শরৎকাল নিয়ে কবি এ কে সরকার শাওনের একগুচ্ছ কবিতা
অভিসারী আশ্বিন
বৃষ্টি বিদায়ে সিক্ত হৃদয়ে
কদম-কেয়া ম্রিয়মান!
স্বল্পায়ু আশ্বিন বর্ণাঢ্য রঙ্গীন
ভাবুকের মন আনচান!
সূর্য কন্যা তারামণ্ডলে
স্নিগ্ধ মনোরম চারপাশ!
সবুজ মাঠ শুষ্ক বাট
রাতে শিশির ছোঁয়া ঘাস!
শুভ কাজ নাকি অশুভ
বাঙালির উৎসব মল মাসে !
অপার সৌন্দর্যের আরাধনায়
নীলিমায় সাদা মেঘ হাসে!
কণ্ঠে কণ্ঠে জাগে গান
প্রজাপতি মন পড়ে বাঁধা;
রানী শরতে আশ্বিনের পরতে
চোখ ধাঁধানো সূধা!
খালে বিলে জলের টান
নেইকো বানের রেশ!
সতেজ ছোঁয়া বন বনানী
নেই উত্তপ্ত হাওয়ার ক্লেশ!
পানিতে হেসে শাপলা ভাসে
বৃষ্টি রোদের লুকোচুরি!
শান্ত সরোবরে নদীর চরে
কাশ ফুলের রূপ মাধুরী!
নির্মল ভোর অতি মনোহর
প্রকৃতিতে শীতের হাতছানি!
মৃদুমন্দ বায়ে জগলুর হৃদয়ে
খেলে আনন্দের ঝলকানি!
শিউলী বকুল মাধবী ফুল
কামিনী মল্লিকার ঘ্রাণে!
ব্যাকুল হিয়া উঠে উথলিয়া
সজনীর তনুমন চনমনে!
প্রেমার্ত মন উন্মনা প্রতিক্ষণ
শরত আকাশে মেলে ডানা!
অশ্বিনের টান দায় সামলান
অভিসারে নাই মানা!
মধু তিথিতে নীজকে হারাতে
ব্যকুল পিয়াসী অন্তর!
কোথা পানসী! কোথা মানসী!
খুঁজে মরি প্রিয় প্রান্তর!
শাওনাজ, উত্তরখান, ঢাকা।
*************************************************************************************
*************************************************************************************
কাশকন্যা
শরৎ সেজেছে কাশফুলে
থরে বিথরে বালুচরে!
সাদা মেঘের শতদল উড়ছে
অপরূপা নীলাম্বরে!
ভাটির দেশে শুভ্র কাশবন
কেড়ে নিয়েছে মন,
নদীর তীর কত যে নিবিড়;
মন হয় উচাটন!
হাওয়ায় দোলে ফুলদল
উড়ে যেতে চায় সুদূরে;
মায়া-মমতায় আটকে আছে
পাশাপাশি অঙ্গাঙ্গীভাবে!
ফুলের মাঝে পাখীরা ওড়ে
প্রজাপতি নেচে চলে বাড়ি।
কাশকন্যাদের হাসির রেখায়
বিলীন হয়ে যায় পরী!
উদাসী আকাশ হাতছানি দেয়
ভাসাবে মেঘের ভেলায়!
সুরের ছোঁয়ায় মন রাঙাবে
মৃদুমন্দ পূবালী বায়!
শাওনাজ, উত্তরখান, ঢাক।
************************************************************************************************
************************************************************************************************
কাশবনের রাজকন্যা
ধূসর সাদা কাশফুলে
ছেয়ে গেছে বালুচর।
নীলাকাশে উড়ছে
সাদা মেঘ স্তরে স্তর।
ধরাধামে নেমে এলো
এলোকেশী উর্বশী!
কপালেতে নীল টিপ
যেন পূর্ণিমা শশী।
নীল শাড়ি লাল পাড়ে
শ্যামলী তন্বী মনোহারী!
কাশবনের রাজকন্যা
যেন আসমানী পরী!
জোড়া ভ্রুর ডাগর চোখে
নজরকাড়া কাজল।
দুর্বিনীত হাওয়ায় উড়ছে
তার শাড়ির আঁচল।
তার মুখে ভাষা নেই
চোখে শুধু জল!
প্রকৃতির এত আয়োজন
সব হলো যে বিকল।
কবির অন্তর কাঁপে
সেও মূক বিহ্বল!
কথা কাব্য নৈবেদ্য
সব হলো যে বিফল!
শাওনাজ, উত্তরখান, ঢাকা!
************************************************************************************************
************************************************************************************************
শারদ সন্ধায়
অসীম নীলে মাতাল অনিলে
মেঘের তুলো ভাসে!
সবুজ দিগন্ত বন বনান্ত
প্রান খুলে হাসে!
সাদা নীলে দারুণ মিলে
দূর আকাশের গায়!
নীলে সবুজে দারুণ সাজে
দিকচক্রবাল রেখায়!
রংয়ের ছোঁয়ায় মন হারায়
অনিন্দ্য সুন্দর ধরা!
ছন্দ সুরে প্রাণ ভরে
আলোয় ভূবন ভরা!
কলা পাতা দোলায় মাথা
ভাসবে মেঘের সনে;
বাউলের চুল উড়ুক্কু কুন্তল
উড়বে দূর গগনে!
শরৎ আকাশ রম্য ক্যানভাস
স্বচ্ছ রহস্যময় নির্মল;
মেঘের পরে মেঘ উড়ছে
জগলুর চিত্ত বিহ্ববল!
শরীর ছেড়ে মন উড়
বিনি সুতার ডোরে;
উল্লাসে দূরে চিলেরা উড়ে
গোধূলির লাল আবীরে!
স্বচ্ছ টলটলে দিঘীর জলে
আকাশের মোহনীয় ছায়া!
সাঁঝের বেলা জগলু একেলা
জলতলে হারায় কায়া!
শাওনাজ, উত্তরখান, ঢাকা।
xxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxxx
শুভ্র শরৎ
শ্রাবণ গিয়েছে ফিরে চুপিসারে
বর্ষাময় শান্ত সকালে!
নীল-সাদা শাড়ী পরে অগোচরে
ভাদ্র এসেছে ধরাতলে!
বৃষ্টি শেষে রোদ হাসে
রোদ হারায় মেঘে নিমিষে!
টক মিষ্টি ঝালের সৃষ্টি
সকাল সাঝের আকাশে!
ঝুম বৃষ্টি রোদ মিষ্টি;
কি অপূর্ব অনাসৃষ্টি!
নির্মল জ্যোতি শান্ত প্রকৃতি
ঝিলে শাপলার লুটোপুটি!
ভাদ্র শেষে আশ্বিন আসে
প্রকৃতি ছায় সাদা শুভ্রতায়!
ভাদ্র সূচনায়, আশ্বিন পূর্ণতায়
শরৎ স্বল্পায়ু কেন হায়!
আকাশ অমল নীল নির্মল
পেঁজা পুঞ্জ সাদা মেঘ ভাসে!
সবুজ ক্ষেতে ধানের শীষ
মুখ উচিয়ে উদ্ভাসে!
গাংয়ের পাড়ে নদীর চরে
ধূসর কাশফুলের আঁচল!
জুঁই-শিউলি ফুলের হাসি
শরতের মাধুরী কোমল!
ভাদ্র মাসে উষ্ণ বাতাসে
তাল পেকে রসে টসটস ;
অনুষ্ণ বাতে জ্যোৎস্না রাতে
ভাবুক বিবাগীর মন বেবশ!
শাওনাজ, উত্তরখান, ঢাকা!
*************************************************************************************
*************************************************************************************
আবার আসবো আশ্বিনে
এ কে সরকার শাওন
কতদিন দেখিনা তাঁরে
মনে পরে বারে বারে।
বাড়ী ফিরিবার কালে
দেখতো পিছন ফিরে!
সেই মুখ মনে এলে
হৃদয় তোলপাড় হয়
অতীতের পর্দা উঠে
স্মৃতিমালা কথা কয়!
মালঞ্চিতে শুকায় ফুল
স্মৃতিপটে পড়েনি আচড়!
হাঁসিটাও অটুট আছে
অনুভবটা নিরন্তর!
সুখ বসন্ত গিয়েছে উবে
ভ্রমরেরা আজ নিরব!
চারিপাশে ধূ ধূ বালুচর
তপ্ত লাভা সরব!
মেঘের ভেলায় ভেসে
দিগন্তরেখা করি পার!
যদি ভুলে কোনক্ষণে
দেখা পাই প্রিয়তমার!
শরতের শিউলি আমি
অনাদরে নিলাম বিদায়!
আবার আসবো আশ্বিনে,
তাঁর বুকে পাই যেন ঠাই।
কবিতাঃ আবার আসবো আশ্বিনে
এ কে সরকার শাওন
কাব্যগন্থঃ প্রণয়-প্রলাপ
এ কে সরকার শাওন
শাওনাজ, ঢাকা।
*************************************************************************************
*************************************************************************************
শরৎপ্রাতে
এ কে সরকার শাওন
ডিঙ্গা বেয়ে বর্ষা ডিঙিয়ে
অবির্ভূত শরৎ সকাল!
ধানের ক্ষেতে দুরন্ত হাওয়া
দুর্বিনীত তাল মাতাল!
স্নিগ্ধ শান্ত শীতল সকালে
কোমল আলোর প্রক্ষেপণ!
বিধাতার সৃজন অপরূপ ভুবন
প্রকৃতির বিমোহিত আস্তরণ!
পাখীর কূজন মনে অনুরণন
সুবর্ণ সূর্যের হাসি!
ভুবন মোহন প্রকৃতির রূপ
কে না মোরা ভালোবাসি!
সোনা রোদে চিকচিক
শিশিরসিক্ত দূর্বার ডগা!
সর্পাকারে ফনা তুলে
তেজী ঝিঙার আগা!
আকাশে উড়ি সারস সারি
পাতায় মেঘের সাথে মিতালী
কাশবনে মৃদুমন্দ বয়ে
তনুমন উন্মনা খেয়ালী!
হাঁটুজলে নিবিষ্ট মনে
মাছের ধ্যানে ধবল বক!
দোয়েল-কোয়েলের শীষে
মুখরিত ধরিত্রী জাঁকজমক!
শরত সকালে কাশ চামেলী
জুঁই ফুল কুড়ানোর ধুম!
শুভ্র সৌন্দর্যে মােহিত মন
শিশিরে শেফালী অনুপম!
সকলে সকালে উনুন ঘিরে
মায়ের পিঠার আস্বাদন;
বাঙালি এ ঐতিহ্য বিশ্বে বিরল
খুঁজে পাবে না ত্রিভুবন!
প্রতি সকালে স্ত্রীর কুন্তলে
জগলু আটে কাঠ গোলাপ!
সজনীর তরে সব ফুলাধারে
ব্যাথা বেদনার মনস্তাপ!
প্রফুল্ল চিত্তে কাজের নিমিত্তে
কৃষাণ চলে সাত সকালে;
ফসলের সম্ভাবনায় বেজায় খুশী
প্রশান্তিতে তনুমন দোলে!
নানান রংয়ের মানুষের ভীড়ে
গায়ের আড়ং জমজমাট!
কুয়াশা কাটলে গোপালপুর বিলে
চলে শাপলা কুড়ানোর ঠাট!
শরৎপ্রাতে আকাশ বাতাস
দূর্বাঘাসও সৌন্দর্য বিলায়।
বাংলা বাঙ্গালীর মন উচাটন
বাউল কবি গুনগুনায়!
কবিতাঃ শরৎ সকাল
কাব্যগ্রন্থঃ প্রান্তিক-প্রান্তরে
এ কে সরকার শাওন
শাওনাজ ভবন, উত্তরখান, ঢাকা।
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১