Main Menu

বিশ্বের সাহায্যের আশায় বাংলাদেশ বসে নেই: প্রধানমন্ত্রী

+100%-

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ যে ‘হাত গুটিয়ে’ বসে নেই, তা বিশ্বকে জানিয়ে নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) নির্ধারণ এবং প্যারিস সম্মেলনে জলবায়ু চুক্তি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে ‘উল্লেখযোগ্য সাফল্য’ পেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈরী আবহওয়া কৃষি, শিল্প ও সামাজিক কাঠামোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এর ফলে কোটি কোটি মানুষ পরিবেশ-উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে; যদিও গ্রিন-হাউস গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণের কথা বিবেচনা করলে জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের তেমন কোনো দায় নেই।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে গবেষণার বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার নিবন্ধে লিখেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর এক মিটার বেড়ে গেলে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়বে। তকে ৩ কোটির বেশি মানুষ ঘর হারাবে, নগরমুখী অভিবাসন হয়ে উঠবে অবশ্যম্ভাবী। মানুষের স্বাভাবি জীবন ও জীবিকা, জীববৈচিত্র্য, খাদ্য, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ভৌত অবকাঠামোর ওপর এর প্রভাব হবে মারাত্মক।
দ্রুত উদ্যেগী না হলে’ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে বিশ্বকে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
আর এ কারণে আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) নির্ধারণ এবং প্যারিসে জলবায়ু চুক্তি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তবে বিশ্ব এসে বাংলাদেশকে রক্ষা করবে এই আশায় আমরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। সম্পদ ও প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার পরও নিজেদের ভবিষ্যত রক্ষায় আমরা লড়াই করে যাচ্ছি।”
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় আগামী ২৫ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের জন্য নতুন লক্ষ্য ঠিক করতে বসবেন, যাকে বলা হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি)।
জাতিসংঘ অধিবেশন সামনে রেখে এসডিজির লক্ষ্যগুলো নিয়ে ধারাবাহিক নিবন্ধ প্রকাশ করছে হাফিংটন পোস্ট, যার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই লেখাটি এসেছে।
শেখ হাসিনা তার নিবন্ধের শুরুতেই লিখেছেন, এসডিজির যে লক্ষ্যটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে, সেটিই বাংলাদেশের জন্য ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’।

আর এই লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে সংবিধান সংশোধন, নতুন আইন প্রণয়ন ও সংশোধনসহ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে অর্থ বরাদ্দ, পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং দূষণ প্রতিরোধে সরকারের নেওয়ার বিভিন্ন উদ্যোগের বিবরণ প্রধানমন্ত্রীর নিবন্ধে উঠে এসেছে।
এসব উদ্যোগের পরও আমাদের এই বদ্বীপে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছর আমাদের দেশে স্বাভাবিক গড়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, বিস্তির্ণ এলাকা তাতে প্লাবিত হয়েছে, শস্যের ক্ষতি হয়েছে।”
বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের দুই থেকে তিন শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নষ্ট হতে পারে বলেও গবেষণার বরাত দিয়ে জানান শেখ হাসিনা।
এর মোকাবিলা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণে আমরা চাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এসডিজি ও জলবায়ু চুক্তির মতো উদ্যোগগুলোতে আমাদের মতো ঝুঁকির মুখে থাকা দেশের পাশে দাঁড়াক,” লিখেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার নিবন্ধে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে হলে খাপ খাইয়ে নেওয়া ও প্রশমন- এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। প্যারিসে জলবায়ু আলোচনায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি আসবে, সেগুলো হতে হবে পরিমাপ ও যাচাইযোগ্য। কার্বন বাজেটিং ও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার পথ খুঁজতে বিশ্বকে নজর দিতে হবে। খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য অর্থ বরাদ্দও জরুরি।
জলবায়ু পরিবর্তনে টিকে থাকার যুদ্ধে এ পর্যন্ত অর্জিত অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ অন্য সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে প্রস্তুত বলেও বিশ্বকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।



« (পূর্বের সংবাদ)



Shares