মাধবপুরে সাংবাদিক-পুলিশের ওপর হামলা: ডাকাতি নাকি অন্যকিছু!
শীর্ষ নিউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : হবিগঞ্জের মাধবপুরে দুর্বৃত্তদের হামলায় এটিএন নিউজের পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান পীযূষ কান্তি আচার্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. বায়েজিদসহ ৫ জন আহত হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে ধুমজাল সৃষ্টি হয়েছে। এটি নিছকই ডাকাতির ঘটনা নাকি সাংবাদিক-পুলিশকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা তা নিয়েও এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ঘটনা তদন্তে দুই সদ্যস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখনো পর্যন্ত ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
জানা যায়, গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে একটি মাইক্রোবাস যোগে এটিএন নিউজের পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান পীযূষ কান্তি আচার্য ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. বায়েজিদসহ কয়েকজন মিলে জেলার নাসিরনগর উপজেলার ভুবনে একটি মাজারের ওরসে যাওয়ার পথে রাত ১২ টার দিকে হবিগঞ্জের মাধবপুরের আদাউর নামক স্থানে একদল দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। মাইক্রোবাসে আরোহীরা কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাইক্রোবাসে ভাংচুর শুরু করে। পরে মাইক্রোবাসের থাকা সাংবাদিক পীযূষ ও টিআই বায়েজিদসহ বাকিদেরকে মারধর করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে। এরপর দুর্বৃত্তরা তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নেয়।
পরে মাধবপুর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়।
হামলার বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিক পীযূষ কান্তি আচার্য বলেন, শুক্রবার রাতে নাসিরনগরের ভুবনে একটি মাজারে ওরস চলছিল। এ জন্য রাতে একটি মাইক্রোবাসে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের থেকে ওরসের তবারক নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তারা কয়েকজন মিলে অপর একটি মাইক্রোবাসে করে ভুবনের দিকে রওনা হন। তবে ওরসের তবারকের মাইক্রোবাসটি দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার না হলেও রাত ১২টার দিকে মাধবপুরের আদাউর নামক স্থানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা একদল মুখোশধারী সশস্ত্র দুর্বৃত্ত তাদের মাইক্রোবাসের গতি রোধ করে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাইক্রোবাসে ভাংচুর শুরু করে এবং মাইক্রোবাস থেকে সাংবাদিক পীযূষ ও গাড়ি চালক মোস্তাককে বের হরে বেদম পেটাতে থাকে। পরে মাইক্রোবাসে থাকা বাকিদেরকেও বেদম পিটিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে দুর্বৃত্তরা। এরপর দুর্বৃত্তরা তাদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকার মালামাল লুটে নেয়। তিনি আরো জানান, স্বাভাবিকভাবে কোনো ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতরা মালামাল লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এ ঘটনায় ডাকাতরা মালামাল লুটে নিয়েও ‘ওকে মেরে ফেল’ বলে তারা সাংবাদিক পীযূষকে বেধরক পেটাতে থাকে। এর ফলে এ ঘটনাটিকে ডাকাতি না বলে তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলেই দাবি করেছেন সাংবাদিক পীযূষ।
এদিকে ঘটনাটি তদন্তে শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ। কমিটিকে পরবর্তী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহরিয়ার আল মামুন বলেন, ঘটনার আলামত দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি পরিকল্পিত হামলা। তবে ঘটনার অধিকতর তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।
অন্যদিকে ঘটনার দুইদিন পেরিয়ে গেলেও মাধবপুর থানায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। এতে করে এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারি মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা মো. মনির হোসেন বলেন, এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনো পর্যন্ত আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনাটির অধিকতর তদন্ত চলছে।