Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দেড় কোটি টাকায় ৩ খুনের দফারফা

+100%-

 

ডেস্ক : প্রায় দেড় কোটি টাকায় রফাদফা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি এলাকার তিনটি হত্যাকাণ্ডের। প্রতিটি খুনের মূল্য ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। আহত করা এবং ঘরবাড়ি ভাঙচুরের জন্য জরিমানা নির্ধারণ করা হয় আরও প্রায় ৩০ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা একত্রিত হয়ে সালিশ বসিয়ে সিরিজ খুনের এই ঘটনার নিষ্পত্তি করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রামে গত প্রায় এক বছরে ৩টি খুনের ঘটনা ঘটে। ২০১২ সালের ২৬শে অক্টোবর খুন হন নাছির উদ্দিন। এ ঘটনায় এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একটি মামলা হয়। ইকবালের ভাই মিজানুর রহমান মামলার ২ নম্বর আসামি। এ হত্যাকাণ্ডের জের ধরে গত ১৮ই অক্টোবর চেয়ারম্যান ইকবাল আর আবদুল হাই গ্রুপের সংঘর্ষে আরও ২ জন নিহত হন। তারা হচ্ছেন শামসুল ইসলাম ও ইসমাইল মিয়া। শামসুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে শওকত আলীকে প্রধান আসামি করে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে এবং ইসমাইল হত্যা ঘটনায় হাজী আবদুস সালামকে প্রধান আসামি করে ১১২ জনের বিরুদ্ধে আরও দু’টি মামলা হয়। এসব হত্যাকাণ্ড মিটমাট করতে গত এক মাস ধরেই তৎপর এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। শনিবার তারা তিন হত্যাকাণ্ডের নিষ্পত্তিতে সালিশ বসায় এলাকার ধামচাইল বাজারে। এতে সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী। অন্যান্যের মধ্যে যোগ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, বিএনপি নেতা সায়েদুল হক সাঈদ, সাদেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা হামিদুল হক হামদু, সাবেক চেয়ারম্যান হোসেন মিয়া, নূরুল আমিন, আবুল কালাম আজাদসহ এলাকার আরও বিশিষ্ট ব্যক্তি। দুপুর ২টায় সালিশ শুরু হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে। সালিশে তালিকাভুক্ত সর্দার ছিলেন ১৬০ জন। জুরি বোর্ড ছিল ৪৫ জনের। সালিশের আয়োজকরা জানান, প্রতি খুনের জন্য ৪০ লাখ টাকা করে দেয়ার রায় হয় এতে। এর বাইরে ঘটনার সময় ভাঙচুরের জন্য চেয়ারম্যান ইকবালের দল আবদুল হাইকে দেবে ১০ লাখ টাকা। আর আবদুল হাই চেয়ারম্যানকে দেবে ১২ লাখ টাকা। এই ১২ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা দেয়া হবে জামালের পরিবারকে। ঘটনার সময় তার এক ভাই আহত হন এবং বাড়িঘর ব্যাপক ভাঙচুরের শিকার হয়। আর ৫ লাখ টাকা দেয়া হবে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন একজনকে। এই টাকাটা দু’পক্ষ আড়াই লাখ টাকা করে দেবে ওই ব্যক্তিকে। সালিশে রফাদফার এই বিবরণ দিয়ে সালিশের সভাপতি বিএনপি নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, মোট হিসেবে চেয়ারম্যানের পক্ষকে ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আবদুল হাইয়ের পক্ষকে ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা পরিশোধের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে দু’মাস। তিনি বলেন, সালিশে প্রায় ১০ হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল। বলা চলে এটি একটা জনসভা। এভাবে হত্যাকাণ্ডের মীমাংসা করা যায় কিনা এ প্রশ্নে নূর আলম সিদ্দিকী বলেন, এভাবে শেষ হয় না ঠিক আছে। আমরা তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলার জন্য এই রায় করেছি যাতে তারা ভবিষ্যতে আর এমন না করে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, সারা দেশেই টাকা দিয়ে আপস-মীমাংসা হয়। এটা কোন ব্যাপার না। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আপস-নিষ্পত্তির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মামলা মামলার গতিতে চলবে। এমন আপস-রফা আইনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রামে গ্রামে দাঙ্গা আর খুনোখুনি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা-মোকদ্দমা হলেও দাঙ্গাবাজদের তেমন একটা শাস্তি পেতে হয় না। সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালীরা এভাবেই ঘটনার আপস-মীমাংসা করে রক্ষা করেন তাদের। জরিমানার টাকার ভাগ যায় তাদের পকেটে। পুলিশও পায় মোটা অংকের টাকা।






Shares