Main Menu

আজ রোববার, ‘বিশ্ব মা দিবস’

+100%-

images81.thumbnail

মা (ইংরেজি: Mother, Mum, Mom) হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন – তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত ।
প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বিশ্বব্যাপী মা দিবস পালিত হয়।কিছু কিছু ইতিহাসবিদের মতে, মা নিয়ে এই দিনটি প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে সূত্রপাত হয়। কথিত আছে ১৬ শতকে ইংল্যান্ডে প্রথম মা দিবস পালন হয়। এটাই ছিলো দেব-দেবীদের মা ছাড়া নিজের আসল মাকে নিয়ে মানে রক্ত মাংসের মাকে নিয়ে মা দিবস। দিবসটি তারা মাদারিং ডে হিসেবে পালন করতো। সেদিন সরকারি ছুটিও ছিলো। পরিবারের সবাই তাদের মায়ের সাথে দিনটি কাটাতো। তবে এই দিবসটি ততোটা প্রসার লাভ করেনি।
প্রায় ১০০ বছর পর ১৮৭০ সালে আমেরিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাও নামের এক গীতিকার মা দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। তিনি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় একটি দেশাত্মবোধক গান লিখেছিলেন। সে গানটা সে সময় বেশ জনপ্রিয় ছিলো। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধের সময় হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছিলো কারণে বা অকারণে। এক মায়ের সন্তান আরেক মায়ের সন্তানকে হত্যা করছিলো অবলীলায়। এই সব হত্যায দেখে জুলিয়া খুব ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি এটা বন্ধ করার জন্য আমেরিকার সব মাকে একসাথে করতে চাচ্ছিলেন। আর এ কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক মা দিবস পালন করতে চাচ্ছিলেন।
এদিকে ভার্জিনিয়ার একটি মহিলাদের দল জুলিয়া ওয়ার্ড হাও-এর প্রস্তাবিত মা দিবসটি পালন করতো বেশ মর্যাদার সঙ্গেই।অ্যানা রিভেস জারভিস তার জীবনের সুদীর্ঘ ২০ বছর কাটিয়েছিলেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের একটি গির্জায়। সেখানে তিনি সানডে স্কুলের শিক্ষকতা করেছেন। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যানা এম জারভিস মা দিবস ঘোষণা আন্দোলনের হাল ধরে। অ্যানা জীবিত ও মৃত সব মায়ের প্রতি সন্মান জানানোর তথা শান্তির জন্য এই দিবসটি পালন করতে চাচ্ছিলেন। এই লক্ষ্যে তারা ১৯০৮ সালে গ্রাফটনের ওই গির্জার সুপারিনটেনডেন্টের কাছে একটি আবেদন জানায়। তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে সে বছরই ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ও পেনসিলভেনিয়ার কয়েকটি গির্জায় মা দিবস পালিত হয়। এভাবে অনেকেই প্রতিবছরই মা দিবস পালন করতে শুরু করে।
এরপর অনেক পথ পেরিয়ে ১৯১৪ সালে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে জাতীয় মা দিবসের মর্যাদা দেয়।
আরও পরে ১৯৬২ সালে এই দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মা দিবস হলেও সব দেশ এই দিবসটি পালন করে না।আসলে অনেক দেশেরই আলাদা আলাদা মা দিবস আছে।বাংলাদেশেও দিবসটি আজ নানা আঙ্গিকে পালিত হয় ।২০০৩ সাল থেকে আজাদ প্রোডাক্টস প্রা. রত্নাগর্ভা মায়েদের সম্মাননা জানিয়ে আসছে।
মায়ের এবং দেশের মাকে নিয়ে ইসলাম যত কথা বলেছে, অন্য কোনো ধর্ম তত কথা বলেছে কিনা জানি না। মাকে নিয়ে বলতে বলতে শেষ পর্যন্ত মাকেই জান্নাত, মাকেই জাহান্নাম বলে বসেছে ইসলাম। মাকে খুশি করলে জান্নাত, কষ্ট দিলে জাহান্নাম।
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা। পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। নবীজী স. বলেছেন পিতা-মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা সংরক্ষণও করতে পারো।
রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, তিন রকম দোয়া নি:সন্দেহে আল্লাহ্র নিকট কবুল হয়। মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া আর সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া। -তিরমিযী।
সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনুসন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে- উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যরে গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যরে গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি,সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”
কবিরা ভাবপ্রবণ, সাধারণ মানুষের চেয়ে তারা একেবারেই আলাদা। মায়ের প্রতি তারা তাদের শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসা ব্যক্ত হয়েছে তাদের রচিত কবিতায়। যেমন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘মা’ কবিতায় তিনি মায়ের যে অপরূপ ছবিটি এঁকেছেন তা অতুলনীয় : “যেখানেতে দেখি যাহা/ মা-এর মতন আহা ,প্রখ্যাত কবি কাজী কাদের নেওয়াজ মা সম্পর্কে তাঁর ‘মা’ কবিতায় বলেছেন : “মা কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই/ ইহার চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই।”মুহাম্মদ হাবীব উল্লাহ – মায়ের প্রতি ভালবাসা ,হুমায়ুন আজাদ-আমাদের মা , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-বীরপুরুষ/মনে পড়া/লুকোচুরি ,শামসুর রাহমান-কখনো আমার মাকে , কামিনী রায় -কত ভালবাসি কবিতা লিখেছেন।শিল্পীরা রসপ্রবন ।সাধারণ মানুষের চেয়ে তারা একেবারেই আলাদা। মায়ের প্রতি তারা তাদের শ্রদ্ধা-ভক্তি-ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন তাদের গানে। খুরশীদ আলম-মাগো মা ওগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা , ফকির আলমগীর-মায়ের একধার দুধের দাম কাটিয়া গায়ের চাম , ফেরদৌস ওয়াহিদ-এমন একটা মা দে না ,জেমস-রাতের তারা আমায় কি তুই বলতে পারিস ,রাশেদ-ওই আকাশের তারায় তারায় ,নচীকেতা ঘোষ-ছেলে আমার মস্ত বড় মস্ত অফিসার ,হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব মাগো।পৃথিবীর সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কের নাম ‘মা’। সবচেয়ে পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম ‘মা’। আজ রোববার, ‘বিশ্ব মা দিবস’। ‘বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি রইল শ্রদ্ধা ৷-এ.এইচ.এম.সায়েদুজ্জামান, শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী



(পরের সংবাদ) »



Shares