যেকারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এরশাদ
ডেস্ক ২৪: আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। নির্বাচন থেকে তার সরে দাঁড়ানোর ঘটনা এখন রাজনীতির মাঠের সবচেয়ে গরম খবর। তবে তার সরে আসার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না রাজনৈতিক সচেতন মহল। অনেকেই মনে করছেন, তিনি হয়তো আবার ঘোষণা দিবেন নির্বাচন ছাড়া সমস্যা সমাধান হবে না। সুতরাং গণতন্ত্রের স্বার্থে আমাকে নির্বাচনে যেতে হবে।
কেন তিনি হঠাৎ করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিষয়টি জানেন না জাতীয় পার্টির অনেক নীতিনির্ধারণী সদস্য। তাদের ধারণা সরকারের কিছু সিদ্ধান্তে তিনি মন:ক্ষুন্ন হয়েছেন। যেকারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
দলের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকারে এরশাদের যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল তার মামলাগুলোর নিষ্পত্তি। কিন্তু সেই মামলার নিষ্পত্তিতে এখনও সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যেটি তিনি আজকের সংবাদ সম্মেলনেও উল্লেখ করেছেন।
এছাড়া জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো দাবি জানানো হয়েছিল। দাবির মধ্যে আরও ছিল জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার জন্য টিভি-বেতারে ৪৫ মিনিট সময় তার জন্য বরাদ্দ করা। কিন্তু কোনো দাবিই রাখেনি ইসি। এসব কারণে তিনি সরকারের উপর চরম ক্ষুব্ধ হন। আর বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষির বিষয়তো আছেই। সবকিছু মিলিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো ঘোষণা দেন বলে মনে করেন দলের নেতারা।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, রংপুর-১ আসন থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছিলাম। দলের চেয়ারম্যান মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। কেন দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সরকারের কিছু বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য ছিলো। এরমধ্যে রয়েছে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বৃদ্ধি না করা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় মনোনয়ন নিয়ে সমঝোতা না হওয়া।
তবে সরকারের শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ মনে করেন শেষ সময়ে এরশাদ নির্বাচনে আসবেন। তিনি বলেন, এরশাদ যাই বলুক না কেন সে নির্বাচনে আসবেন। কিছু দাবি-দাওয়া ছিল এরশাদের। বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি নির্বাচন কমিশনকে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর দাবি করেছিলেন। সময় না বাড়ানোর জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে এমন ঘোষণা দিতে পারেন বলে তিনিও মনে করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে কোনো কিছুই তার জানা নেই।’।
প্রসঙ্গত, আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, ‘আমি বলেছিলাম- সব দল নির্বাচনে না গেলে আমি নির্বাচনে যাবোনা। সেই সব দলের মধ্যে আমিও তো একজন। আমি ভেবেছিলাম- কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে। তাই প্রথম এগিয়ে আসার দায়িত্বটা আমিই নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের অর্জন আসবে না। আসতে পারেও না। কারণ গণতন্ত্রে ক্ষমতার রদবদলে একটাই পথ নির্বাচন। আমি সেই পথেই হেটেছিলাম। ভেবেছিলাম- আরো দল আমাকে অনুসরণ করবে। দূর্ভাগ্য আমার দূর্ভাগ্য গোটা জাতির কোনো প্রত্যাশাই পূরণ হলোনা। বলেছিলাম- সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ এবং নিরাপদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে-আমরা নির্বাচনে থেকে যাবো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে- পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই এই পরিস্থিতিতে আমাকেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হলো। এখন দেশের অনিশ্চিত গন্তব্য কোথায় গিয়ে থামবে- তা শুধু সর্ব শক্তিমান আল্লাহরই জানা থাকলো।’
তবে আজকের সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের পাশে কেউ ছিলেন না। তিনি একাই বনানীতে দলের কার্ালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এর আগে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য, মহাসচিবসহ অনেক নেতাকর্মী ছিলেন। যদিও ঐ সময়ে কাজী জাফর আহমদসহ বেশ কিছু নেতা ছিলেন না। কিন্তু আজ কেউ ছিলেন না। অনেকে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বলছেন, এরশাদ কি তাহলে একা হয়ে গেছেন?