Main Menu

সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করছে ব্যাংক

নাসিরনগর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার ও ক্যাশিয়া’রের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ!!!

+100%-

sbএস.এম.বদিউল আশরাফ(মুরাদ মৃধা):: নাসিরনগর সোনালী ব্যাংকের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাতে গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের নাসিরনগর শাখায় সাধারণ মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে নানা টালবাহানা করা হয়। অতিরিক্ত টাকা দিলেই সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। প্রবাসীদের পাঠানো চেক ভাঙানোর নামে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। চাকরিপ্রার্থীদের পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, চালান ফরম পূরণও টাকা ছাড়া হচ্ছে না। এফডিআরের মেয়াদ পূর্ণ হলে উৎকোচের বিনিময়ে গ্রাহকরা তাদের প্রাপ্তি উত্তোলন করতে বাধ্য হচ্ছেন। ঠিকাদারদের কাজের চেক দিয়ে টাকা উত্তোলনে তাদের উৎকোচ গুনতে হচ্ছে। ব্যাংকের কাউন্ডারের সামনে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বয়স্ক ভাতাভোগী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও মহিলাদের দীর্ঘ লাইন রেখে ভেতরে চলে টাকার বিনিময়ে কাজ। ক্যাশিয়ার ও ব্যাংক কর্মকর্তারা উৎকোচের বিনিময়ে নিজস্ব লোকদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে প্রায়ই দীর্ঘ সময় লাইনে থেকে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

এ ব্যাপারে ভলাকুট কে.বি.উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান গিলমান বলেন, আমার স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো: নাছির উদ্দিন গত ২৯/০৯/২০১৬খ্রি: তারিখে বি.এড, স্কেল প্রাপ্তির জন্যে ব্যাংকের ননড্রয়াল সনদের প্রয়োজন হয়। ফলে নিজে কম্পোজ করে সনদ পত্রটিতে (প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর সহ কেননা স্বাক্ষর ছাড়া সনদ দেয়া হয়না) ব্যাংক কর্মকর্তার স্বাক্ষর নিতে ৫৭৫/- পাঁচশত পঁচাত্তর টাকা পরিশোধ করতে হয়। এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি রিসিট ধরিয়ে দেন। শিক্ষকদের এমপিও সীট ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসলেও নাসিরনগর ব্যাংক তা সংগ্রহ করেননা। অনেক সময় শিক্ষরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এনে তাদের হাতে দিতে হয় কারণ শিক্ষকরা বেতন তুলতে পারবেনা। তিনি আরো অভিযোগ করেন নাসিরনগর ব্যাংকে এফ ডি আর নাকি করে না। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি কৃষি ব্যাংকে এফডিআর করেন।

সরেজমিনে গিয়ে ননড্রয়াল সনদের কথা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ৫৭০ টাকা নেওয়া হয়েছে এবং আজ ০২/১০/২০১৬ তারিখে ক্যাশ বহিতে উঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন ব্যাংকে যা হচ্ছে সব বড় কর্তার পরামর্শে । আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা শুধু ম্যানেজারের হুকুম পালন করি মাত্র।

চান্দের পাড়া স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকবর হোসাইন বলেন, আমি গত ২১ সেপ্টম্বর নগদ টাকা ও রেমিটেন্স উঠানোর জন্য গিয়ে দেখি যিনি রিমিটেন্স দেন তিনি ক্যাশ রিসিভ করছেন আর যিনি ক্যাশ রিসিভ করেন তিনি পান খাচ্ছে আর দুজনকে নিয়ে খোশ গল্প করছেন। ভিতরে গিয়ে বললাম আমার রিমিটেন্স টা একটু দিয়ে দেন। তখন একজন বলেন দেখতেছেন না আমরা কি করছি। উপায়ন্তর না দেখে ম্যানেজারের কাছে গিয়ে বললাম স্যার রিমিটেন্স টা খুব প্রয়োজন, তখন তিনি বলেন একটু ধৈর্য ধরে দাড়ান। তার পর ৪.১০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করে বললাম স্যার আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব? ম্যানেজার বলল আগামীকাল আইসেন। আমি বললাম এখন দেওয়া যাবে না? ম্যানেজার বলেন কিছু খরচ লাগব নতুবা চলে যান।

যুবউন্নয়ন কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন,গত অর্থ বছরে আমাদের অফিসরে এস টি ডি এর ১৫ লক্ষ টাকা জমা ছিল নাসিরনগর সোনালী ব্যাংক এ কিন্তু এই টাকার উপর সরকারকে কোন প্রকার লভ্যাংশ দেয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বহুবার বলার পরো কোন সমাধান হয়নি।

উল্লেখ্য সমাজসেবা বিভাগের প্রতিবন্ধি, বিধবা ও বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগী নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধরা তাদের ভাতার টাকা তুলতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্যাংকে অপেক্ষা করেও সময় মত টাকা পাননা। অভিযোগ রয়েছে সারাদিন অভুক্ত থেকে টাকা উঠাতে গিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল করা হয়। স্বল্প সময়ে টাকা নেয়ার জন্য গ্রামের অসহায় বয়স্ক নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধরা সকাল বেলা ব্যাংকে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। উদ্দেশ্য তাড়াতাড়ি বই জমা করে ভাতার টাকা নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ব্যাংকে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। ক্রমান্বয়ে সুবিধাভোগী বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দুর্ভোগও বাড়তে থাকে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার পরও তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়না।

জনবল সংকটের অজুহাতে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসব বয়োবৃদ্ধদের হয়রানি করে আসছেন। শুধু তাই নয়, ব্যাংকের ভেতরে বসার মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এসব বৃদ্ধ নারী-পুরুষ ব্যাংকের বাইরে মাটিতে যাযাবরের মত বসে বসে ঝিমুতে থাকে। তবুও শেষ হয়না অপেক্ষার পালা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার প্রাক্কালে এসব প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়স্ক নারী-পুরুষকে বাড়ি ফিরতে হয়। সারাদিন অভুক্ত থাকার করণে তাদের মধ্যে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অজ্ঞান ও অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা টাকার জন্য তাগাদা দিতে গেলে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদেরকে ধমক দিয়ে লাঞ্চিত করেন।

এছাড়া নাসিরনগর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের জমি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আয়কর, স্ট্যাম্প ক্রয় এবং রেজিস্ট্রেশন বাবদ পে-অর্ডার করতে এসে ব্যাংকের এই শাখায় গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা ব্যাংকে এসে নানা ভোগান্তিতে পড়েন। প্রতি পে-অর্ডারে ৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকার পরিমাণ ও সময়ের তারতম্যে টাকার পরিমাণ কম-বেশি নির্ধারণ করা হয়। এভাবেই চলে নাসিরনগর সোনালী ব্যাংক।

এব্যাপারে হয়রানির শিকার রাজিব দেব বলেন, জমি রেজিস্ট্রির পে-অর্ডার জমা দিতে গেলে ব্যাংক ক্যাশিয়ার অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দাবী করেন। টাকা না দেওয়া তিনি আমায় ধমক দিয়ে ব্যাংক থেকে বের করে দেন।

সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আক্তার হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে বহুবার যোগাযোগ করার চেস্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-মহাব্যবস্হাপক মো: কামরুজ্জামান জানান, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করব।






Shares