Main Menu

কসবায় শিশু খাদিজা হত্যা মামলা :: মাসুক মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল

+100%-

mithuডেস্ক ২৪::  কসবায় স্কুলছাত্রী খাদিজা মনি ওরফে মিতুকে (৭) অপহরণের পর খুনের ঘটনার দুই মাস পর অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. সফিকুল ইসলামের আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
একমাত্র আসামি মাসুক মিয়ার বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, অনৈতিক কাজে সহযোগিতা না করা এবং মুক্তিপণের টাকার জন্য মাসুক খাদিজাকে একাই অপহরণের পর খুন করেছেন।
নিহত খাদিজা কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বাড়াই গ্রামের আল-আমিন মিয়ার মেয়ে। সে স্থানীয় কসবা ইমাম প্রিক্যাডেট স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত ৫ মার্চ তাকে অপহরণ করা হয়। ৭ মার্চ লাশ উদ্ধার করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্রে বলা হয়, মাসুক খাদিজাদের আত্মীয়। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক বান্ধবীকে নিয়ে কসবার ইমামপাড়ায় খাদিজাদের বাসায় সময় কাটান মাসুক। খাদিজার মা রুনা আক্তার বিষয়টি সৌদি আরবপ্রবাসী স্বামী আল-আমিনকে জানান। কয়েক দিন পর ওই বান্ধবীকে নিয়ে মাসুক আবার বাসায় এলে রুনা তাঁদের ফিরিয়ে দেন ও মাসুকের পরিবারকে ঘটনাটি জানিয়ে দেন। পরিবারের কাছে তিরস্কৃত হয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মাসুক।
৫ মার্চ সকালে খাদিজা মক্তবের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়। এ সময় মাসুক তাকে ফুসলে অপহরণ করে ইমামপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের পঞ্চম তলায় নিয়ে যান। সেখানে দুই ঘণ্টা পর মাসুক খাদিজাকে শ্বাসরোধের পর ছুরি দিয়ে গলা কেটে খুন করে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে একটি ভবনের ফ্ল্যাটে লুকিয়ে রাখেন। হত্যার পর খাদিজার মায়ের কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন মাসুক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কসবা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর মাসুক মিয়া আদালতের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে খুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

পূর্বের খবর::

মিতু হত্যা :: ডেটিং করতে না দেয়ায় ভাবীর প্রতিশোধ নিতেই ভাতিজিকে খুন করে চাচা !

মনিরুজ্জামান পলাশ :: প্রতিশোধের বলি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার সাত বছরের শিশু খাদিজা মণি মিতু। বান্ধবীকে নিয়ে ঘরে থাকতে (ডেটিং) না দেওয়ায় মায়ের প্রতি শোধ নিতে খুন করা হয় তাঁর শিশু সন্তানকে। খুনের সঙ্গে জড়িত মাসুক মিয়া পুলিশের কাছে দেওয়া ১৬১ ধারা ও আদালেতর কাছে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে এমন কথাই বলেছে।
সন্ধ্যায় ঘাতক মাসুক মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, মাসুকের দেওয়া তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন। তিনি জানান, মাসুকসহ কয়েকজন মিলে এ হত্যাকান্ড ঘটায়। তবে মুক্তিপণের টাকা চাওয়ার আগেই শিশুটিকে হত্যা করা হয়। মাসুক মিয়াকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি।

কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের বাড়াই গ্রামের বাসিন্দা, সৌদি আরব প্রবাসী মো. আল-আমিন মিয়ার মেয়ে খাদিজা মণি মিতু (৭) লাশ নিখোঁজের দু’দিন পর গত সোমবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করে পুলিশ। মাসুক মিয়ার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কসবা পৌর এলাকার ইমামপাড়ার মো. বাবরু মিয়ার বহুতল ভবনের পঞ্চম তলা থেকে পুলিশ তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। এর আগে গত শনিবার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে খাদিজা অপহরণের শিকার হয়। এ ঘটনায় তার মা রুনা আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ বিভিন্ন সময়ে মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ রক্তামাখা জামা, ছুরি ও ধর্মীয় বই উদ্ধার করে।

ঘাতক মাসুকের ১৬১ ধারার জবানবন্দি থেকে জানা যায়, সে গোপীনাথপুর ডিগ্রী কলেজের ছাত্র। প্রবাসী আল-আমিন তার মামাতো ভাই। সে সুবাদে মাসুম ওই বাসায় আসা যাওয়া করত। গত ১৩ ফেব্রুয়ারী সে তার প্রেমিকা ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্রী লাকী আক্তারকে নিয়ে সে বাসায় যায়। ঘন্টা খানেক সে বাসায় গল্প ও খাওয়া-দাওয়া শেষে তারা চলে আসেন। পরে ১৭ ফেব্রুয়ারী আবারো সেখানে প্রেমিকাকে নিয়ে সময় কাটাতে মামাতো ভাইয়ের বউ রুনা আক্তারের কাছে অনুমতি চায় সে। কিন্তু লোকে দুর্নাম করবে বলে বাধ সাধেন আল-আমিনের স্ত্রী রুনা আক্তার। এ কারণে সে রুনা আক্তারের সন্তান খাদিজা মণিকে খুনের পরিকল্পনা করে। সে ৩দিন পূর্বে পরিকল্পনা করেছিল কিভাবে তাকে হত্যা করবে। এ কারনে সে বাসা ভাড়া করে। শনিবার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে চিপস কিনে দেয়ার কথা বলে মাসুক মিতুকে অপরহণ করে নিয়ে যায়। পরে পাঁচতলা ভবনের একটি কক্ষে নিয়ে খাদিজা মণিকে শ্বাস রোধে হত্যা করে। পরে গলা কেটে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। অপহরণের দু’ঘন্টার মধ্যে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। আরো একাধিক লোক মাসুক মিয়াকে এ কাজে সহায়তা করে। হত্যা করার পর খাদিজার লাশটি একটি পলিথিনে পুড়ে ওই রুমের খোপড়িতে লুকিয়ে রাখে। হত্যার কাজে ব্যবহৃত ছুরি পৃথক বস্তায় ভরে রাখা হয়।

বেলা ৮টার সময় অপহরণকারী মাসুক মিয়া খাদিজার মা রুনা আক্তারের মোবাইল ফোনে বলে তার সন্তান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছে কিনা দেখার জন্য। রুনা আক্তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে খাদিজার কোন সন্ধান না পেয়ে তার সহপাঠী মায়মুনা আক্তারের কাছে মেয়ের বিষয়ে জানতে চায়। মায়মুনা জানায়, খাদিজার মামা মাসুক মিয়া তাকে চিপস কিনে দেয়ার কথা বলে নিয়ে গেছে।

এদিকে সহপাঠিকে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারিদের ফাঁসির দাবিতে মঙ্গলবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলসহ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সকালে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে তাঁরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনিছুল হকসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়িরা সংহতি প্রকাশ করে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, সোমবার সন্ধ্যায় কসবা পৌর এলাকার ইমামপাড়ার মো. বাবরু মিয়ার বহুতল ভবনের পঞ্চম তলা থেকে পুলিশ মিতুর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে।






Shares