Main Menu

নবীনগরে স্মার্ট কার্ড বিতরণে টাকার খেলায় মেতেছেন চেয়ারম্যান-নির্বাচন কমিশন(ভিডিও)

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলায় স্মার্ট কার্ড বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র হারানো বাবদ ব্যাংকের চালানের নির্ধারিত ফির চেয়ে বাড়তি টাকা নিয়মবর্হিভূতভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা ভোটারদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্রহ করছেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানের নির্দেশে এভাবেই স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুযায়ী, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে তাদের চালান ফরমের মাধ্যমে নির্ধারিত কোডে ৩৪৫ টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়ে নির্ধারিত ভেন্যু থেকে স্মার্ট কার্ড গ্রহন করতে হবে। এছাড়া নতুন ভোটারদের স্লিপ হারিয়ে গেলে তাদের ১২৫ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। কিন্তু বড়াইল ইউনিয়নের যাদের জাতীয় পরিচয় পত্র (পুরাতন ভোট কার্ড) হারিয়ে গেছে এবং নতুন ভোটারদের স্লিপ হারিয়ে গেছে তাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়েছে। বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও ইউপি সদস্য দ্বীন ইসলাম ব্যাংকে চালান ফরমের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়ার কথা বলে ভোটারদের কাছ থেকে ৩৫০ টাকা করে আদায় করেছেন।
এদিকে সর্বশেষ গত ২৫ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও ইউপি সদস্য দ্বীন ইসলামের নেতৃত্বে স্মার্টকার্ড বিতরণে ভোটারদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করতে দেখা গেছে। যেসব ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে তাঁরা চালানের টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে সরাসরি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের কাছে জমা দিতে দেখা গেছে। এসব টাকার সিংহভাগই ব্যাংকে জমা না আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কারো জাতীয় পরিপত্র হারানো গেলে চালানের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার কথা। সরাসরি এভাবে ভোটারদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম বা বিধান নেই। এটা টাকা লুটপাট করার একটা কৌশল। তিনি আরও বলেন, কারণ ঠিক কতজন জাতীয় পরিচয়পত্র হারানোর অভিযোগ করেছে সেই হিসেবটা থাকে না। পরবর্তীতে সংগ্রহ করা সম্পূর্ণ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সরাসরি এর সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে এই টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে সরাসরি সংগ্রহ করাচ্ছেন। পরে কিছু টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে বাকিটা আত্মসাৎ করছেন বলে তিনি দাবি করেন।জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে এসব টাকার ভাগ সংগ্রহ করে থাকেন।

নবীনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মিলিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়।এরমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে এমন অভিযোগ পড়েছে প্রায় ৫ হাজারের বেশি।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ আগস্ট উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়। ২৫ আগস্ট বড়াইল ইউনিয়নের বড়াইল উচ্চ বিদ্যালয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হয়। ওই দিন ওই কেন্দ্রে ৩ হাজার ৭০০ স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়। ২৬ আগস্ট একই ইউনিয়নের গোসাইপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়। গত সোমবার এই ইউনিয়নের ৩ হাজার ৭২৫জন নতুন স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার বড়াইল ইউনিয়নের জালশুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই হাজার ৬১ জনকে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার সরেজমিনে জালশুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের উত্তরদিকে যেতেই ইউপি চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলামকে দেখা গেছে। সেসময় তার হাতে অনেকগুলো কাগজ। পরিচয় দিলে তিনি এসব কাগজ দেখান। তার হাতে সেময় জাতীয় পরিচয়পত্র হারানো ১৭জনের অনলাইন প্রিন্টের কাগজ ছিল। এসময় খুব দ্রুত গতিতে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে আসতে দেখা গেল। পরিচয় দিলেও তিনি দাঁড়াননি। ব্যস্ত বলে সেখান থেকে সরে পড়েন।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য দ্বীন ইসলাম বলেন, যেসব ভোটাররা জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলেছেন তাদের কাছ থেকে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া জন্য ৩৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। বিনিময়ে তাদেরকে একটি করে স্লিপ দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, পরে এই টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হবে।

সাড়ে তিনটার দিকে জালশুকা সরকারি প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্বদিকে মানুষের জটলা দেখা যায়। কাছে যেতে দেখা বিদ্যালয়ের দুটি বেঞ্চ বসানো। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ও তার লোকজন বসে রয়েছে। ভোটাররা তাকে ঘেরাও করে রেখেছে। তিনি ভোটারদেরকে স্মার্ট কার্ড সংগ্রহের স্লিপ বিতরণ করছিলেন। আর যারা যেসব ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলেছেন তাঁরা স্লিপের জন্য চেয়ারম্যানকে ৩৫০ টাকা করে দিচ্ছেন। প্রথমদিকে তিনি নিতে অনাগ্রহ জানালেও পরবর্তীতে তিনি ভোটারদের কাছ থেকে টাকা নেন। অবশ্য বিকলে দুইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ওই কেন্দ্রে দেখা যায়নি।

বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, তিনদিনে জাতীয় পরিচয়পত্র হারানোর এমন ৪০০জনের বেশি তাঁর কাছে ৩৫০টাকা করে জমা দিয়েছেন। তিনদিনে চেয়ারম্যানের কাছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা পড়েছে। তিনি জানান, টাকা তার কাছেই রয়েছে। পরে নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দেওয়া হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র হারানোর আবেদনকারীদের তালিকা সংরক্ষণ এবং হিসাব মেলাবেন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে হিসেব রয়েছে। একপর্যায়ে পরে তিনি রেগে যান এবং বলেন, আমরা মানুষের সুবিধার জন্যই এসব করছি। আর পুরো জেলার সবজায়গায় এভাবেই টাকা নেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত ২০ অক্টোবর একই উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ে স্মাটর্কার্ড বিতরণের সময় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে সেখানেও পাওয়া গেছে।

কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের একটি কক্ষে ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও থেকে দেখা গেছে, কালো ও বেগুনি রঙের টিশার্ট পড়া দুই যুবক, পাঞ্চাবি পড়া দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি (ইউপি সদস্য)একটি কক্ষে বসে টাকা গুনছেন। এই টাকাগুলো জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে যাওয়া এমন ভোটারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, এভাবে টাকা নেওয়ার কোনো বিধান নেই। চিঠির মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলা হয়েছে। ব্যাংকের রশিদ ছাড়া যেন কাউকে কোনো স্মার্ট বিতরণ করা না হয়ে সেবিষয়ে স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এসব টাকার হিসেবে কে রাখবে। চেয়ারম্যান এমনটি করে থাকলে অন্যায় করেছে। কারণ এই বাড়তি চাপ ও দায় কে নিবে। আপনি এসব জানেন এবং টাকা আত্মসাৎ করছেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ধরণের কথা বললে তো মরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। এটা কি সম্ভব। আমাকে কিভাবে কে টাকা দেবে। আমাকে কেন টাকা দেবে।আর কেউ যদি অভিযোগ করে কি করার আছে। তিনি বলেন, নগদ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে আমি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে নিষেধ করেছি। তাদেরকে বলেছি কোনো ধরণের ঝামেলা হলে এরজন্য তারা দায়ী থাকবে।

ভিডিও :: ক্লিক করুন






Shares