Main Menu

ফরিদপুরের ছেলে ওয়াশিংটনের মেয়ে এ যেন রূপ কথার এক গল্প

+100%-

এ যেন মধুমালা-মদন কুমারের সেই রূপ কথার গল্প। মধুমালাকে স্বপ্নে দেখে তাকে বিয়ে করতে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে যাত্রা করেছিলেন মদন কুমার। নদীর ঘাট থেকে স্নান সেরে যাওয়ার পথে মধুমালার লম্বা চুল বালুচর ঘেঁষে যে রেখার সৃষ্টি করেছিল সে চুল রেখার পথ ধরে মধুমালার রাজপ্রসাদের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছিল মদন কুমার, এ যেন সে রূপ কথার উল্টো গল্প ফেসবুকে পরিচয় আর প্রেমের সূত্র ধরে সুদূর আমেরিকার ওয়াশিংটন থেকে বাংলাদেশের ফরিদপুরের ছেলেকে বিয়ে করতে উড়ে এলেন মিষ্টি মেয়ে মিস্টিনা। ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর সড়কের সান্তুর রেস্টুরেন্টে বিয়ে হলো ১৪ই এপ্রিল। লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বিয়ের সাজে সেজেছিলেন মিস্টিনা উইল মেসার। বর ফরিদপুরের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন। ২৫ বছর বয়সী মিস্টিনা বিশ্বখ্যাত কোম্পানি ওয়াল মার্টের ওয়েলিংটন শহর শাখার এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। এখনও পড়াশোনা শেষ হয়নি। এমবিএ করছেন। ব্যবসায়ী পিতার কন্যা। পিতা ক্রিস্টিয়ান জর্জ উইল মেসার ওয়াশিংটনে একটি টায়ার কোম্পানির মালিক। মা জোয়ালান রিনি কার্লসন পেশায় ডাক্তার। দুই বোনের মধ্যে মিস্টিনা বড়, ছোট বোন পড়ছে ফার্মেসিতে।

আসলে পরিচয়টা কিভাবে? আবার পরিচয় থেকে প্রেম, ভালবাসা, মন দেয়া-নেয়া, হৃদয় বদল শেষে পরিণয়, কিভাবে ঘটলো? অনেকটা লাজুক ভঙ্গিতে সে কথা বললেন বর সাজ্জাদ হোসেন। ফরিদপুরের ছেলে সাজ্জাদ হোসেনের পিতা পুলিশ অফিসার আফজাল হোসেন মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। পিতার মুত্যুর পর বড় হয়েছেন নানা বাড়ি রবগুনার আমতলীতে। তার পর ঢাকায় পড়াশোনা করেছেন তেজগাঁও কলেজে। এক ভাই এক বোনের মধ্যে বড় সাজ্জাদ চাকরি করেন ঢাকায় বাংলাদেশ-ফ্রান্স যৌথ অংশীদারিত্বের কমপ্লাইন্স নামের একটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে।

মিস্টিনা-সাজ্জাদের প্রথম পরিচয় ২০০৮ সালে মার্শাল আর্ট নামের একটি মুভির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। সেখান থেকে নিয়মিত হন ফেসবুকে, তার পর স্কাইপি। মন বদলের গভীরতা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে, শেষে কথা হতো সরাসরি মোবাইলে। সাজ্জাদ জানালেন প্রেম-ভালবাসার কথা হয়েছে অনেকদিন ধরে, ঘর বাঁধার স্বপ্ন থাকলেও প্রকাশ করেননি সাজ্জাদ, হয়তো যদি ফিরিয়ে দেয় মিস্টিনা। কথা হতো প্রতিদিন সকালে-সন্ধ্যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কখনও রাত ফুরিয়ে যেত কম্পিউটারের মনিটরে চোখ রেখে  মেসেজ লিখতে লিখতে, উজাড় করে ভালবাসার গল্প শুনিয়ে। একে-অপরকে জেনেছে বুঝেছে দীর্ঘদিন। ২০১১ সালের মধ্যভাগে ঈদের সময় চার পাঁচদিনের জন্য ঢাকা ছেড়ে বরগুনার আমতলীতে বেড়াতে যায় সাজ্জাদ। সাজ্জাদ নেটওয়ার্কের বাইরে থাকায় তাকে খুঁজে না পাওয়ায় ওদিকে উতলা হয়ে মিস্টিনা মেসেজ পাঠায় সাজ্জাদের মোবাইল ফোনে। সেই থেকে শুরু হয় আরেক ধাপ। ক্ষণে ক্ষণে মোবাইল ফোনে বার্তাবিনিময়। ২০১১ সালের নভেম্বর মাস মিস্টিনা সাজ্জাদের প্রেমের পূর্ণতা আনতে প্রথম বিয়ের প্রস্তাবের মেসেজটি পাঠায় মিস্টিনা। এক মিনিটের মাথায় রাজি হওয়ার ফিরতি মেসেজ পাঠায় সাজ্জাদ। বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোর আগেই মিস্টিনা বাংলাদেশের ছেলে সাজ্জাদকে বিয়ে করার কথা জানায় তার বাবা মাকে। রাজি হন তারা। আমেরিকার মেয়ে মিস্টিনাকে পুত্রবধূ করে ঘরে নিতে অমত করেননি সাজ্জাদের মাসহ পরিবারের অন্যরা।

সেই থেকে সাজ্জাদ মিস্টিনা প্রহর গুনতে থাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসার মাহেন্দ্রক্ষণটি কখন তাদের জীবনে আসবে? প্রেম-ভালবাসা আর হৃদয় অদল-বদলে সীমান্ত রেখা কোন বাধা হয়ে না দাঁড়ালেও বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে বাধা হয় সীমান্ত। আমেরিকা যাওয়ার ভিসা পাওয়া দুষ্কর সাজ্জাদের জন্য। শেষে মিস্টিনাই সিন্ধান্ত নেয় বাংলাদেশে এসে বিয়ের অনুষ্ঠানিকতা সারতে। চাকরি থেকে ছুটি নিয়ে ১৩ই এপ্রিল রাতে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায় মিস্টিনা। বিয়ের আক্‌দ হয় ১৪ই এপ্রিল। বর-কনের সংবর্ধনা হয় ১৫ই এপ্রিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের সান্তুর রেস্টুরেন্টে। বিয়ের আসরে বাঙালি মেয়েদের মতোই লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বরের পাশে বসেছিলেন মিস্টিনা। বিয়ে হয়েছে মুসলিম রীতিতে। বিয়ে পড়িয়েছেন কাজী রহমতউল্লাহ। আমেরিকা থেকে একাই এসেছেন মিস্টিনা, বিয়ের সময় স্কাইপিতে মিস্টিনা কথা বলেছে মায়ের সঙ্গে, ছোট বোনের সঙ্গে। মিস্টিনার পিতা ক্রিস্টিয়ান জর্জ উইল মেসার বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় জামাই সাজ্জাদকে আশীর্বাদ করে এক দীর্ঘ মেসেজ পাঠিয়েছেন সাজ্জাদের মোবাইল ফোনে।

এই আলোচিত জুটির বিয়ের পর মিস্টিনা সাজ্জাদের বাসর হয়েছে কলাবাগানের জেকে টাওয়ারে সাজ্জাদের খালাতো ভাই সাব্বির আহমেদের বাসায়। মিস্টিনা বেড়াতে গিয়েছিলেন সাজ্জাদের নানা বাড়ি সাগর পাড়ের জেলা বরগুনার আমতলী এবং পটুয়াখালী শহরে খালা বাড়িতে। সেখানে ছিলেন দুই দিন। মিস্টিনা আমেরিকা ফিরে গেছে ২২শে এপ্রিল রাতে। সাজ্জাদ জানালেন আবার আসবে তিন মাসের ভেতর। থাকবে কিছুদিন। নিজেদের ভবিষ্যৎ জীবনের পরিকল্পনার কথা বললেন সাজ্জাদ, মিস্টিনার সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করেছেন ঢাকায় ও নয়, ওয়াশিংটনেও নয়, মিস্টিনা সাজ্জাদ ঘর বাঁধবেন অন্যকোন শহরে। ওয়ালমার্ট কোম্পানি মিস্টিনাকে তাদের কোম্পানির ওহাইও স্টেটের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, হতে পারে সেখানে তাদের নতুন জীবনের শুরু আবার ইতালি যাওয়ার ভিসা পেয়ে গেছে সাজ্জাদ রোমেও হতে পারে ওই রোমান্টিক জুটির স্বপ্নের ঠিকানা। তিন মাস পর মিস্টিনা এলে ঠিক হবে তাদের নতুন জীবনের পথচলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।






Shares