পাওনা ছাড়া দেশে ফিরবো না – দুবাইর মরুভূমিতে ১১ বাংলাদেশির অবস্থান
চলার মত কানাকড়িটিও নেই হাতে। তাদের নিয়োগকর্তারা এ অবস্থায় তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বিদেশ বিভূঁইয়ে কপর্দকহীন অবস্থায় নিরুপায় ওই বাংলাদেশি শ্রমিকরা শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন মরুভূমিতে। এ ঘটনা ঘটেছে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীদের তারা জানিয়েছেন, পাওনা মজুরি না নিয়ে আমিরাত ছাড়বেন না তারা। একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নারী সমাজ কর্মী সাহের শাইখ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আমিরাতে এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। কিন্তু সরকার এখনও এ বিষয়টায় নজর দিচ্ছে না। সাহের আরও জানান, কয়েক মাস ধরে এই শ্রমিকদের সঙ্গে এসব ঘটছে যা খুবই আশ্চর্যজনক। এ বিষয়ে আদালতে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু মাসের পর মাস সেগুলো ফয়সালা না হওয়ায় কাজহীন-অর্থহীন শ্রমিকরা মানবেতর অবস্থায় দিন গুজরান করছে। এদিকে, ওই ১১ শ্রমিকের একজন বাংলাদেশি কর্মী আব্দুল লতিফ বেলাল বলেন, মালিক পক্ষ গত ৩ মাস যাবত আমাদের বেতন দিচ্ছে না। তারা আমাদের ইন্সুরেন্সসহ সব প্রাপ্যই আটকে রেখেছে। গত ৪ মাস ধরে আমাদের বাসস্থানে বিদ্যুৎ ও খাবার পানি নেই। তারা আমাদের থাকার ঘর ভেঙ্গে দিয়েছে এবং হাতে টিকেট-পাসপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে বলেছে- দেশে ফিরে যাও। কিন্তু আমরা পাওনা টাকা না নিয়ে দেশে যাবো না। এ অবস্থায় মুরভূমিতে এসে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না তাদের সামনে। বেলাল জানান, বিষয়টি বাংলাদেশ অ্যাম্বেসিকে জানানো হয়েছে। তারা বলেছে সাহায্য করবে। উল্লেখ্য, আরব আমিরাতের বর্তমান মোট বাসিন্দার শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ বিদেশি কর্মী-শ্রমিক। শ্রমিকদের বেশিরভাগই বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া-জাপান-কোরিয়াসহ উন্নত দেশ থেকে আগত পেশাজীবীরা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শ্রমিকরা সেখানে শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকে। তবে ভারতীয়রা তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে। অঢেল বিত্ত-বৈভবের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের এ ঘটনা বাংলাদেশসহ বিদেশি শ্রমিকদের জন্য বেদনাদায়ক এবং অপমানজনকও। কথিত সেভেন স্টার হোটেল বুর্জ আল আরব, একই ধরনের স্থাপত্য বুর্জ আল খলিফা এবং সমুদ্রের মাঝে গড়ে তোলা কৃত্রিম দ্বীপ আল জুমেইরাসহ আরব আমিরাতের গড়ে ওঠার পেছনে বিদেশি প্রকৌশলী-শ্রমিকদের অবদানই মুখ্য।
|