ইন্টারনেটে ইলিয়াস ঝড়
ইন্টারনেটে এখন বইছে ইলিয়াস ঝড়। কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়ে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ওয়েবসাইট, ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ ও দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে আলোচিত ইস্যু হয়ে উঠেছেন বিএনপি’র নিখোঁজ এ নেতা। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নিয়মিত আপডেট দিচ্ছেন এ প্রসঙ্গে। ব্লগে মন খুলে লিখছেন ব্লগাররা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, রাজনীতিক, প্রবাসী ও পেশাজীবীরা। ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ প্রকাশ করছেন কৌতুহল। সরকারের ভূমিকা নিয়ে করছেন নানামুখী আলোচনা সমালোচনা। তবে সব ছাপিয়ে উঠে আসছে আশংকা, আতঙ্কের কথা। সেই সঙ্গে নানামুখী গুজব ছড়াচ্ছে ডালপালা। কিন্তু সবারই একই সুর। সবাই সরকারের প্রতি অনুরোধ ও দাবি জানাচ্ছেন অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে। সরকারের হেফাজতে না থাকলে উদ্ধারের জোরালো উদ্যোগ যেন নেন। ফেসবুক, সামহোয়ার ইন ও দৈনিক মানবজমিন থেকে কিছু মন্তব্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হলো। সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকে স্বনামে-বেনামে অনেকেই আপডেট দিচ্ছেন। এসব আপডেটের বেশিরভাগেই থাকছে আতঙ্ক, ভয় আর সরকারের সমালোচনা। সেই সঙ্গে আল্লাহর কাছে প্রার্থনাও। সেখানে একে অন্যকে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য দেয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। একজনের আপডেট শেয়ার করছেন অন্যজন। লাইক করছেন শত শত ইউজার। মন্তব্যও করছেন সমানে। সাংবাদিক ফজলুল বারী লিখেছেন- দেশে একটা মানুষ ভালো কী মন্দ তা দেখবে আইন, জনগণ। কোন একটা মানুষ জ্বলজ্যান্ত নিখোঁজ-গুম হয়ে যাবে, এটা একটি সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে কোনভাবে কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী এ ইস্যুতে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা দেশের মানুষের মতো আমারও ভালো লাগেনি। এটি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর ভাষা হতে পারে না। সাবেক একজন ছাত্রনেতার স্ত্রী লিখেছেন, এ ধরনের ভয়াবহ ও আতঙ্কের খবর নিয়ে খুবই টেনশনে আছি। এ ধরনের অনিরাপদ জীবন খুবই ভয়ঙ্কর। স্বামী এখনো ঘরের বাইরে গেলেই টেনশনে থাকি। এ অনিশ্চয়তা মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইনাম উস শাকুর লিখেছেন- আমার মনে হয়না এইটা নাটক। মনে হচ্ছে দুর্ঘটনা, আমার ভয় হচ্ছে। কারণ আমরাও মানুষ। মানবতাবোধ থেকে বলছি। দোয়া করি তাকে সুস্থ সুন্দর ভাবে ফিরে পাওয়া যাক। সরকার আমিন লিখেছেন- আমি কেবলই নিখোঁজ হয়ে যাই, নিজের কাছে; র্যাব, খামাখা কষ্ট করে লাভ নাই। প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চু লিখেছেন- ইলিয়াস আলী নিখোঁজ, আমি উৎকন্ঠিত। ফয়সাল অভি লিখেছেন- সতর্ক থাকুন, যে কোন মুহুর্তে গুম হয়ে যেতে পারেন। উত্তরে শামীম আহমেদ শিশির লিখেছেন- ভাই একটা অনুরোধ সত্যিই যদি ফেসবুকে কমেন্টস করার জন্য কখনো আমরা কেউ গুম হই, তাহলে ভয়ে কলম গুটিয়ে নিয়েন না, লিখে যাবেন। বিচারের জন্য নয়। অন্তত মানুষ কিছুদিন জানুক- একদা এই নামে বাংলাদেশে একজন মানুষ ছিল। নজরুল ইসলাম লিখেছেন- মিডিয়া ও জনগনের দৃষ্টি থেকে সুরঞ্জিত সেনকে বাচাতে ইলিয়াছ আলীকে অপহরন করেছে সরকার। বিএনপির উচিৎ কঠোর কর্মসূচি দেয়া। ইসমাইল হোসেন সিরাজ লিখেছেন- আজকে অন্যজনের উপর হচ্ছে তাই আমরা হাসছি, যখন নিজের উপর হবে তখন বুঝবো। কিন্তু কিছুই করার থাকবে না। নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর মায়ের কান্নার ছবিযুক্ত আপডেটে মোস্তাফিজ রহমান লিখেছেন- এভাবে আর কতো মা কাঁদার পর আমাদের মাঝে প্রতিবাদের ঝড় উঠবে? আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাই, আমাদের দেশের আইন-শৃঙ্খলা ভালো এ কথা কি আরও বলবেন? মিয়া রবিউল ইসলাম লিখেছেন- মা তুমি কেদনা তোমাকে সান্তনা দিতে পারবনা কিন্তু তোমার চোখের জল কথা কবে নিশ্চয়ই। হাজী কামরুল লিখেছেন- আল্লাহ আপনি ইলিয়াস ভাই ও উনার ড্রাইভারকে জালিমদের কালো থাবা থেকে রক্ষা করো। সোহরাবউদ্দিন লিখেছেন- হা আল্লাহ আমাকে গুম হওয়া থেকে রক্ষা করো। এ ধরনের নরম সমালোচনা নয় কার্টুনসহ সরকারের কড়া সমালোচনা ছড়িয়ে যাচ্ছে ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে, সারাবিশ্বে। বাংলাভাষায় সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন ব্লগ সামহয়ার ইন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী লক্ষাধিক বাংলাভাষাভাষি ব্লগার এ ব্লগে নিয়মিত। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর সামহোয়ার ইন ব্লগেও বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ইলিয়াস ইস্যুতে শত শত পোস্ট প্রকাশিত হচ্ছে এ ব্লগে। দরিয়ানগর লেখেন- একজন সাবেক সাংসদ ইলিয়াস আলীর খোঁজ নেই? বিডি আইডল লেখেন- আওয়ামী লীগের বর্তমান ধুরন্ধর সরকার সব কাজই করছে ডিজিএফআইকে সামনে রেখে…আর আদালতের কাঁধে বনধুক রেখে। সৈয়দ মৈাহাম্মদ আলী কিবর লিখেন- সিলেটেরে মানুষ আজ আতঙ্কিত, মুখের ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে সবাই। বলতে দিন লিখেছেন- সরকারের দ্রুত তদন্ত কমিটির গঠনের মধ্যমে তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার কথা শুনতে শুনতে কানে একদিন ঠিকই পুঁজ বের হয়ে ঘাড় বেয়ে গড়িয়ে নিচে নামছে দেশের জনগনের। বিদ্রোহী ভৃগু লিখেছেন- ইলিয়াস আলী নিখোঁজ! রাজনীতির আকাশে অশনি সংকেত। কু-রাজনীতির এ কোন পথে ধাবমান ক্ষমতাসীন শক্তি! ওবায়েদ লিখেছেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেডরুমে নয় রাজ পথে সাধারণ নাগরিক নয় জনপ্রিয় নেতা কি নিরাপদ? সাকিল খান লিখেছেন, একজন ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ও আমরা নির্বিকার। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছে, আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। কুয়েত প্রবাসী জসিম মল্লিক লিখেছেন- ইলিয়াস আলী নিখোজ সরকার কি করে। সাবেক এই ছাত্রনেতাকে গুম করে সরকার এবং আওয়ামীলিগ চরম ভুল করল। জাতীয় এই ছাত্রনেতাকে গুম করার মাধ্যমে সরকার তাদের ব্যর্থতার পরিচয় দিলো। সরকার এই ছাত্রনেতকে কেমন ভয় পায় আজ জাতির কাছে পরিস্কার। আমরা কুয়েত প্রবাসীরা তার নিন্দা জানাই। অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। ইরফান আহমেদ বলেছেন, সারাদেশ যেন আজ নরকপুরী। এই দেশে কেউ এখন আর নিরাপদ নন। ধীরে ধীরে বিভীষিকাময় রক্ষী বাহিনীর দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছে মাতৃভূমি বাংলাদেশ। ব্লাক উড বলেছেন, পুরো দেশেই এখন গুম আতঙ্ক। ব্যক্তি ইলিয়াস নয়, রাজনৈতিক অবস্থানে ইলিয়াস এখন বড় মাপের নেতা। যখন ইলিয়াস নিখোঁজ হয়ে যান তখন আমরা আতঙ্কিত না হয়ে পারি না। আপনারা তাদের ট্রেনিং দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। আপনাদের সৃষ্টি আপনাদেরই খাবে বলে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে ব্লগার বন্ধুবর লিখেছেন- এর অর্থ ইলিয়াস আলী কি ঐ প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের কাছে আছে? নুর৩ডিইডি লিখেছেন- আওয়ামীলীগ সরকার নিজের একটি ভুল কে ঢাকতে আরেকটি ভুল করছেন! অপুসোনামনি লিখেছেন- কিছু দিন আগে ইলিয়াস আলীর এলাকার দুই তরুন রাজনৈতিক কর্মীও নিখোজ হয়ে গিয়েছিল এই রাজধানী ঢাকায়। এসব কিসের আলামত? দেশে এসব কি হচ্ছে? দেশ কোথায় যাচ্ছে? ফয়জুল আলম বেলাল লিখেছেন- এম ইলিয়াস আলী গুম, না দেশ পড়েছে রাহুর কবলে? এদিকে নানা দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে ইলিয়াস আলীকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে শত শত পাঠক মন্তব্য করছেন। তাদের মন্তব্যে প্রকাশিত হচ্ছে ক্ষোভ ও হতাশা। দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জনৈক পাঠক ফুলু লিখেছেন- এখনকার ঘটনাগুলো কি কোন অশনি সংকেত? কোন ১টা গোষ্ঠী কি দেশ কে বড় কোন বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যাচ্ছে? এই ঘটনা থেকে কে কে লাভবান হতে পারে? সরকার লাভবান হবে বলে মনে হয় না। জামাত লাভবান হতে পারে। আর ১টা মহল যারা দেশে গনতন্ত্র চায় না তারাও লাভবান হতে পারে। আরেক পাঠক হাসান লিখেছেন- বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে কিন্তু হাসিনা ধরলে ছাড়ে না বাবু সুরঞ্জিতের কথার সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে। মোহাম্মদ লিখেছেন- পরের লক্ষ্য হতে পারে আন্দালিব রহমান বা গোলাম মাওলা রনির মত যে কেউ। সাবধান ! সাজ্জাদ লিখেছেন- কেউ ‘নাটক’ সাজিয়ে থাকলে ইলিয়াস খুঁজে বের করে নাটক প্রমাণ করতে হবে সরকারকেই। এই দায়িত্ব সরকারের। রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। আরেক পাঠক মামুন মন্তব্য করেছেন- সরকারের প্রধান কাজ জীবিত ইলিয়াস আলীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। ইলিয়াস আলী জাতীয় নেতায় পরিনত হচ্ছেন দেখে হিংসার শিকার হলেন বলে অনেকেই মনে করে। তার অবুঝ সন্তানদের জন্য হলেও ইলিয়াস আলীকে জীবিত ফিরত দিন। প্লিজ প্লিজ প্লিজ। আরেক পাঠক হাবিব চৌধুরী লিখেছেন- সরকারকে অনুরোধ করা যাচ্ছে যত দ্রুত এর সমাধান করবেন তত মঙ্গল। দয়া করে পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টোর শাসন কালের কথা স্মরণ করুন। পরবর্তিতে ভুট্টোর বিরুদ্বে কুকর্ম করা এজেন্সী গুলি সাক্ষী দিয়ে ছিল। হেলাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে লিখেছেন- প্রধানমন্ত্রীর কথা যদি সত্য হয় তাহলে কি গত সরকারের আমলে পল্টনে যে বোমা হামলা হল ঐ হামলাটা আওয়ামিলীগ নিজের থেকে করেছিল? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই প্রশ্নের এবং এই ঘটনার জবাব কি? | |
« শান্তিরক্ষা মিশনে বছরে আয় আড়াই হাজার কোটি টাকা (পূর্বের সংবাদ)
(পরের সংবাদ) ইয়াহুর অপ্রিয় দশের সেরা মমতা ব্যানার্জী »