Main Menu

ট্রানজিট : ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন শুরু ।।সড়ক সংস্কার করে দেবে বাংলাদেশ।অর্থ দেবে না ভারত

+100%-
বিশেষ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহন শুরু করেছে ভারত। তিন হাজার টন খাদ্যশস্য বোঝাই বার্জ গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দর থেকে আশুগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে। আগামী তিনমাসে ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য যাবে ত্রিপুরায়। আর ছয় মাসের মধ্যে ৩০ হাজার টন পণ্য যাবে আসামে। এতে ভারতের খরচ বাঁচবে ১শ কোটি রুপি (১৬৩ কোটি টাকা)। আর এই পণ্য পরিবহনের জন্য ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার করে দেবে বাংলাদেশ। বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারতের কাছে কিছুই দাবি করবে না। কোন অর্থ দাবি না করার জন্য গত মাসে ভারতের স্বার্থের তদারকি করেন এমন একজন উপদেষ্টা নৌ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের নৌ ট্রানজিটের স্বার্থে নিজ ব্যয়ে আশুগঞ্জে বন্দর নির্মাণ করে দেবে বাংলাদেশ। বছরে ৬০ লাখ টন পণ্য পরিবহনের উপযোগী এই অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার পোর্ট নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় ৪শ’ কোটি টাকা। শুরুতে পুরো অর্থ অনুদান হিসেবে দেয়ার কথা বললেও তা কমিয়ে ৬০ কোটিতে নামিয়ে আনে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটাও পাচ্ছেনা বাংলাদেশ। এখন প্রস্তাব রয়েছে, ২শ’ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেয়া হবে। তবে তাও অনেক জটিল শর্তে। অর্থাৎ, ভারতের স্বার্থে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ৪৬১ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
শুক্রবার কলকাতায় বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের এক আলোচনা সভায় ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌপথ কর্তৃপক্ষের (আইডব্লিউএআই) চেয়ারম্যান বিশ্বপতি ত্রিবেদি বলেন, এটা আমাদের দুদেশের জন্যই সমান সুযোগ। আমরা আমাদের দূরবর্তী উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে খাদ্যশস্য পরিবহনের খরচ খুব কমাতে পারব। অন্যদিকে বাংলাদেশের পরিবহন খাতও লাভবান হবে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী তারা আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে পণ্য নেয়ার জন্য পরিবহন জোগান দেবে। তিনি জানান, কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে ত্রিপুরায় ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। ত্রিবেদি বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আমরা এই পথ দিয়ে ৩০ হাজার টন পর্যন্ত খাদ্যশস্য পাঠাতে চাই। এর ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে খাদ্যশস্যের দাম অনেক কমে যাবে। ত্রিপুরা সরকারের কর্মকর্তা সমরজিৎ ভৌমিক পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশের কাছ থেকে এই অনুমতি পেতে প্রায় তিন মাস সময় লেগেছে। সমরজিৎ বলেন, বাংলাদেশের কর্মকর্তারা খুবই বিবেচক। তারা ইতোমধ্যে এই পথে (চট্টগ্রাম-আশুগঞ্জ) আমাদের পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ত্রিপুরায় ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে। তারপর তারা আবারো খুবই উদারতা দেখিয়েছে। ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য পরিবহনের এই অনুমতি এককালীন। তবে ত্রিপুরার কর্মকর্তারা আশা করছেন, বাংলাদেশে আবারো খাদ্যশস্য পরিবহনের সুযোগ দেবে।
সড়ক বিভাগের আন্তর্জাতিক সংযোগ শাখার তথ্যমতে, ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনে প্রয়োজনীয় সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বাংলাদেশের খরচ হবে ৬১ কোটি টাকা। এই টাকা ভারতের কাছে চাবে কিনা সরকার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে গত মাসে নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা এই অর্থ ভারতের কাছে দাবি না করার জন্য বলেছেন।
পরিবহন আইন ও আন্তর্জাতিক সংযোগ শাখার তথ্যমতে, পণ্য পরিবহনের আগেই সুলতানপুর-আশুগঞ্জ স্থলবন্দর সড়কে সংস্কারে খরচ করতে হবে ৫ কোটি টাকা। সড়াইল বিশ্বরোড থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরের সংযোগ সড়ক সম্প্রসারণে ব্যয় হবে ৩০ কোটি টাকা। ত্রিপুরায় ১০ হাজার টন পণ্য পরিবহনের পর আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কের সংস্কারে খরচ হবে ২৬ কোটি টাকা।
জানা গেছে, ডাব্লিউএপিসিওএস নামক একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার বন্দর নির্মাণের সম্ভ্যাব্যতা জরিপ করছে। মার্চে শুরু হওয়া এই জরিপ শেষ হবে নভেম্বরে। মাল্টিপারপাস জেটি, কনটেইনার ফ্রেইট স্টেশন, টার্মিনাল ভবন, ইয়ার্ড, কাস্টমস অফিস, গেইন্ট্রি ক্রেইন সহ প্রয়োজনীয় সুবিধা এই বন্ধরে থাকবে। ৬০ লাথ টস পণ্য পরিবহণ উপযোগী এই বন্দর নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় ৪শ’ কোটি টাকা। পূর্বে এই ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৪৫ কোটি টাকা। এই বন্দর নির্মাণে সময় ধরা হয়েছে তিন বছর। ভারত যত দ্রুত সম্ভব এই বন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু করতে বলেছে বাংলাদেশকে।
জানা গেছে, বন্দর চালু হওয়ার প্রথম বছরেই ১০ লাখ টন পণ্য পরিবহণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা ৬০ লাখ টন হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ১০ লাখ টন পণ্য পরিবহণে ভারতের সাশ্রয় হবে ৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। অথচ আশুগঞ্জ বন্দর নির্মাণের ব্যয় বহনে সম্মত নয় ভারত। আশুগঞ্জ বন্দর নির্মাণে অনুদান দেয়ার জন্য ভারতকে প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। তবে এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো এর উত্তর মেলেনি।
আখাউড়া থেকে ভারতীয় সীমান্ত পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। এই অর্থও বাংলাদেশই বহন করছে। আশুগঞ্জ বন্দরকে সারা বছর ব্যবহার উপযোগী রাখতে ৮৬৬ কিলোমিটার নৌ পথের প্রায় তিন কোটি কিউসেক মিটার মাটি খনন করতে হবে। ভারতের এক বিলিয়ন ডলার ঋণের আওতায় এই প্রকল্প নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ভারতের কাছে পৃথক ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। তবে আশ্বাস দিলেও বাংলাদেশকে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।






Shares