায় ফিরে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগে অতিরিক্ত সচিব পদে যোগ দেন। তার সময়ে তিনি বিসিসিএল ব্যাংকের পূণর্গঠন এবং বেসিক ব্যাংক অধিগ্রহণের কাজ করেন। অল্প সময়ের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে কাজ করে তিনি আবারো অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফিরে আসেন।


তিনি প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ (মন্ত্রী ছাড়া) সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি সচিব হিসেবে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। তার পরবর্তী কর্মক্ষেত্র বিশ্ব ব্যাংকে তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক

শেখ মুজিবর রহমান প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কে রাজাকার আর কে নয় তা নিয়ে রেষারেষি দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষামন্ত্রীকে ডেকে এ বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিলে তিনি এর দায়িত্ব আকবর আলি খানকে হস্তান্তর করেন। রাজাকারদের জন্য তখন একটি আইন প্রচলিত থাকায় এবং সে আইনের অধীনে এ তদন্ত সম্ভব নয় বলে খান নির্দেশানুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন পরিবেশন করে তার অসন্তোষের কথা উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে তার নোটসহ তদন্ত প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে গেলে তিনি বিষয়টি অনুধাবণ করেন। তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে ডেকে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলার পরামর্শ দেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, যখনই যা আমার কাছে পছন্দ বা আইনসিদ্ধ মনে হয়নি আমি লিখিত নোট দিয়েছি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমার অভিগ্ঞতা বলছে যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা গৃহীত হতে বাধ্য।

সমসাময়িক কার্যাবলী:

বিশ্ব ব্যাংক থেকে অবসর গ্রহণের তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর গভরর্ণমেণ্ট স্টাডিজ প্রতিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে উপস্থিত হয়ে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। পাশাপাশি তিনি দেশের ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও অগ্রগতি নিয়ে গবেষণা করছেন।

বই:

আলি আকবর খানের গ্রন্থ “হিস্টোরি অফ বাংলাদেশ” বা বাংলাদেশের ইতিহাস’ বাজারে এনেছে এশিয়াটিক সোসাইটি। বইটিতে তিনি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সামাজিক উত্থান ও পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি দেশে ইসলাম ধর্মের বিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি অর্থনীতিবিষয়ক বই, পরার্থপরতার অর্থনীতিতে তিনি সরস ও প্রাঞ্জল ভাষায় অর্থনীতির জটিল বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেছেন।



(পরের সংবাদ) »