Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাবুল:: ২৫ বছর বিনা বিচারে কারাভোগের পর মুক্তির প্রতিক্ষায়

+100%-

১৯৯২ সালে এক ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন মো. বাবুল৷ ২৪ বছর ধরে চলেছে সেই মামলা৷ শেষ পর্যন্ত মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন৷ অর্থাৎ আদালত তাকে দোষী মনে করেনি৷ অথচ এই দীর্ঘ সময় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে তাঁর দিন কেটেছে৷

যাদের কারণ বাবুলকে এই দীর্ঘ সময় বিনা কারণে কারাগারে থাকতে হয়েছে তাদের বিচার দাবি করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক৷ তিনি এই ঘটনাকে চরম অন্যায় বলে আখ্যায়িত করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাবুলের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত৷ এ ছাড়া বাবুলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা উচিত৷”

গত বুধবার আদালত বাবুলের বিরুদ্ধে থাকা ডাকাতির মামলায় তাঁকে খালাস দিয়েছেন৷ তবে এখনও কারাগার থেকে মুক্তি পাননি বাবুল৷ সবকিছু ঠিক থাকলে অতি শীঘ্রই তিনি মুক্তি পেতে পারেন৷ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার জাহাঙ্গীর আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার তার বিরুদ্ধে ‘লিভ টু আপিল’ না করলে দু’য়েক দিনের মধ্যেই তিনি ছাড়া পেতে পারেন৷ কারণ আদালত থেকে রায়ের কপি আসতে দু’তিন দিন লেগে যায়৷ তাঁর বিরুদ্ধে যদি অন্য কোন মামলা না থাকে তাহলে তার মুক্তি পেতে আর কোন জটিলতা নেই৷”

গত বুধবার বাবুলসহ পাঁচজনকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান৷ মামলার নথিতে দেখা গেছে, ১৯৯২ সালের ২১ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে গুলিস্তান থেকে কুমিল্লাগামী একটি বাস ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড়ে পৌঁছালে তিন সদস্যের অজ্ঞাত ডাকাতদল বাসে ডাকাতি করে৷ যাত্রীদের কাছ থেকে নয় হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় তারা৷ এ ঘটনায় ওই বাসের কর্মচারী নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন৷ তদন্ত করে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাবুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ডেমরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ আলী সিকদার৷

আদালত অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে বাবুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালের ৪ জুলাই বিচারকাজ শুরু করেন৷ বিচার শুরুর ২৪ বছরে মামলার ১১ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চারজন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে পুলিশ৷ তবে মামলার বাদী নজরুল কিংবা তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফ কখনো আদালতে হাজির হননি৷ আদালত বাবুলের খালাসের রায়ে বলেছেন, ‘‘মামলার বাদী, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডকারী বিচারকসহ অন্য সাক্ষীদের আদালতে হাজির করানোর জন্য আদেশের কপি পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়৷ কিন্তু কোনো পক্ষই মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা ও জবানবন্দি রেকর্ডকারী বিচারককে আদালতে হাজির করানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি৷” বাবুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন৷

খালাসের রায় পাওয়ার পর আদালতে বাবুল দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার এক প্রতিবেদকের কাছে তাঁর গ্রেফতারের কাহিনি তুলে ধরে বলেন, ‘‘মা-বাবার সঙ্গে তিনি থাকতেন ডেমরার দোলাইরপাড় (এখন যাত্রাবাড়ী থানার মধ্যে) এলাকায়৷ সেদিন তিনি ফতুল্লায় যাচ্ছিলেন বন্ধুর কাছে৷ ডেমরা সেতুর ওপর ট্যাক্সির ভেতরে ছিলেন৷ হঠাৎ পুলিশ তাকে ধরে৷ পরে রিমান্ডেও নেয়৷ গ্রেফতারের পর প্রথম প্রথম মা-বাবা তার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে আসতেন৷”

বাবুলের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের বাহারনগর গ্রামে৷ তার বাবার নাম আনোয়ার হোসেন৷ মা নিলুফা বেগম৷ তারা সাত ভাই ও দুই বোন৷ বাবুলের ভাষ্য, তার বাবা বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন৷ তাকে গ্রেফতারের পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা৷ ১৯৯৫ সালে মারা যান মা৷ এরপর থেকে আর কোনো দিন ভাই কিংবা বোনকে দেখেননি তিনি৷

ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর শওকত আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঘটনাটি ঠিকই ছিল৷ মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে ছিল৷ স্বাক্ষী না আসায় বিচার শুরু করা যায়নি৷ ঘটনাটি প্রমাণ করার জন্য পুলিশ স্বাক্ষী আনতে পারেনি৷ বাবুল ২৫ বছরের কিছু কম সময় কারাগারে আছেন৷ পুলিশ যেহেতু সহযোগিতা করতে পারেনি তাই মামলাটি প্রমাণ করা যায়নি৷ আমি বলব, আদালতেরও কিছু দোষ আছে৷ আদালত সচেতন হলে মামলার জাজমেন্ট অনেক আগেই হয়ে যেত৷”






Shares