মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয়া হয় ইলিয়াস আলীকে
প্রচণ্ড জোরে একটি শব্দ হলে আমি বাসা থেকে বের হই। দেখি একটি প্রাইভেট কারের পেছনে কালো রংয়ের একটি মাইক্রোবাস। মাইক্রোবাস থেকে দ্রুত চারজন লোক নেমে আসলো। নেমেই তারা প্রাইভেট কারের সামনের বাম দিকের দরজা খুলে ফেলে। ঐ দিকে যিনি বসা ছিলেন তাকে টেনে হিঁচড়ে কার থেকে নামিয়ে তোলা হল মাইক্রোবাসে। কারের চালককেও একই কায়দায় দরজা খুলে টেনে নামিয়ে ঐ মাইক্রোবাসে তোলা হয়। পরে মাইক্রোবাসটি দ্রুত চলে যায় বনানীর ২ নম্বর সড়কের দিকে।’বিএনপির সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলীর পরিত্যক্ত গাড়িটি যেখানে পাওয়া যায়, তার পাশেই নূরানী টাওয়ার। নির্মাণাধীন ঐ বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী লুত্ফর রহমান গত মঙ্গলবার রাতের ঐ ঘটনার এভাবেই বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় মাইক্রোবাসটি প্রাইভেট কারটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতেই শব্দ হয়, আর এ শব্দ শুনে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি। রাত তখন সোয়া ১২টা কি সাড়ে ১২টা। মাইক্রোবাসের লোকজনের হৈচৈ শুনে আমি ভয় পেয়ে আবার বাড়িতে ঢুকে পড়ি।’ নিরাপত্তা কর্মী প্রথমে মুখ খুলতে রাজী না হলেও এই প্রতিবেদকের চাপাচাপিতে তিনি মুখ খুলেন। কালো রঙের ঐ মাইক্রোবাসে কারা ছিল তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। লুত্ফুর রহমানের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে কারের বাম দিকের ব্যক্তিটি ছিলেন ইলিয়াস আলী। এদিকে, ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে গতকাল র্যাবের একটি দল বনানীর ২/১ নম্বর রোডের ৩ নম্বরে ইলিয়াস আলীর বাড়িতে যায়। তারা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনার সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনার দিন ইলিয়াস আলী বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তার সঙ্গে আর কেউ ছিলেন কীনা এ বিষয়ে জানতে চান র্যাব সদস্যরা। এছাড়া ইলিয়াস আলীর সঙ্গে কারো রাজনৈতিক শত্রুতা বা আর্থিক লেনদেনের কারণে দ্বন্দ্ব আছে কীনা তাও জানতে চায় র্যাব। ইলিয়াস আলীর একাধিক মোবাইল ফোন নম্বরও সংগ্রহ করেছে র্যাব। তবে গতকাল ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা বলেন, তার স্বামীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। সরকার একটু চেষ্টা করলেই তার স্বামীকে ফিরে পেতে পারেন। মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করে গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে ঘটনার দিন ইলিয়াস আলী রাত পৌনে ১২টার দিকে রূপসী বাঙলা হোটেল থেকে বের হন। ঐ সময় থেকেই মাইক্রোবাসটি ইলিয়াস আলীর প্রাইভেট কারটি ফলো করছিল। গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, ইলিয়াস আলীকে বেশ কিছুদিন ধরে ফলো করা হচ্ছিল। তাদের ফলো করার ধরনে মনে হচ্ছে তারা প্রশিক্ষিত। ঘটনাস্থল থেকে ইলিয়াস আলীর গাড়িটি উদ্ধারের সময় অনেক বিষয় পুলিশের উদ্ধারকারী টিম পর্যবেক্ষণ করেনি। এ ব্যাপারে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার লুত্ফুল কবীর জানান, গাড়ি উদ্ধারের সময় সামনের দুইটি দরজা খোলা ছিল। গাড়িটি যে দ্রুত ব্রেক কষে থামানো হয়েছিল তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারণ গাড়িটি দ্রুত ব্রেক কষে থামানো হলে পিচঢালা রাস্তায় চাকার দাগ থাকতো। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে, গাড়িটিকে অন্য একটি গাড়ি পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছিল। এতে কারের পেছনের বাম্পার বেঁকে যায়। তবে গাড়ির স্টার্ট বন্ধের পাশাপাশি শীতাতপ সিস্টেম (এসি) বন্ধ ছিল কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এছাড়া গাড়ির ব্রেক কিভাবে ছিল তাও পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এদিকে, র্যাবের মিডিয়া অ্যান্ড লিগ্যাল শাখার পরিচালক কামান্ডার মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, র্যাবের একটি টিম ঘটনার পর থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তিনি বলেন, র্যাবের ইলিয়াস আলীকে আটক করার প্রশ্নই ওঠে না। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, বুধবার রাতে বিএনপি’র সাতজন সংসদ সদস্য র্যাব-১ এর পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছেন। র্যাব সংসদ সদস্যদের আশ্বস্ত করেন যে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করতে র্যাব যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। |