Main Menu

ভাষাসৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩১তম জন্মবার্ষিকী আজ

+100%-

(বাসস) ভাষাসংগ্রামী, আইনজীবী, সমাজকর্মী ও রাজনীতিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩১তম জন্মবার্ষিকী আজ। তিনি তৎকালীন বাংলা প্রদেশের ত্রিপুরা জেলায় এবং বর্তমান বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রামরাইল গ্রামে ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।

কুমিল্লার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী এ্যাডভোকেট আবদুল করিমের সহযোগিতায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ রাতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে তার ছোট ছেলে দিলীপকুমার দত্তসহ গ্রেফতার করে। পরে তাদের ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। সে সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।

পাকিস্তান গণপরিষদ সদস্য এ দেশপ্রেমিক ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে ইংরেজী ও উর্দুর পাশাপাশি সদস্যদের বাংলায় বক্তৃতা প্রদান এবং সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য একটি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তখন ইংরেজীতে প্রদত্ত্ব বক্তৃতায় বাংলাকে অধিকাংশ জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ারও দাবি তোলেন। এছাড়া সরকারি কাগজে বাংলা ভাষা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের তিনি প্রতিবাদ জানান।

তারই জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিকেল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এক স্মারক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে বক্তৃতা প্রদান করেন নূহ-উল-আলম লেনিন। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।

এ রাজনীতিক দেশ বিভাগের আগে ভারতীয় উপমহাদেশের ভারত অংশে এবং পরে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনীতিবিদ হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। কর্মজীবনে তিনি একবছরকাল কুমিল্লার মুরাদনগর বাংগুরা উমালোচন হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। আইন ব্যবসা করার জন্য ১৯১১ সালে তিনি কুমিল্লা জেলা বারে যোগদান করেন।

মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ অনুসরণে তিনি ‘মুক্তি সংঘ’ নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা গঠন করেন। কুমিল্লার সুপরিচিত জাতীয়তাবাদী সংগঠন অভয় আশ্রমের কর্মকাণ্ডের সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন এবং ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা (বর্তমানে কুমিল্লা) জেলা র্বোডের সদস্য নির্বাচিত হন।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী এবং ব্যারিস্টার আবদুর রসুলের রাজনৈতিক মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯১৯ সালে ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে তিনি তিন মাসের জন্য আইন ব্যবসা স্থগিত রাখেন এবং অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৩৭ সালে তিনি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন।

বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন, বঙ্গীয় কৃষিঋণ গ্রহীতা ও বঙ্গীয় মহাজনি আইন পাসের সাথে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তিনি ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলনেও যোগ দেন। ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন। তিনি ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস দলের টিকিটে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য ওই বছর ডিসেম্বরে তিনি পূর্ববঙ্গ থেকে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৪৭ সালের পর একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিক হিসেবে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালের জুন মাসে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নরের শাসন প্রবর্তনের বিরুদ্ধে একটি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৫৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।

পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হওয়ার পর ১৯৬০ সালে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উপর ‘এবডো’ প্রয়োগ করা হয়। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয় এবং তখন থেকে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। এতদসত্ত্বেও বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত গুরুত্বপূর্ণ বাঙালি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক বজায় রাখতেন।

কুমিল্লা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক, বিশিষ্ট সংসদ সদস্য ও আইনজীবী হিসেবে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে রাস্তার নামকরণ করে। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে শহীদ খাজা নিজাম উদ্দিন সড়ক পর্যন্ত রাস্তাটি এখন শহীদ ধীরেন্দ নাথ দত্ত সড়ক নামে পরিচিত। ২০১৭ সালে ১৮ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে তার নামে একটি ই-লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত






Shares