Main Menu

সরাইলে জলমহাল ইজারায় অনিয়ম। এলাকায় উত্তেজনা

+100%-

মোহাম্মদ মাসুদ ,সরাইল :  সরাইলে সরকারি প্রজ্ঞাপন অমান্য করে মাসোহারার বিনিময়ে জলমহাল ইজারা দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। উপজেলার বিল ‘মোড়ল গজারিয়াকুড়ি’ এর ইজারায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও মৎস্যজীবি সমিতির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম মিথ্যা তথ্য ও প্রতারণার মাধ্যমে ইজারার ঘটনায় ক্রমেই ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠছেন সেখানকার মৎস্যজীবিরা। কিছু কর্তা বাবুর যোগসাজসে দেখানো হচ্ছে ভূয়া উন্নয়ন প্রকল্প। আবার বাণিজ্যের বিনিময়ে একই বিলকে ইজারাও দেওয়া হয়েছে।

একাধিকবার সাব-লীজ দিলেও চোখ বন্ধ করে আছেন উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তারা। সাব-লীজ গ্রহীতারাও নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। মেশিনে বিলের পানি শুকিয়ে মাছের প্রজণন ক্ষমতা ধ্বংস করছেন নিয়মিত। ব্যাহত হয়েছে ইরি বোরো চাষ। এ সকল অনিয়মের কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন খোদ সমবায় কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন। ৬ বছরে বিল পরিদর্শন করে উন্নয়ন প্রকল্পের কোন প্রতিবেদনও তিনি দেননি। ভাউছার আছে কিনা সেটাও জানা নেই তার। আবার এসব নীতিমালা অমান্যকারী সমিতিকেই রহস্যজনক কারনে খুঁজে বের করে বিলটি লীজ দেওয়ার পায়তারা করছেন।

এ বিলের ইজারা পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করেই ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর কালিকচ্ছ ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি সদস্য নরেশ চন্দ্র দাসকে খুন করা হয়েছিল। একাধিক মৎস্যজীবি সমিতি, স্থানীয় লোকজন ও উপজেলা সমবায় অফিস সূত্রে জানা যায়, ধর্মতীর্থ এলাকায় ১০৫৭৬ দাগের ৭১.২৮ একর জায়গা জুড়ে ‘মোড়ল গজারিয়াকুড়ি’বিলের অবস্থান। বিলটির ইজারা পাওয়া না পাওয়াকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন আগেই সেখানে গড়ে ওঠেছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। সুযোগে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তা ব্যক্তিরাও বাণিজ্যে মাতোয়ারা। প্রজ্ঞাপনের কোন ধারাকে আমলে আনছেন না তারা। বিধান না থাকলেও লীজ পাওয়ার পর ইচ্ছেমত টাকা নিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছে সাব-লীজ দিয়ে বাণিজ্যের ধান্ধা পাকাপোক্ত করছেন একাধিক সমিতি। সন্তোষজনক ভাগ পেয়ে অনিয়কেই নিয়ম দেখিয়ে ধামাচাপা দিয়েছেন দপ্তর প্রধানগন।

উন্নয়ন প্রকল্পের আবেদনের মাধ্যমে ইজারা নিয়ে ৬ বছরে বিন্দু পরিমাণ উন্নয়ন না করেও উন্নয়ন দেখানোর পায়তারা করছেন সমিতি ও কর্তা ব্যক্তিরা। নীতিমালা অমান্য করার একাধিক প্রমাণের উল্লেখ করে ‘ধর্মতীর্থ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লি:’ ও ‘গলানিয়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লি:’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। সেখানে ষ্ট্যাম্পের মূল্য ও নাম্বার পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগকারী গলানিয়া সমিতির সম্পাদক মো. নবী হোসেন বলেন, দূর্গাচরন দাস কোন মৎস্যজীবি নয়। তিনি পেশায় একজন বাউল শিল্পী। জেলে নামধারী একজন জলদস্যু। ধর্মতীর্থ মৎস্যজীবি সমিতি ৬ বছরের জন্য নিয়েই একাধিক ব্যক্তির কাছে সাব-লীজ দিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। কোন উন্নয়নও করেননি। সমিতিটি বাতিলের জোর দাবী জানাচ্ছি। অপর অভিযোগকারী ধর্মতীর্থ সমিতির সম্পাদক দূর্গাচরন দাস বলেন, সব মিথ্যা। নবী হোসেন ও এক সময় বিলটি সাব-লীজ দিয়েছিল। ৪০ জন সদস্যের স্বাক্ষর জাল করেছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। তার সমিতিও বাতিল হওয়া প্রয়োজন। প্রত্যাশা’র সম্পাদক পরিমল দাস, রপালীর সভাপতি তাহের মিয়া ও নদ্দাপাড়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সম্পাদক শ্রী নিবাস বলেন, বিল ইজারাকে কেন্দ্র করে বারবার অনিয়ম হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে নীতিমালা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। তাই এবার ইজারাকে কেন্দ্র করে এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা বিরাজ করছে। খোলা দরপত্রের মাধ্যমে বিলটি ইজারার ব্যবস্থা করলে সরকার অধিক রাজস্ব পাবে। এলাকায়ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। ৬ বছরের উন্নয়ন প্রকল্পের কোন প্রতিবেদন আমি দেয়নি। ভাউছার আছে কিনা তাও জানি না। তবে অডিট হয়েছে। কিছু উন্নয়ন তো হয়েছেই। বিলে বাঁধ দেওয়া, মেশিনে তলা শুকিয়ে ফেলাকে বিধি বহির্ভূত বললেও কেন ব্যবস্থা নেননি? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি একেবারে নীরব থাকেন। অপর সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোছা. মাইমুনা জাহান বলেন, বিল থেকে সমিতির সদস্যদের বাড়ির দূরত্ব ও সরকারি রাজস্বের বিষয়টি শুধু আমরা তদন্ত করেছি। অন্য বিষয় গুলো আমরা তদন্ত করিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ.এস.এম মোসা বলেন, নীতিমালায় সাব-লীজ, বিলে বাঁধ ও শুকিয়ে মাছ ধরা সবই বেআইনি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।






Shares