Main Menu

আওয়ামী লীগের প্রথম শাখা কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় -অ্যাডভোকেট আহমেদ আলী

+100%-

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বৈরাচার মুসলিম লীগ সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য। যার জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। ফলে তার জন্মলগ্ন সময়টা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ মুসলিম লীগ সরকার মরিয়া হয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে লেগেছিল। তাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মানেই তখন ছিল স্বৈরাচার মুসলিম লীগের জেল-জুলুম। তখন খুব সাহসী পুরুষ ছাড়া কেউ আওয়ামী লীগ করতেন না। ফলে এ কথাই বলা যায়, আওয়ামী লীগের জন্মটা তখনকার সরকারের জন্য সুখকর ছিল না। বহু ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল এবং সেই দিন দলটি গঠনে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন তদানীন্তন ময়মনসিংহ ও ত্রিপুরার (বর্তমানে বৃহত্তর কুমিল্লা) সাহসী সন্তান। আরও বিশেষভাবে বললে বলা যায়, সেদিন আওয়ামী লীগ গঠনে যারা উদ্যোক্তা ছিলেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন তদানীন্তন টাঙ্গাইল মহকুমা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার সন্তান। তাই আমরা দেখতে পাই, আওয়ামী মুসলিম লীগের গঠিত প্রথম (১৯৪৯ সাল) কার্যনির্বাহী কমিটিতে টাঙ্গাইল এবং ত্রিপুরা জেলার সদস্য ছিলেন বেশি।

প্রথম গঠিত কমিটির সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন টাঙ্গাইল বিজয়ী বীরখ্যাত শামসুল হক। যিনি আজ নিশ্চিহ্ন বলতে হবে আওয়ামী লীগ করার অপরাধে। পরবর্তী কার্যনির্বাহীদের মধ্যে এক নম্বর সহসভাপতি ছিলেন আলী আহমেদ খান, যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর বাঞ্ছারামপুর থেকে এমএলএ হয়েছিলেন ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা কমিটিতে একমাত্র এমএলএ ছিলেন আলী আহমেদ খান যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের সন্তান। সহকারী সম্পাদক হিসেবে এক নম্বরে অবস্থান ছিল খন্দকার মোশতাক আহমেদ, যিনি বর্তমানে ‘খুনি মোশতাক’ নামে অভিহিত। দুই নম্বর সহকারী সম্পাদক ছিলেন এ কে রফিকুল হোসেন যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের সন্তান। তিন নম্বর সহকারী সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠাতা কমিটি গঠনের সময় শেখ মুজিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না, কারণ তিনি তখন জেলে ছিলেন। যাই হোক, এখানে আবার একটা কথা হলো মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তখন বাংলাদেশের অধিবাসী ছিলেন না, তখন তিনি ছিলেন আসাম মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট এবং আসামের বাসিন্দা। তাকে তখন এ কমিটিতে আনা হয়েছিল বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে। কারণ তখন যারা আওয়ামী লীগ শুরু করেছিলেন, তারা ছিলেন সদ্যসাবেক বা বর্তমান ছাত্রনেতা। তাই মুরবি্ব হিসেবে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে আনা হয়েছিল। তখন তার ঢাকায় থাকার মতো কোনো অবস্থান ছিল না এবং শামসুল হক ছিলেন তখন সদ্য সাবেক ছাত্রনেতা, ফলে তারও ঢাকায় থাকার মতো কোনো অবস্থান ছিল না বলে দুজনই ভাসমান ছিলেন। অন্যদিকে আলী আহমেদ খান এমএলএ, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও এ কে রফিকুল হোসেন তাদের তিন জনেরই ঢাকাতে থাকার মতো বাসা ছিল। আলী আহমেদ খান ও এ কে রফিকুল হোসেন তারা দুজনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের সন্তান ছিলেন আবার দুজনই ঢাকাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন, ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সব রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা এ দুই বাসায় সব সময় ছিল। অন্যদিকে ঢাকার গোলাপবাগ অঞ্চলে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান, কাজী বশীরের বাড়ি ছিল।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তার বাড়িতে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়েছিল। আগেই সংগঠনের টাঙ্গাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া/ত্রিপুরা অঞ্চলের অনেক সদস্যের নাম উল্লেখ করেছি। এ ছাড়াও ২৩ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের আরেক সন্তান আবদুল বারী উকিল (যিনি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা কমিটির একজন সদস্য), আলী আজম ভূইয়া, আবদুল মালেক, রইছউদ্দিন ফুল মিয়া, নাজির হোসেন এবং আমিসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহু নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহু নেতা-কর্মী এ ঐতিহাসিক কমিটি গঠনের সময় উপস্থিত থাকায় পরদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এ কে রফিকুল হোসেনের যোগীনগরের বাসায় আবদুল বারী উকিলকে সভাপতি এবং কাজী রফিকুল ইসলাম মাস্টারকে সাধারণ সম্পাদক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়।

এখানে উল্লেখ্য, আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পরদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী মুসলিম লীগ মহকুমা কমিটি গঠন করা হয় তখনো কিন্তু জেলা কমিটি গঠন করা হয়নি। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রথম শাখা কমিটি। ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা আওয়ামী লীগের একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। আর তার সূচনা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল বারী উকিল, যিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদের পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এবং ওই সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন কাজী রফিকুল ইসলাম মাস্টার, যিনি ছিলেন স্কুলের শিক্ষক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের সন্তান। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়েছে ২৩ জুন আর পরদিন ২৪ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা আওয়ামী লীগ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং আমি নিজেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের সন্তান হিসেবে এ কে রফিকুল হোসেনের যোগীনগরের বাসায় উপস্থিত ছিলাম। সেই সুবাদে মৌলভী আবদুল বারী উকিলের একটা গুরুত্ব ছিল আলাদা।






Shares