Main Menu

বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার ভবিষ্যত

+100%-

onlineডেস্ক ২৪:: সংবাদপত্র সৃষ্টির পর থেকেই মানুষ সংবাদ জানার জন্য ছাপানো পত্রিকার উপর নির্ভরশীল ছিল। ৫০’র দশকে টেলিভিশনের প্রচলন শুরু হওয়ার পর থেকে টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে খবর প্রচার করা হতো। ফলে সংবাদ জানা আরো সহজ হয়।

৯০’র দশক থেকে ইন্টারনেট এর ব্যাপক প্রচলন শুরু হলে অনলাইনের মাধ্যমে আরো দ্রুত সংবাদ জানা সহজলভ্য হয়। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন মিডিয়া। এই মাধ্যম ইন্টারনেট প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তথ্যকে নিমিষেই ছড়িয়ে দিচ্ছে সারা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। দ্রুততার সাথে সংবাদ প্রদান করা হচ্ছে এই মাধ্যম দিয়েই। আর এই অনলাইন মাধ্যমকে ব্যবহার করে যে সাংবাদিকতার চর্চা হচ্ছে আমরা তাকে অনলাইন সাংবাদিকতা বলি।

সারা বিশ্বে আজ ইন্টারনেট ভিত্তিক গণমাধ্যমের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশেও ইন্টারনেট যত সহজলভ্য হচ্ছে অনলাইনের দাপট ততই বাড়ছে। অনলাইন সাংবাদিকতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তাৎক্ষণিকতা। যেকোন ঘটনা ঘটার সাথে সাথে রেডিও, টিভির মতো অনলাইন গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করা যায়। পাঠক অল্প সময়ের ব্যবধানে তা পড়তে পারেন কিন্তু ছাপানো পত্রিকায় সেই খবর পড়ার জন্য পাঠককে একদিন অপেক্ষা করতে হয়।

অনলাইন সাংবাদিকতায় প্রতিযোগিতা হয় কে কার আগে সংবাদ পরিবেশন করতে পারে, কার চেয়ে কত আর্কষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে করতে পারে এসব নিয়ে। যারা সবার আগে সব খবর দিতে পারে তাদের সাইটেই পাঠক বেশি হয়। তাই পাঠক ধরে রাখার জন্য অনলাইন গুলোকে অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সেই কৌশল অবলম্বন করতে গিয়েই বাংলাদেশের কিছু কিছু অনলাইন গণমাধ্যম দিন দিন পড়ার অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। সংবাদ পরিবেশনের নামে অশ্লীলতাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, এইসব অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতে।

তবে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকতার সাথে বিশ্বাসযোগ্যতাও জরুরি। বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি অনলাইন সবার আগে চমকপ্রদ সংবাদ পরিবেশন করে, কিন্তু তাদের সংবাদের উপর কারো বিশ্বাস নেই। দ্রুততার সাথে সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে অনলাইনটিতে প্রায়ই ভুল তথ্য ও বিকৃত সংবাদ পরিবেশন করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মতো অনলাইন পত্রিকা আতœপ্রকাশ করছে। পাঠক আকৃষ্ট করার জন্য অনেক অনলাইন পত্রিকা গুজব ও অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে। সেগুলো দেখলে মনে প্রশ্ন জাগে, এটা কোন ধরনের সাংবাদিকতা? এটা কি আসলেই কোন পত্রিকার পেইজ নাকি অন্য কোন কিছু? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব নিউজ শেয়ার হওয়ায় গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভুল তথ্য দিয়ে পাঠককে বিভ্রান্ত করা হলেও তাতে কেউ ভুল স্বীকার করে না। সবচেয়ে বড় হলো বিজ্ঞাপন ও নগদ অর্থের জন্য কিছু কিছু অনলাইন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্ল্যাকমেইল করে। এতে অনলাইন সাংবাদিকতার প্রতি অনেকের ঘৃণা জন্মায়। কারো কারো ধারণা, অনলাইন সাংবাদিকতা হলো ধান্দাবাজের জায়গা। এ থেকে বেরিয়ে না আসলে অনলাইন গণমাধ্যম গুলোর প্রতি মানুষের বিরুপ ধারণা জন্মাবেই।

ইন্টারনেট প্রযুক্তি যত উন্নত হবে অনলাইন সাংবাদিকতার ততই প্রসার ঘটবে। বাংলাদেশে মোবাইলে ইন্টারনেট প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি ঘটছে। উন্নত দেশের মানুষেরা নিউজ সোর্স হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে অনলাইন। আমেরিকা ও বৃটেনের পুরানো কয়েকটি পত্রিকার প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচার সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় ২০১২ সালে। পত্রিকাটি ১৯৯৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। বন্ধ হওয়ার সময় তাদের সার্কুলেশন ছিল ২৫ লাখ ২৭ হাজার ১ শত ৫৬ টি। বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে পত্রিকাটির তৎকালীন কর্তৃপক্ষ বলেছিল, ২০০৭-০৯ অর্থ বছরেই তাদের রাজস্ব ৩৮% কমে যায়। তাই তারা পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে পত্রিকাটি তাদের অনলাইন সংস্করণ চালু করে ঘবংি ডববশ এষড়নধষ এই নামে। বাংলাদেশেও সার্কুলেশন বন্ধ হয়ে যাওয়া দুটি পত্রিকা দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক ডেসটিনি অনলাইন সংস্করণের মাধ্যমে পাঠকের কাছে সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো পত্রিকাই তাদের অনলাইন সংস্করণ চালু করেছে। দেশের স্যাটেলাইট রেডিও, টেলিভিশনের পাশাপাশি চলছে অনলাইন ভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন। যার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে সহজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশের অনুষ্ঠান দেখা যাচ্ছে, খবর শোনা যাচ্ছে।

তাই পরিশেষে বলতে চাই, বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। তবে তার জন্য অবশ্যই একটা সুষ্ঠু ও কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন। নীতিমালার মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যম গুলোর কন্ঠরোধ না করে পরিচালিত করা হলে বাংলাদেশের অনলাইন গণমাধ্যম সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য হবে। আর তা না হলে ব্যাঙের ছাতার মত অনলাইন গণমাধ্যম বাড়তে থাকলে ভবিষ্যতে অনলাইন সাংবাদিকতা বলতে কোন পেশা থাকবে বলে আমার মনে হয় না।






Shares