পেসার ক্রিস মরিসের উপলব্ধি
বাংলাদেশ সফর ছিল দুঃস্বপ্নের
ক্রিকেট দু’বার জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার ক্রিস মরিসের। প্রথমবার, ক্রিকেট তাকে বানিয়েছিল মিলিওনেয়ার। দ্বিতীয়বার ক্রিকেটই তার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। এমন কিছু যা সত্যিকারার্থে টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট মিডিয়াম পেসারকে ৫.৫ মিলিয়ন রুপিতে (৬ লাখ ২৫ হাজার ডলার প্রায়) কিনে নিয়েছিল আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি চেন্নাই সুপাার কিংস। এতগুলো টাকা একসাথে পেয়ে ক্রিস মরিস অনেক কাজ করে ফেলেছিলেন। মা-বাবার জন্য বাড়ি তৈরি করেছেন। নিজে বিয়ে করেছেন। জীবনটাকে গুছিয়ে নেয়ার কাজটা শুরু করে দিয়েছিলেন তখন। একই সাথে সংগ্রাম করে যাচ্ছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে নিয়মিত হতে।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সঙ্গী হতে পেরেছিলেন অবশেষে। সম্প্রতি শেষ হওয়া বাংলাদেশ সফর যেন ক্রিস মরিসের জীবনটাই ওলট-পালট করে দিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটি খেলেছিলেন তিনি। প্রথম ম্যাচে ২ উইকেট নিতে পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে গিয়ে গ্রোইন ইনজুরিতে পড়েন মরিস। একই সাথে বল হাতে দিয়েছিলেন নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয়।
শেষ পর্যন্ত গ্রোইন ইনজুরির কারণে সিরিজের শেষ ওয়ানডে এবং টেস্ট না খেলেই ফিরতে হয়েছিল মরিসকে। শুধু তাই নয়, ওই সময় তার দাদাও মারা গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে কেমন যেন দুর্বিসহ জীবন কাটানো শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সফর থেকে।
এ কারণেই বাংলাদেশ সফরকে দুঃস্বপ্নময় বলেই অভিহিত করলেন মরিস। জোহানেসবার্গে এক বোলিং ক্যাম্পে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যিই, বাংলাদেশ সফর ছিল কঠিন এক সফর। বাংলাদেশে একটা বাজে সফর শেষ করে আমি ফিরেছি। যেটাকে আমি সারা জীবন আর মনে করতে চাইব না। এমনকি আগে থেকেই চিন্তা করতে পারতাম না যে, সেখানে যাব। তবে এটা ঠিক, জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগটাও আমি নষ্ট করতে চাই না। এ কারণে মানসিকভাবেও আমি ছিলাম কিছুটা অস্বস্তিতে।’
বাংলাদেশ সফরের পর ক্রিকেটের প্রতিই অনীহা চলে আসছিল যেন মরিসের। তিনি বলেন, ‘আবারও ক্রিকেট মাঠে ফেরার জন্য আমাকে কিছু কারণ খুঁজতে হয়েছে। যে কারণে আমি কিছুদিন ক্রিকেট থেকেই দুরে সরে ছিলাম। জঙ্গলে গিয়েছি, শিকার করেছি। গলফ খেলে সময় কাটিয়েছি। এসব করার উদ্দেশ্য ছিল ক্রিকেটের প্রতি আমার আবার আকর্ষণ ফিরিয়ে আনা। এগুলো শুনতে খুব ভীতিপ্রদ শোনাবে। বিশেষ করে আমার মতো ক্রিকেটারের মুখ থেকে। তবুও এসব কাজ করেছি, কারণ আমার মাথার মধ্যে অনেক দুর্বোধ্য বোঝা চেপে গিয়েছিল। যেগুলো থেকে আমি বের হয়ে আসার পথ খুঁজছিলাম। ভাগ্য ভালো যে, আবারও ক্রিকেটের প্রতি মায়া জন্মেছে আমার।’
নিজেকে আবারও ফিরে পেতে চান ক্রিস মরিস এবং আশা করছেন, বাংলাদেশ বিপর্যয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকাও সঠিক পথে ফিরে আসবে। তিনি বলেন, ‘যখন তরুণ ক্রিকেটার ছিলাম, তখন স্বপ্ন দেখতাম জাতীয় দলের হয়ে খেলবো। এ কারণেই এবং এ স্বপ্ন নিয়ে তখন ক্রিকেট খেলতাম। কিন্তু যখন একটা বাজে সফর সব কিছু ওলট-পালট করে দিচ্ছিল, তখন ভাবছি, সম্ভবত দেশের হয়ে খেলার যোগ্য নই আমি। আমার জীবনে কয়েকটি দুঃস্বপ্নের দিন অতিবাহিত হয়েছে। তবে এটা ঠিক, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপালেই সেটা হয়ে ওঠে আমাদের জন্য বড় ধরনের অনুপ্রেরণা।’
২৮ বছর বয়সী ক্রিস মরিস এ পর্যন্ত খেলেছেন ৭টি ওয়ানডে। উইকেট নিয়েছেন ৮টি। টি২০ খেলেছেন ২টি, উইকেটও নিয়েছেন ২টি।