“সেল্ফিবাজি আর ছেলেমেয়ে অবাধে চলাচল এর একটা মাধ্যম এই শহরের বেশির ভাগ সংগঠন”
মনিরুজ্জামান পলাশ : খুব বেশিদিন নয়, ফেসবুকের পাতায় মেমোরি থেকে এখনো সেই দিনগুলোর কথা জানান দেয় যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মানেই যেন নিত্যনতুন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন। এই সংগঠন, সেই সংগঠন, এ যেন সংগঠনের শহর। তাদের উদ্যোগগুলোও ছিল চমৎকার। তৎকালীন পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কমিউনিটি পুলিশিং কে চাঙ্গা করতে এবং তরুণ সমাজের বখে যাওয়া রোধ করতে সংগঠনগুলোকে নানা ধরনের সহযোগিতা করতেন। বলা যায়, তার প্রেষণার কারণেই রাতারাতি সংগঠনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সকালে এক সংগঠন তো রাতে সে সংগঠন ভাগ হয়ে সংখ্যা হয়ে যায় দুই।
এ ভাবে বাড়তে বাড়তে সংগঠনের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দেড় শতাধিক। তবে সংগঠনগুলোর কাজ সবসময়ই ছিল আর্থিক বিষয়াবলীকে কেন্দ্র করে। এমনও দেখা যায় যে, সংগঠনের নাম করে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা দিয়ে ভ্রমণ করা, বাসার ফার্নিচার কেনা, দামি ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনা হয়ে দাঁড়ায় নিয়মিত ঘটনা। এসব অর্থ আত্মসাতের বিষয়কে কেন্দ্র করে তরুণদের মাঝে বাদানুবাদেরও সৃষ্টি হতো। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সেই বাদানুবাদ আবার মীমাংসা ও করা হতো। এভাবেই চলতে থাকা সংগঠনগুলোর কার্যক্রম ছিল অসহায় দুস্থদের সহায়তা করা, পথশিশুদের নিয়ে, কেউবা আবার রাঙ্গিয়ে দিতো সরকারি বরাদ্দ থাকা স্কুলের দেয়াল। পুলিশের সেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বদলির পর রাতারাতি পাল্টে যায় পরিস্থিতি। সেই সংগঠনগুলো এখন অনেকটাই ঘুমন্ত। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে এক দুটি সংগঠন। তারা পুলিশের সেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসার আগে যেমনভাবে তাদের কার্যক্রম চালাতো, তিনি চলে যাওয়ার পরও একই ভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এসব সংগঠনের কার্যক্রম কতটা নাগরিক বান্ধব? শহরের নানা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় এসব সংগঠনের ভূমিকা কতটুকু? যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর সমস্যার কথা বলতে হয়, তাহলে প্রথমেই চলে আসে ট্রেনের দুর্ভোগের বিষয়টি। হাতেগোনা দু’একটি বাদে আজ পর্যন্ত কোন নাগরিক/সামাজিক সংগঠন এই বিষয়টি নিয়ে কোথাও একটি মানববন্ধন পর্যন্ত করেনি। শহরের যানজট সমস্যা, বিনোদন কেন্দ্রের অভাব, শত বছরের পুরাতন প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় নামমাত্র সুযোগ সুবিধাও না থাকা, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব, ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পুকুর ভরাট, স্বাস্থ্য খাতের অরাজকতাসহ নানাবিধ সমস্যা রয়ে গেছে সংগঠনগুলোর আওতার বাইরে। সামাজিক সংগঠন হিসেবে এসবের দায় কতটুকু এড়াতে পারে সংগঠনগুলো?
এবার আসুন জেনে নিই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ কি ভাবছেন এসব সংগঠন নিয়ে?
ব্রাহ্মণবাড়িয়াটোয়েন্টিফোরডটকম এর পেইজে “ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কাজ করে। তাদের কাজ কতটুকু স্বচ্ছ এবং প্রয়োজনীয় বলে আপনি মনে করেন?” প্রশ্নে মতামত চাওয়া হয়। কয়েকটি উত্তর নিচে দেয়া হল।
Alam Kibria Pasha লিখেছেন, অধিকাংশ সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য সমাজ সেবা নয়! একই সেবা অন্য সংগঠন করলে সেটা হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। কারো মাথায় এইটা আসে না আমাদের কাজ সমাজ সেবা করা নিজের সংগঠন কে ব্যান্ডিং করা নয়। যে যার জায়গা থেকে যা কিছু ই করছে সমাজসেবা ই তো করছে! কিছু সংগঠন এইটা মানতে রাজি না। তারা ছাড়া অন্য কেউ সমাজ সেবা করতে পারবে না। আর পারলেও যেন সেটা তাদের আগেই যেন প্রচার না হয়। এতে তাদের সংগঠন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে।
Md Rakibul Islam লিখেছেন, সেল্ফি বাজি আর ছেলেমেয়ে অবাধে চলাচল এর একটা মাধ্যম এই শহরের বেশির ভাগ সংগঠন। গ্রামের মেয়েরা মেস বা হোস্টেল আসে পড়াশোনা করতে এগুলা না করে সংগঠন এর সাথে জড়িয়ে পড়ে।
Jubayer Rahman Auntar লিখেছেন, সংগঠন বেশি কিন্তু সে অনুপাতে কাজ কম সেলফি বেশি?
Md Mafozur Rahman লিখেছেন, প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় সংগঠনের সংখ্যাই বেশি। যারা আসলে নাম-সর্বস্ব বা বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফান্ড থেকে খয়রাত পাওয়ার আশায় এসব সংগঠন গড়ে তোলে। এক প্রকার ধান্ধা বলা যায়।
Rashadul Islam Munna লিখেছেন, সবার বললে ভুল হবে,কিন্তু বেশিরভাগ সংগঠনের কাজই প্রশ্নবিদ্ধ।কিছু সংগঠন এমনো আছে যারা কোন নিদিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে থাকে।প্রশাসনের কর্মকর্তাদেত সাথে ভাল সম্পর্ক রেখে নিজেদের কাজ হাসিল করে নেয়।আর ডোনেশনের টাকা ভালাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে সম্যসার কথা মানুষ অনেক আগেই জেনেছে।
Biddut Munna লিখেছেন, সংগঠনের নামে তারা নিজেদের কিছু স্বার্থ আদায় করে থাকে। তাদের অতীত কেউই জানেনা তারা কি করতো। এতে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বাদ দিয়ে হোটেল রেস্টুরেন্টে বিনোদন করে থাকে।