Main Menu

স্পেনে নেয়ার নামে প্রতারনা,সৌদির মরুভূমিতে ফেলে রাখার অভিযোগ

[Web-Dorado_Zoom]

রুবেল আহমেদ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কুটি ইউনিয়নের বিলঘর গ্রামে একটা যুবককে স্পেনে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবে নিয়ে মরুভূমিতে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আদম ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন ও তার আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন প্রতারণার বিষয়টি জানতে চাইলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর । মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেতে এবং সন্তান ফিরে পেতে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিলঘর জারু মার্কেট এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে গ্রামের সাহেব সর্দারগনসহ গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন । সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আইয়ুব সরকার।
আইয়ুব সরকার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে বিলঘর গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে তারেক মিয়াকে ইউরোপে পাঠানোর জন্য বিল্লাল হোসেনের কাছে ২২ লাখ টাকা দাবী করেন। সন্তানের সুখের কথা ভেবে মধ্যবিত্ত পরিবারের জামাল মিয়া কষ্ট করে জোগার করে দেন ২২ লাখ টাকা । টাকা পেয়ে স্পেনে নেয়ার জন্য ভিসা দেন আদম ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়া। স্পেনে যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে প্রবেশের পরে সেখানে ধরা পরে এটা নকল ভিসা। একথা শুনে মর্মাহত হয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন জামাল মিয়া। পরে বিল্লাল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে বিল্লাল জানায় সরকার বদল হওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছে। সব ঠিক হয়ে যাবে। অল্প দিনের মধ্যেই আবার নেয়ার লাইন করার কথা বলেন। কিছুদিন পর বিল্লাল হোসেন তারেককে স্পেন নেয়ার কথা বলে পাঠান মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। সৌদি আরবে নেয়ার পরে দুর্গম মরুভূমির কোন এক এলাকায় ফেলে রাখায় দীর্ঘদিন জামাল মিয়া ছেলের কোনো খোঁজখবর না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় পরিবার। কয়েক মাস পর তারেক অপর এক বাঙালির মোবাইল থেকে বাড়িতে জানায় তাকে ইউরোপের দেশ স্পেন না পাঠিয়ে মধ্যাপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের দুর্গম মরুভূমির প্রত্যন্ত এলাকায় ফেলে রাখা হয়। বিল্লাল হোসেনের আদম ব্যবসার প্রতিনিধি হিসেবে এলাকায় কাজ করেন একই গ্রামের তার ফুপা মান্নান মিয়া। মান্নান মিয়ার কাছে টাকা জমা দিতে হয়। মান্নান মিয়া টাকা বুঝে পেয়ে বিল্লাল হোসেনকে জানালে বিল্লাল হোসেন শুরু করে আদম পাচারের প্রক্রিয়া। জামাল মিয়ার টাকাও বিল্লাল হোসেনের কথামতো মান্নান মিয়ার কাছেই জমা দেয়া হয়েছিল। সেই সুবাদে জামাল মিয়ার ছেলে তারেককে স্পেন পাঠানোর কথা বলে সৌদি আরবে কেন পাঠানো হলো জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে মান্নান মিয়া তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। খবর পেয়ে বিল্লাল হোসেন স্পেনে পাঠানোর বাহানায় আরও ৫ লাখ টাকা দাবী করে। তারেক বাড়িতে জানালে জামাল মিয়া সন্তানের মঙল চিন্তা করে ধার দেনা করে আরও ৫ লাখ টাকা জোগার করে মান্নান মিয়ার কাছে জমা দেয়। ছেলেকে স্পেন পাঠানোর জন্য জামাল মিয়ার কাছ থেকে মোট ২৭ লাখ হাতিয়ে নেয় প্রতারক আদম ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন। ২৭ লাখ টাকা নেয়ার পরে আর তার সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তারেককে এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে ফেলে রাখা হয়েছে। বিষয়টি জানতে চাইলে বিল্লাল হোসেন এর ফুপা মান্নান মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগী জামাল মিয়া, আইয়ুব সরকারসহ একাধিক পরিবারের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ভুক্তভোগী জামাল মিয়া ২৭ লাখ টাকা ও সন্তানকে ফেরত পেতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ আদালতে মানব পাচারের একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম ভূইয়া, মো. কবির হোসেন, আবু জামাল, হুমায়ুন কবির, মজিবুর রহমান জাকিরসহ কয়েক শতাধিক এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, আবদুল মান্নান ও তার ভাইয়েরা নিজেরাই নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে সাজানো মামলা করছে। প্রকৃত ভুক্তভোগীদের হয়রানি না করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এসময় বক্তারা আরও বলেন, সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতারণা ও মানবপাচারের মতো অপরাধ করে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুল মান্নান এর আপন ভাই সুরুজ মিয়া বলেন, তার ভাই নিজেরাই বাড়ি-ঘর ভাংচুর করে নিজেরাই মামলা দায়ের করেছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে এলাকাবাসী বিলঘর জারু মার্কেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মার্কেটে এসে শেষ হয়। সেখানে বিল্লাল হোসেন ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
বিল্লাল হোসেন বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করায় তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মান্নান মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে কসবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনাটি আমাদের কানে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে যা পাওয়া যাবে তার ভিত্তিতেই পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।






Shares