উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবায় অবহেলা
টাকা না দেওয়ায় চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত স্কুল ছাত্রী!!
এস.এম.বদিউল আশরাফ (মুরাদ মৃধা):: ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক সেবিকার বিরুদ্ধে টাকা না দেওয়ায় হোসনা আক্তার নামে এক জেএসসি পরীক্ষার্থীর চিকিৎসা সেবায় অবহেলা ও ভুল চিকিৎসা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেবিকার ভুলের কারনে হোসনা এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। গত মঙ্গলবার হোসনাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন হোসনার অবস্থা খুব খারাপ দ্রুত ড শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মূমূর্ষ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। হোসনা নাসিরনগর উপজেলার ধনকুড়া গ্রামের কৃষক সোহরাব মিয়ার মেয়ে। সে নাসিরনগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। এদিকে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় নাসিরনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: আলমগীর মিয়া ব্যক্তিগত ভাবে ২ হাজার টাকা দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাঠান। বর্তমানে হোসনার চিকিৎসার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন পরিবারের লোকজন।
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার দুপুরে সোহরাব মিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ডাক্তারের অবহেলা ও সেবিকা নয়ন মনির ভুল চিকিৎসার শিকার ওই ছাত্রীর পরিবার ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে উপজেলা সদরের ধনকুড়া গ্রামে বাড়ির পাশের একটি ডোবায় গোসল করতে যায় হোসনা। গোসল করার সময় পানিতে লাফ দিলে বাঁশের কঞ্চির আঘাতে মেয়েটির স্পর্শকাতর (গোপনাঙ্গে) জায়গার একটি বড় অংশ কেটে যায়। তার চিৎকরে মা হামিদা বেগম তাকে উদ্ধার করে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক রনি রায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে ক্ষত অংশে সেলাইয়ের করার পরামর্শ দেন। পরিাবের লোকজন তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যান। এসময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা সেবিকা নয়ন মনিকে ডাক দেন। নয়ন মনি ক্ষত অংশ সেলাই বাবদ হোসনার বাব-মার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়া হোসনাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রায় ২ ঘন্টা ফেলে রাখেন। পরে সোহরাব মিয়া ধার করে এনে ৭০০টাকা দিয়ে নয়ন মনি হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করলে হোসনার চিকিৎসা শুরু করে। তার ক্ষতস্থানে ছয়টি সেলাই দিয়ে হোসন কে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন ওই সেবিকা।
ওই ছাত্রীর মা হামিদা বেগম বলেন, ভাল করে সেলাই না করায় ওই কাটা অংশ দিয়ে বাতাস এবং মলমূত্র বের হচ্ছিল। পরে শনিবার হোসনাকে অচেতন অবস্থায় পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাতে চাইলে নার্স নয়ন মনি দুই হাজার টাকা দাবি করে বলে যদি প্রথমই ১ হাজার টাকা দিতেন তবে আজকে তোমার মেয়ের এই অবস্থা হতনা পরে ডাক্তার রনি রায়ের অনুরোধে হোসনাকে ভর্তি পর বিনা চিকিৎসায় তিনদিন ফেলে রাখেন।
চোখের সামনে মেয়ের করুন অবস্থা দেখে কান্না ভেঙ্গে পড়েন হোসনার কৃষক বাবা। আবারো ডাক্তার রনি রায়ের অনুরোধে সেবিকা নয়ন মনি ওই কাটা অংশে পুনরায় সেলাই করে হোসনাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক কৌশিক আহমেদ বলেন, আঘাতের ধরণ অনুযায়ী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু তার চিকিৎসায় ভুল ও অবহেলা হয়েছে। তাকে হিপ-ভাতের মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে হবে। এটি খুব কষ্টদায়ক এবং ব্যবহুল। মোটামুটি সুস্থ হতে তার দুই/আড়াই মাস সময় লাগবে।
নাসিরনগর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবিকা নয়ন মনির সাথে যোগাযোগ করলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে ফোনর সংযোগটি বন্ধ করে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমেদ বলেন, ওই ছাত্রীর চিকিৎসার বিষয়ে ডাক্তার রনি রায়,উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের সামনে আমার অফিসে সেবিকাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলে রোগীর সাথে দুর্ব্যবহার ও টাকা আদায়ের ঘটনা স্বীকার করেছেন।
উল্লেখ্য নাসিরনগরের গত ৭ আগষ্ট সেবিকা নয়ন মনির অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। পরে কর্তৃপক্ষকে এবং নবজাতকের পরিবারকে ম্যানেজ করে সে যাত্রায় শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পায় নয়ন মনি।