Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা কেন্দ্র দখলে নিয়ে নৌকায় সিল মারার অভিযোগ

+100%-

prothom-aloপঞ্চম ধাপে গতকাল শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কারচুপির অভিযোগে বিএনপির পাঁচ ও আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। এ ছাড়া আটটি কেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
গতকাল ১১টির মধ্যে ৮টি ইউপির বিভিন্ন কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারা, ভোটকেন্দ্রে ককটেল হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে মারধর করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক কেন্দ্রে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালটে আগে থেকেই সিল মেরে রাখা হয়েছিল। সাত থেকে আটটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক লোক আহত হন। ইউপি সদস্যপদের নির্বাচন নিয়েও অধিকাংশ জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত আটটি ইউপির অন্তত ৩০টি কেন্দ্র ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র দখল করে ভোট, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, পুলিশ ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে বেলা ১১টার মধ্যে ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন। তাঁরা হলেন বিএনপির নাটাই উত্তর ইউপির আবুল কাশেম, তালশহর পূর্বে নজরুল ইসলাম, সাদেকপুরে মো. লিটন, রামরাইলে সাজেদুর রহমান, সুহিলপুরে মোবারক মুন্সী ও রামরাইল ইউপির আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মশিউর রহমান।
মশিউর রহমান অভিযোগ করেন, পুলিশের পাহারায় ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সহায়তায় নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরেছেন।
সকাল নয়টায় সাদেকপুর ইউপির বিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। একদল যুবক অস্ত্রসহ কেন্দ্রে ঢুকে তা দখলে নেন। ওই কেন্দ্রে প্রায় আধা ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। সাদেকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান ও সদর উপজেলা যুবলীগের নেতা সাচ্চু মিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় লোকজন ওই কেন্দ্রের চারটি বুথে ঢুকে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে ও ইউপির সদস্য প্রার্থীদের ব্যালটে গোপনে সিল মেরেছেন।
সাড়ে আটটায় নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও বিদ্যাকুট ইউপির চেয়ারম্যান এনামুল হক ওরফে ভিপি এনামের নেতৃত্বে যুবলীগের ২০ থেকে ২৫ জন নেতা সুহিলপুর ইউপির আড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলে নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আজাদের নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারা শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর প্রতিপক্ষের লোকজন বাধা দেওয়ায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ওই কেন্দ্রে এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চালু করেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার পর প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কক্ষে বসে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা নৌকা প্রতীকে সিল মারেন। এ বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আনোয়ার কবির বলেন, ‘আমার কিছুই করার নেই।’
সকাল ১০টায় একই ইউপির সীতানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজাদ হাজারীর সমর্থকেরা প্রকাশ্যে সিল মারতে থাকেন। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুর রহমানের সমর্থকেরা বাধা দিলে উভয় পক্ষ দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন।
বেলা ১১টার দিকে একই ইউপির সুহিলপুর জিল্লুর রহমান উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাবুল মিয়ার চাচাতো ভাই শামীম মিয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথ দখল করে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সেলিম মিয়াকে মারধর করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেন। পরে তাঁরা ওই ব্যালট পেপারে প্রকাশ্যে সিল মারেন। এ সময় তাঁদের ইউপি সদস্য প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউছুফ মিয়ার লোকজন বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হন। এ সময় ওই কেন্দ্রে অন্তত ২৫টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বেলা একটার দিকে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ওই কেন্দ্রে এসে পুনরায় ভোট গ্রহণ চালু করেন।
সকালে রামরাইল ইউপির মোহাম্মদপুর ক্যাডেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এ মোনেম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে রাসেল খন্দকার নামের এক ইউপি সদস্য প্রার্থীসহ অন্তত আটজন আহত হন। এ ছাড়া সকালের দিকে তালশহর পূর্ব ইউপির মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাটাই উত্তর ইউপির বিলকেন্দুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বেলা তিনটার দিকে বুধল ইউপির চান্দিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইউপি সদস্য প্রার্থী বাবুল মিয়া ও পাভেল মিয়ার লোকজনের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলার কারণে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সাময়িক বন্ধ থাকলেও পরে সেগুলো পুনরায় চালু করা হয়। তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।সূত্র :: প্রথম আলো






Shares