Main Menu

জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদ কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মন্ত্রীও জেলা আওয়ামীলীগ দ্বন্দ্বের শঙ্কা!

+100%-

zpi
এম.ডি.মুরাদ মৃধা ঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু পল্লীতে দুস্কৃতিকারীদের চালানো হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে মনোনয়ন নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের পাঠানো তালিকা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যড. মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের তিন সদস্য প্রার্থী দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের দ্বন্দ্বের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই ইউপিতে মন্ত্রীর পছন্দের দুই প্রার্থীকে বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ অপর দুই প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে ১৫টি ও ৫টি সংরক্ষিত পদে প্রার্থীদের নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠালেও নাসিরনগরে যে ৩ জনের নাম প্রেরণ করেছে তারা ৩ জনই মন্ত্রী ছায়েদুল হকের বিরোধী শিবির এবং জেলা আওয়ামী লীগ সমর্থক। নির্বাচনে নাসিরনগর উপজেলার ১ নং ওয়ার্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আদেশ চন্দ্র দেব, ২নং ওয়ার্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক গোলাম সামদানি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য এম.আর.আই রোকেয়া খানমের নাম সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদীর চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের সাক্ষরিত তালিকাটি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক ১নং ওয়ার্ডে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান চৌধুরী আসাদ, ২নং ওয়ার্ডে ফান্দাউক ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক এবং সংরক্ষিত আসনে নাসিরনগর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলমের স্ত্রী শাহিনা আক্তারকে মৌখিকভাবে সদস্য পদে নির্বাচন করার জন্যে বলেছেন। নির্বাচনে ওই তিনজনও আওয়ামীলীগের প্রার্থী পরিচয় দিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার জানান, জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে মন্ত্রী ছায়েদুল হককে আমন্ত্রণ জানানোর পরও তিনি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠকে আইনমন্ত্রী অ্যাড. আনিসুল হকসহ জেলার সকল উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। অনুপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকও। এ অবস্থায় আমরা নাসিরনগর থেকে মাত্র তিনজনের আবেদন পেয়েছি, বিকল্প কোনো প্রার্থীর আবেদন না থাকায় ১নং ওয়র্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আদেশ চন্দ্র দেব, ২নং ওয়ার্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক গোলাম সামদানি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য এম.আর.আই রোকেয়া খানমের নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

মৎস্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মো. ফারুকুজ্জামান ফারুক বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা তিনজন নির্বাচন করছি। জেলা আওয়ামী লীগ কিভাবে কাদের মনোনয়ন দিয়েছে আমরা সেটি জানি না।

নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ.টি.এম মনিরুজ্জামান সরকার এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সুপারিশকৃত ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী গোলাম সামদানি বলেন, আমার ওয়ার্ডে যাকে মনোনীত করা হয়েছে বলে শুনেছি তিনি মন্ত্রীর লোক। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগ আমাদের মনোনয়ন দিয়েছে, তাই আমরাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী অ্যাড. মোহাম্মদ ছায়েদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সদস্য পদে আ.লীগের মনোনয়ন পেতে ২০ হাজার টাকা ‘ফি’ আদায়!
জেলা পরিষদের নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে ‘ফি’ আদায় করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সদস্য প্রার্থী জানিয়েছেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে ২০ হাজার টাকা ‘ফি’র সঙ্গে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়া হয়েছে। একেকটি ওয়ার্ড থেকে বেশ কয়েকজন সদস্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিল। মোট ১৫টি ওয়ার্ডে ৫৭জন সদস্য প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কাছে আবেদন করেছিল। পরে জেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড আওয়ামী লীগের মনোনীত সদস্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে সুপারিশসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠায়। তালিকায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের সাক্ষরও রয়েছে।
‘ফি’ আদায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, প্রার্থীদের কাছ থেকে ‘ফি’ নেয়ার মূল কারণ হলো অধিক প্রার্থী হতে নিরুৎসাহিত করা। এই ‘ফি’র টাকা দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণার কাজেই ব্যায় করা হবে। তিনি আরও জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা ‘ফি’ নেয়া হয়েছে। গত ইউপি নির্বাচনেও প্রাথীদের কাছ থেকে ‘ফি’ নেয়া হয়েছিল। সেই ‘ফি’র টাকা নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যয় করা হয়েছে এবং বাকী টাকা জেলা আওয়ামী লীগের ফান্ডে জমা আছে।
উল্লেখ্য, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মো. ফারুক আহমেদ ও গুনিয়াক ইউনিয়নে হুমায়ূন কবির দরবেশের নাম ঘোষণা করেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগ হরিপুর ইউনিয়নে দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি এবং গুনিয়াউক ইউনিয়নে গোলাম সামদানিকে মনোনয়ন দেয়। মূলত এ ঘটনার পরই জেলা আওয়ামী লীগ ও মন্ত্রীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। মন্ত্রী একটি জাতীয় দৈনিকে তার বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নাসিরনগরের ওই দুটি ইউনিয়নে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেন।






Shares