Main Menu

শান্তিরক্ষা মিশনে বছরে আয় আড়াই হাজার কোটি টাকা

+100%-
নিউ ইয়র্ক, ২৬ এপ্রিল: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সংখ্যক সেনাসদস্য অংশগ্রহণকারী দেশ। বিশ্বে ৬৫টি মিশনে প্রায় এক লাখ শান্তিরক্ষীর মধ্যে বাংলাদেশের সৈন্যসংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। ৪৫টি মিশনে অংশগ্রহণকারী প্রতি ১০ জনে বাংলাদেশের একজন সৈনিক সক্রিয়। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের আয় গত তিন বছরে ৯১৭ মিলিয়ন ডলার বা সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পর সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ সেকেন্ড কমিটি (অর্থনীতি বিষয়ক) ও বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জন্য গঠিত ‘পিস বিল্ডিং কমিশন’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাংলাদেশ সিকি শতক পরিমাণ বেশি কমিটি ও সংস্থার সক্রিয় দায়িত্ব পালন করছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ৬৫টি কমিটির কো-চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে সক্রিয় রয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশের নারী উন্নয়ন, তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতি, আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সরকারের বিপুল সাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর ‘রোল মডেল’ হিসেবে কাজ করছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন মিশন আয়োজিত এক নৈশভোজের প্রারম্ভিক বক্তব্যে এসব তথ্য দেন। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় মিশন মিলনায়তনের প্রেস উইংয়ে এই নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন নৈশভোজের শুরুতে শেখ হাসিনা সরকারের বর্তমান শাসনকালে জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কর্মতৎপরতার বিস্তারিত তথ্যচিত্র তুলে ধরেন। এতে সাংবাদিকদের কাছে দেশ, সরকার ও জনমানুষের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন মিশনের মিনিস্টার (কালচারাল) অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ। স্বাগত বক্তৃতা দেন মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মিশনের প্রথম সচিব (প্রেস) মামুন-অর-রশিদ। নিউইয়র্কে কর্মরত বিভিন্ন বাংলাপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক ও মিশনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারিরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
মিশনের কর্মতৎপরতা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় বিশেষভাবে স্থান পায়- জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বিশেষ তৎপরতায় জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি-মুন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে উপস্থাপনের কারণেই বাংলাদেশ গত দু’বছর পরপর দু’টি এওয়ার্ড (এমডিজি এওয়ার্ড ও সাউথ-সাউথ পুরস্কার) লাভ করে। মিশনের বিশেষ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের বিচক্ষণ নেতৃত্ব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচীতে সভাপতিত্বসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশী সৈনিকদের কিভাবে প্রস্ত্তত করা হয় সে বিষয়ের ওপর খুব শিগগিরই জাতিসংঘ সদর দফতর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করতে একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে যাচ্ছে।
মূল বক্তব্যে ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন আরো বলেন, “২০০১-২০০৪ পর্যন্ত চার বছরে ১৮ হাজার ৯৭৭ জন সেনাসদস্য শান্তি মিশনে অংশ নেয়। ২০০৯ থেকে ২০১২ এই সাড়ে তিন বছরে ৪২ হাজার ২৪৯ জন শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয় যা পূর্ববর্তী চার বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।”
উল্লেখ্য, এই সময়েই সর্বপ্রথম বাংলাদেশী নারী সৈনিক ও পুলিশ শান্তি মিশনে অংশ নেয়। এদের সংখ্যা ৫০০’র কম নয়। ২০০১-২০০৪ বছরে মাত্র ৪৯১ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে ছিল। বর্তমানে তা ১৫ গুণ বেড়ে সাত হাজার ৪০০ জনে উন্নীত হয়েছে। রাষ্ট্রদূত মনে করেন আরো অধিক নারী সেনা ও পুলিশ সদস্য সরকার প্রেরণ করলে শান্তিরক্ষা মিশনে ঢুকাতে পারবেন।
তিনি বলেন, “নানারকম প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ব দরবারে রোল মডেল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাংলাদেশ বিগত বছরগুলোতে জিডিপি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। নারী উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান, বেকারত্ব নিরসন, সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির প্রসারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।”
অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের কাছে প্রত্যাশার কথা বলতে গিয়ে বলেন, “একজন সাংবাদিক তার কলম রক্তে ডোবাবেন, নাকি কালিতে, নাকি পানিতে ডোবাবেন, সে দায়ভার একান্তই তার নিজের। সাংবাদিক হিসেবে সবার কলম বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের কথা নির্ভয় চিত্তে বলুক, পথ দেখাক, জাগরণ তৈরি করুক সেটাই আমাদের কামনা। সংবাদপত্রে লেখা একটি শব্দ যে কারো সাজানো জীবন তছনছ করে দিতে পারে, আবার একটি শব্দই একজন মানুষকে নতুন করে বেঁচে থাকতে উজ্জীবিত করতে পারে, পথ দেখাতে পারে। তাই বলব সাংবাদিকদের কলম আমাদের অর্জনের কথা বলুক। সমালোচনাও করুক, তবে তা যেন হয় বস্ত্তনিষ্ঠ। বস্ত্তনিষ্ঠতা মানুষের কাছে একজন সাংবাদিকের গ্রহণযোগ্যতাই বাড়িয়ে তুলবে। সামগ্রিকভাবে গড়ে তুলবে রুচিবোধ সমৃদ্ধ ও দায়িত্বশীল সমাজ-রাষ্ট্র।”






Shares