Main Menu

ফেন্সিডিলে আচ্ছন্ন সীমান্ত, ঝিমোচ্ছে প্রশাসন-আনন্দবাজার

+100%-

সলেই মারাত্মক ক্ষতি। তার উপরে এখন আবার একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের জাল কাফ সিরাপও দাপাচ্ছে রাজ্যের সীমান্ত জুড়ে। দেদার পাচারও হচ্ছে বাংলাদেশে।
রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা জানেন না, তা নয়। কিন্তু ট্রাক বোঝাই কাফ সিরাপ কারা আটক করবে, কারাই বা ধরবে পাচারকারীদের তা নিয়েই রাজ্যের নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো এবং ড্রাগ কন্ট্রোলের মধ্যে টানাপোড়েন রয়েছে। তরজায় জড়িয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও। তাতে পাচারকারীদেরই পোয়াবারো হয়েছে।
প্রশাসনের ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এত দিন কোটি-কোটি টাকার হেরোইন এবং অন্য মাদক বাংলাদেশে পাচার হত। কিন্তু এখন সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের হাজার-হাজার শিশি কাফ সিরাপ। নেশাড়ু ও পাচারকারীদের কাছে যার পোশাকি নাম ‘ডাল’। নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর জোনাল ডিরেক্টর সুব্রত বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, “আসলে কিছু কাফ সিরাপে মরফিনের মতো কোডেইন নামক পদার্থ থাকে। তাতেই নেশা হয়। আমরা এ রকম ৮৫টি ওষুধের তালিকা করেছি। বাংলাদেশে পাচার হওয়ার সময়ে একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের প্রচুর কাফ সিরাপ ধরা পড়েছে।”
প্রধানত নেশাবস্তু হিসেবে ব্যবহৃত ওই সব সিরাপের জোগান কিন্তু চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তা ছাড়া ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া দোকান থেকে বিক্রিও বারণ। অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে তাই উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় রাতারাতি জাল কাফ সিরাপের কারখানা গজিয়ে উঠেছে। দেশি মদের তুলনায় জাল মদ যেমন অনেক বেশি বিপজ্জনক, জাল সিরাপও তাই।


কী ভাবে তৈরি হচ্ছে জাল সিরাপ? পুলিশ জানায়, কিছু তরল পদার্থ, রং, কিছু ট্যাবলেটের গুঁড়ো এবং চোলাই মদের মতো এক ধরনের জিনিসের সঙ্গে ‘কোডেইন’ নামক এক ধরণের উত্তেজক দ্রব্য মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে এই জাল কাফ সিরাপ। কোনও কারখানায় মেশানোর কাজ চলছে। কোথাও শুধু ১০০ মিলিলিটারের শিশিতে ভরার কাজটুকুই চলছে। ওষুধের শিশির গায়ে যা-যা লেখা থাকে সেই রকমই লেবেল সেঁটে দেওয়া হচ্ছে শিশিতে। খালি চোখে দেখে পার্থক্য করার উপায় নেই। চাহিদা এতটাই যে, সীমান্ত এলাকার বাইরে মফস্সলে ঘর নিয়েও শিশিতে সিরাপ ভরা হচ্ছে।


দিন পনেরো আগে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় জনবহুল এলাকা জয়গাছিতে হানা দিয়ে কার্যত অবাকই হয়ে যায় পুলিশ। ৭৯৫ বোতল নকল কাফ সিরাপ, ২০টি বিশাল ড্রাম ভর্তি নকল সিরাপ এবং বেশ কিছু উপকরণ উদ্ধার হয় সেখান থেকে। ধরা পড়ে দুই কারিগর। হাবরা থানার আইসি অনিলবরণ রায় জানান, প্রাথমিক ভাবে ওই সিরাপ পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সেটির অতিরিক্ত সেবনে এমনকী মৃত্যুও ঘটতে পারে। ওই তরল ঠিক কতটা ক্ষতিকর তা জানতে ফরেন্সিক পরীক্ষায় নমুনা পাঠানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, আগে বাক্স-বাক্স সিরাপ শিশি-বন্দি হয়ে পাচার হত। জ্যারিকেনে ভরেও চলত পাচার। পরে হিমাচলপ্রদেশ ও মুম্বইয়ে নকল সিরাপ তৈরি হতে থাকে। জ্যারিকেন ভর্তি সেই সিরাপ বিহার হয়ে রাজ্যে ঢুকত। সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় তা শিশিতে ভর্তি হয়ে বা স্রেফ জ্যারিকেনে করেই যেত বাংলাদেশে। এখন এত চাহিদা যে সীমান্ত এলাকাতেই জাল সিরাপ তৈরি হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনায় বনগাঁর জয়ন্তীপুর ও খেদাপাড়া, গাইঘাটার আংড়াইল, বাগদার বয়রা ও গাঙ্গুলিয়া, বসিরহাটের হাকিমপুর এবং নদিয়া সীমান্ত দিয়ে তা বাংলাদেশে ঢুকছে। ওই এলাকায় কাফ সিরাপ পাচারের সিন্ডিকেটও তৈরি হয়েছে।
এমনই একটি পাচার সিন্ডিকেটের এক কর্তা জানান, ১০০ মিলিলিটারের এক শিশি ‘ডাল’ কিনতে লাগে ৮৭ টাকা। তা বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য শিশি পিছু ১০ টাকা করে নেয় ‘ক্যারিয়ার’রা। প্রায় দ্বিগুণ লাভে তা ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয় বাংলাদেশে। ঢাকার মতো শহরে যেখানে নজরদারি বেশি, ১০০ মিলিলিটার ‘ডাল’ এমনকী ৮০০ টাকাতেও বিক্রি হওয়ার খবর রয়েছে। ওই কর্তার কথায়, “নকল ডালে লাভ আরও বেশি। ধরা পড়লে ক্ষতির অঙ্কটাও কম।”
এর পরেও প্রশাসন হাত গুটিয়ে রয়েছে কেন? নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর জোনাল ডিরেক্টরের দাবি, “এই সব আটকানোর দায়িত্ব আমাদের না ড্রাগ কন্ট্রোলের, তা নিয়ে কিছুটা আইনি জটিলতা রয়েছে।” রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোলার চিন্তামণি ঘোষ এ নিয়ে কোনও ব্যাখ্যাই দিতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “যা জিগ্যেস করার, স্বাস্থ্য দফতরকে জিগ্যেস করুন।” রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী আবার বলেন, “এ নিয়ে যা বলার, তা ড্রাগ কন্ট্রোলারই বলবেন।”
পাচারকারীরা যে কার্যত ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছে, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে?



« (পূর্বের সংবাদ)



Shares