Main Menu

সন্ত্রস্ত আশুগঞ্জ

+100%-

ashuganjupতদন্তে এসেছেন সাব-ইন্সপেক্টর ইদ্রিস মিয়া। তাকে ঘিরেই মানুষের জটলা শরীফপুর ইউনিয়নের খোলাপাড়া বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ কারা শুনেছিলো, কারা মেরেছিলো, তাদের চেনা গেছে কিনা-এসবই তদন্ত করছেন তিনি। এনিয়ে জানতে চাইলে ইদ্রিস মিয়া বলেন- পিও ভিজিট করতে এসেছি। কে বা কারা ককটেল ফুটাইছে কেউ দেখে নাই। কে মেরেছে তা বলতে পারে না কেউ। তাকে ঘিরে রাখা লোকজনকে উদ্দেশ্য করে জানতে চান আপনারা দেখেছেন কারা ককটেল মেরেছে? উত্তর মিলে না। আবার জিজ্ঞেস করেন তাহলে নামগুলো এলো কিভাবে? এবারও নীরব সবাই।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা রাতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ঐ ইউনিয়নে। ঘটনাস্থলের পাশের এক দোকানদার আলাউদ্দিন মিয়া বলেন- রাত ৮টার দিকের ঘটনা। চেয়ারম্যানের মিছিল পশ্চিম দিক থেকে আসছে। মিছিলটি অল্প দূরে থাকতে দুটি শব্দ পাই। তখন মনে করেছিলাম অন্যকিছু। পরে লোকজন এসে দেখে একটা কৌটা পড়ে রয়েছে। পরে চেয়ারম্যান সাইফ উদ্দিন এসে থানায় ফোন দিলে পুলিশ এসে পরিত্যক্ত কৌটাটি  উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত (১৮ই মার্চ) দেড়টায় আশুগঞ্জ থানায় বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফ উদ্দিন চৌধুরীর ছোট ভাই মো. ইমান উদ্দিন। এতে ৭ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ২০/২৫ জনকে। আসামি রিয়াজ উদ্দিন (৬০), ধন মিয়া (৫৫), ফলশু মিয়া (৫৫), সহিদ মিয়া (৬০), আলম (৩৫), সোলেমান (৫৫),  মো. রুমান (৩০) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সুমন চৌধুরীর সমর্থক। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়- আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনী গণসংযোগকালে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাৎক্ষণিক বাদী ঘটনাস্থলে গিয়ে অবিস্ফোরিত একটি ককটেল পড়ে থাকতে দেখেন। ককটেল বিস্ফোরণকারীরা দৌড়ে চলে যাওয়ার সময় তারা টর্চের আলোয় আসামিদের চিনতে পারেন। এমদাদুল হক চৌধুরী নামের এক তরুণ জানায়, আমরা কয়েকজন যে ঘটনাস্থলের কথা বলা হচ্ছে এর অল্প পূর্বদিকে হামদুর বাড়ির সামনে ব্রিজে বসা ছিলাম। শুনলাম ইনুর বাড়ির সামনের ব্রিজের ওখানে ককটেল ফুটছে। কিন্তু আমরা কোনো শব্দ পেলাম না। কাছে গিয়ে দেখি আওয়ামী লীগের লোকজন জায়গাটি ঘিরে রেখেছে। আর আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাকে যেন ফোন করছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সুমন চৌধুরী বলেন- নির্বাচনী মাঠ থেকে আমার সমর্থকদের দূরে রাখার জন্য নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। ককটেল বিস্ফোরণ ভুয়া ঘটনা। বাজারের কোনো লোকই ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেনি। তাছাড়া, যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের সবার বয়স ৫০/৬০ বছর। তারা কি ককটেল মারতে পারে?

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম বলেন- বাদী আসামির নাম উল্লেখ করে মামলা দিয়েছেন। তদন্তের পরই বাকিটা  বোঝা যাবে। শরীফপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফ উদ্দিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রতিদিনই বাদ্য-বাজনা নিয়ে মিছিল করছেন।

শুক্রবার বিকালে খোলাপাড়া বাজারে অবস্থানকালে দেখা গেছে তার বিশাল মিছিল। বিদ্রোহী সমর্থকদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান ছাড়াও প্রতিদিনই এ উপজেলায় ঘটছে আতঙ্কিত করার মতো নানা ঘটনা।

আশুগঞ্জের ৭টি ইউনিয়নে আগামী ২২শে মার্চ নির্বাচন। ৬টি ইউনিয়নে রয়েছে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী। তাদেরকে ঘায়েল করতে নানা অপচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে দেয়া হয়েছে হুমকি। বিদ্রোহী প্রার্থীর বাড়িতে চালানো হয়েছে ককটেল হামলা। বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে আগুন দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। যাতে এখন উপজেলার ইউনিয়নে ইউনিয়নে সন্ত্রস্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা জানান, প্রথমে আড়াইসিধা ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী কামরুল হাসান মোবারকের বাড়িতে ককটেল হামলা চালানো হয়। এর আগে তাকে মেরে ফেলবে বলে মোবাইলে হুমকি দেয়া হয়। এরপরই ঘটে মোবারকের এলাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে আগুন দেয়ার ঘটনা। এরপর মোবারকের ৩০/৩৫ জন সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এই মডেল পরবর্তীতে সব ইউনিয়নে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আড়াইসিধার পর তারুয়া, দুর্গাপুর ইউনিয়নে নির্বাচনী অফিসে আগুন দেয়া হয়। আগুনের মামলা দেয়া হয় দুই ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের নেতা বলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নিজেরাই আগুন ধরাচ্ছে। এরপর মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

চরচারতলা ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জিয়া উদ্দিন খন্দকার বলেন- আমাকে উঠিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। আরও নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। রাতে আমার সমর্থকরা বাড়িতে ঘুমাতে পারে না। পুলিশ-গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে দফায় দফায়।

দলের প্রার্থী মনোঃপূত না হওয়ায় বিভিন্ন ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। পুলিশও তৎপর তাদের পিছে। তাদের বাড়িতে যাচ্ছে, কাউকে ফোনে গ্রেপ্তার-মামলায় জড়ানোর ভয় দেখাচ্ছে।

আড়াইসিধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আবু সায়েম মিঠুর বাসায় গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ অভিযান চালায়। মিঠু তার অসুস্থ মাকে দেখতে বাড়িতে এসেছিলেন বলে জানান। রাত  দেড়টার দিকে পুলিশ এলে সে দৌড়ে পালায়। মিঠু জানান, এখন তাকে মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানো হচ্ছে। বিভক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগে হানিফ মুন্সীর পক্ষের হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মঈনুল হক মামুনকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মামুন বলেন- আমার বিরুদ্ধে  কোনো মামলা নেই। আমি  নৌকার নির্বাচন করার পরও  একটি গ্রুপ করার কারণে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দেয়ার  হুমকি দেয়া হচ্ছে।

জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এম জে আরমানকেও পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করা হয়। আরমান বলেন- গত দু’দিন ধরে আমার বাড়িতে (বন্দালী বাড়ি) পুলিশ এসে হুমকি দিচ্ছে।

এছাড়া, আড়াইসিধা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অফিস পুড়ানো মামলায় উপজেলা যুবলীগ নেতা সুমন খন্দকার, ছাত্রলীগ নেতা রাজন খন্দকার, সাচ্চু মেম্বার, জাতীয় পার্টির নেতা আরমান, সাবেক চেয়ারম্যান হাজী   মোমিন, আওয়ামী লীগ নেতা রিপন, রুহুল আমিন, সানু, জুয়েল, আমিনকে পুলিশ হয়রানি করছে। চরচারতলা ইউনিয়নে বিদ্রোহী জিয়া উদ্দিন খন্দকারের সমর্থক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিমন সরকার, ছাত্রলীগ নেতা রাজু খন্দকার, মাহবুব, রুহুল আমিন, রনি, রাহাদ, রাসেল, নজরুল ইসলাম আবুনি, কামাল মুন্সী, হাসান, মুজিবর, রাশেদ রনি, মাহি, কামরুলকে পুলিশ নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছে। তারুয়া ইউনিয়নে আনু মিয়াজি, শাহ শিবু, ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি রোমান, ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক তরুণ, ফারুক, মামুন সাদির, সুজন, আলম, কবির, আলাল, হযরত আলী, মধু মিয়া, সাইদুল, আপেল, জয়নাল বাউল, লিটন, বাহার মিয়াজী, হিরণ বাউল, ইয়াকুব, জাকির বাউল, আজমল হক, সুমন, সিরাজ মিয়া, আজাদ মিয়া, মাহবুব, ইদন, দুলাল মিয়া, উজ্জল, তাজুল ইসলাম, নজরুল, হেলিম, আজম বাউল, কুদ্দুস মেম্বার পুলিশের হয়রানির শিকার। নির্বাচনী অফিস পোড়ানো মামলায় অজ্ঞাত আসামি দিয়ে হলেও তাদের এসব মামলায় গ্রেপ্তার করার হুমকি দিচ্ছে পুলিশ।

দুর্গাপুর ইউনিয়নে সজল, বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম জারু মিয়া, শাহজাহান সিরাজ, সাদেকুর রহমান মিয়া, মুসা মিয়া, জহিরুল হক সিকদার, সজিবুর রহমান, নাসির, রাজিব, মামুন, পরশকে হয়রানি করছে পুলিশ। লালপুর ইউনিয়নে যুবলীগ নেতা স্বপন, জয়নাল  মেম্বার, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সালাম, নয়ন ভাণ্ডারি, শামীম চৌধুরী, রতন মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আতিকুল্লাহ আমিন, জুরু মেম্বার, সুলতান মেম্বার, হিরণ মিয়া, কামাল মেম্বার, খলিলুর রহমান, জালাল মিয়া, কুদ্দুস মিয়াকে পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এব্যাপারে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম বলেন-নিয়মিত মামলার আসামি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামিদেরকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। এর বাইরে আর কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। কারো বাড়িতেও যায়নি পুলিশ। নির্বাচনী অফিসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সঙ্গে কারা জড়িত তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। সূত্র:: মানব জমিন






Shares