Main Menu

কর্তৃপক্ষের দাবী সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ না

নাসিরনগরে সেতুতে ফাটল: ঝুঁকিপূর্ণ ৩ সেতু দিয়ে চলছে ভারী যানবাহন, দূর্ঘটনার আশঙ্কা

+100%-

নাসিরনগর প্রতিনিধি::  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হবিগঞ্জ-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়েকর তিনটি সেতুর গার্ডারে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেতু তিনটির অধিকাংশ স্থানে রেলিং ভেঙ্গে গেছে। দুটি সেতু প্রায় এক ফুট দেবে গেছে। এতে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক বাস, ট্রাক ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে।
সেতুগুলো হলো- হবিগঞ্জ-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়েকর বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বেনীপাড়া মহাখাল খালের উপর নির্মিত সেতু, একই ইউনিয়নের শ্রীগর গ্রামের মেনদী আলীর বাড়ি সংলগ্ন একটি সেতু ও সদর ইউনয়নের দাতমন্ডল গ্রামের সেতু।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি’র) প্রাপ্ত সূত্র থেকে জানা গেছে, ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য সেতুটি বুড়িশ্বর ইউনিয়নের বেনীপাড়ার মহাখাল নামক স্থানে নির্মাণ করা হয় ১৯৯০ সালের দিকে। এই সেতুটিসহ অপর দুই সেতু ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২০২২ সালের বন্যায় এলজিইডি ও সওজের ছোট-বড় আরো ১০টি সেতু ও কালভার্ট পানিতে ভেসে যায়। এর মধ্যে উল্লেখিত তিনটি সেতুর গার্ডার সরে গিয়ে এক ফুটের মতো নিচে দেবে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যা সম্প্রতি বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের কর্তপক্ষ সংস্কারের কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে দাবী করছেন সওজের কর্মকর্তারা। তাদের দাবী, হবিগঞ্জ-নাসিরনগর-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রসস্থকরণের কাঝ শুরু হবে। সে সময় ওই সেতুগুলোর নির্মাণ কাজ করা হবে। এখনই তাদের কাছে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে না।
প্রায় দুই ঘন্টা সেতু তিনটির ওপর ও এর আশপাশ এলাকায় অবস্থান করে দেখা গেছে, সেতুগুলোর উপর দিয়ে প্রতি মিনিটে প্রায় ৮-১০টি পণ্য ও যাত্রীবাহী যান চলাচল করছে। গাড়ি নিয়ে সেতুটির ওপর উঠার আগে অনেক চালককে দোয়া পড়তেও দেকা গেছে। বিশেষ করে বেনীপাড়া গ্রামের মহাখাল সেতুটির মধ্যবর্তী স্থান থেকে সেতুর মূল সংযোগটি প্রায় এক ফুট সরে গেছে। সেতুর ১২-১৫ জায়গায় ফাটল ধরেছে। ফাটল ও ভাঙ্গা অংশে দেওয়া হয়েছে জোগাতালি। সেতুর কয়েকটি রেলিং ভেঙ্গে গেছে। দুই দিকে গার্ডার সরে গিয়ে মৃত্যুকূপ তৈরি হয়েছে। সেতুটির উপরে অটোরিক্সা উঠলেই কাঁপে। একই ইউনিয়নের মেনদী আলীর বাড়ি সংলগ্ন সেতুটির উপড়ের অংশ ভেঙ্গে গেছে। এদিকে উপজেলা সদর ইউনিয়নের দাতমন্ডল গ্রামের সেতুটির দুই দিকে ফাটল দেখা দিয়েছে। পশ্চিম দিকে প্রায় এক ফুট হেলে গেছে।

বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো.রুহুল আমিন বলেন, ‘ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে হবিগঞ্জ জেলার যোগাযোগের আঞ্চলিক বিকল্প মহাসড়ক হলো এটি। কোন কারণে সেতুটি বিকল হয়ে পড়লে যে কোন সময় প্রাণহানিসহ হবিগঞ্জ-নাসিরনগরের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করে সেতুটি সংস্কারের দাবী করেন তিনি।
হবিগঞ্জ জেলার একজন ট্রাকচালক মো. হানিফ মিয়া বলেন,‘এই সেতু দিয়া আসা-যাওয়ার সময় সে কোন দিন মৃত্যু হতে পারে। এটা জেনেও গাড়ি চালাতে হয়। কারণ গাড়ি না চালালে সংসার চলবে না।

লাখাই উপজেলার সিএনজি চালক বলেন,‘ এই ব্রিরিজডার (ব্রিজ) ওপর উঠলেই মনটা ধুকধুক কইরা কাঁপে। কোনবেলা যানে এইডা ভাইঙ্গা যায়। মনে হয় এই বুঝি এইডা ভাইঙ্গা যাইতাছে।
নাসিরনগর উপজেলার ভ্যান চালক বাহার মিয়া বলেন, কোনবালা যে এইডা ভাঙ্গে একমাত্র আল্লাই জানে। (পুলের) সেতুর উপর উঠলে খালি নিচের দিকে যায়। পুল ফার অনের সময় আল্লার নাম স্মরণ রাখন লাগে। যদি ভাইঙ্গা যায়।
ফোন নম্বর থাকায় নাসিরনগর উপজেলা প্রকৌশলীর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সহকারী প্রকৌশলী মো. ইছাক মিয়া দাবী করে বলেন, ‘সেতুগুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগের। তাই আমাদের ইচ্ছা থাকা থাকলেও কাজ করতে পারছি না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি নাসিরনগরে কয়কটি সেতু দিয়ে যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এর পর আমরা অফিস থেকে কয়েকজন টেকনিশিয়ান পাঠাই। তারা এসে জানান মানুষ যে ভাবে বলছে আসলে এতোটা ঝুকিপূর্ণ না। তিনি এ প্রতিবদেকের কাছ থেকে সেতুগুলোর ছবি দেখে (সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ না) এ বক্তব্য থেকে সড়ে না গেলেও পূনরায় সরেজমিন সেতুগুলো দেখার আশ্বাস দেন।