বঙ্গভবন ও নাসিরনগরের প্রথম মন্ত্রী
বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠান শেষে অন্তরঙ্গ মহুর্তে মন্ত্রী এড: ছায়েদুল হক তার সহধর্মিনী, রাষ্ট্রপতি ও ডঃ আলমগীর কবির।
মোঃ আব্দুল হান্নান, নাসিরনগর থেকেঃ -বঙ্গভবন বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ রাজনীতি, অর্থনীতি ও ইতিহাস ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু। বি-বাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা একটি অবহেলিত জনপদের নাম। শিক্ষা, কৃষি, বিদ্যুৎ অর্থনৈতিক অবকাঠামো ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে ধাবিত হলেও রাজনৈতিক অবহেলা ছিল চোখে পড়ার মত। উপজেলাটির সীমানা ঘেষে যে কয়টি সংসদীয় আসন আছে সেখান থেকে আওয়ামী সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ নীতি নির্ধারকরা (কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আসন থেকে মরহুম জিল্লুর রহমান মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি, ইটনা-অষ্টগ্রাম থেকে মোঃ আব্দুল হামিদ স্পীকার ও রাষ্ট্রপতি, লাখাই-হবিগঞ্জ থেকে মরহুম ডঃ এ, এম, এস কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী, চুনারুঘাট-মাধবপুর থেকে জনাব মোস্তফা শহীদ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী) নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের বিগত সংসদ নির্বাচন যেমন ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভ করা সত্বেও নাসিরনগরের গণ মানুষের নেতা, সততার উদাহারণ সৃষ্টিকারী ও যোগ্যতার বিচারে অগ্রগন্য এডঃ ছায়েদুল হক বঞ্চিত হন মন্ত্রীসভার মত গুরুত্বপুর্ণ স্থান থেকে। যেখানে বসে তিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে বেশি উৎস্বর্গ করতে পারতেন। চাওয়া ও পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় না এনে তিনি ও তার এলাকার জনগন কখনো বিচ্ছুত হননি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা আওয়ামী রাজনীতি থেকে। যার সুষ্পষ্ট প্রতিফলন ২০১৪ সালের নির্বাচন।
বঙ্গভবণে শপথ অনুষ্টান থেকে ফিরে পত্রিকার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এভাবে নিজের মনের ভাব ব্যক্ত করেন ঢাকা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ মোঃ আলমগীর কবীর ।২০১৪ সনের নির্বাচনের ঠিক পরপরই আমি একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র থেকে জেনেছিলাম একটি সু-সংবাদের কথা। বিষয়টি থানা আওয়ামীলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এ, টি, এম মনিরুজ্জামান ও এম.পি সাহেবের ছেলে ডাঃ রায়হান এর সাথে শেয়ার করি। তারা বিষয়টিকে হালকাভাবে নিয়ে ১২ই জানুয়ারীর দিকে নজর রাখতে বললেন। তাদের হালকাভাবে নেয়ার যথেষ্ট কারণ আছে (১) ২০০৮ সনের মন্ত্রীসভায় অর্ন্তভুক্ত হয়েও ফাইনালী বাদ পড়া (২) পরবর্তীতে মন্ত্রীসভার সম্প্রসারণ কালে নাম নিশ্চিত হওয়ার পরও মন্ত্রীত্ব না পাওয়া। উল্লেখ্য যে, ২০০৮-২০১৩ সনের মন্ত্রীপরিষদ গঠন, সম্প্রসারণে অর্ন্তভুক্তি না হওয়ার ক্ষেত্রে নানাবিধ কারন, সমীকরন ও ষড়যন্ত্র ছিল যা পরবর্তী কোন লেখায় উল্লেখ করব। উপরোক্ত দুইজন বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখলেও আমি সেভাবে নেয়নি। উৎকণ্ঠা, চেষ্টা চালিয়ে যাই প্রাপ্ত তথ্যের নিশ্চয়তার জন্য।
১১ই জানুয়ারী ২০১৪, সারাদিন উৎকণ্ঠা, এদিক সেদিক টেলিফোন কিন্তু নির্ভরযোগ্য কোন খবর বের করতে পারলাম না। আবারও পুরুনো সুত্রের স্বরনাপন্ন হওয়া এবং একই রকম সু-সংবাদের বাতাস। ধৈর্য্যরে বাধ মানছে না… কয়েকবার মোবাইল ফোন রিলোড করলাম… অস্থিরতা লাগছে…। ইতিমধ্যে সন্ধ্যা থেকে ব্রেকিং নিউজে নানা জনের সম্ভাব্য নাম আসতে থাকে। অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়। রায়হানকে ফোন করলাম কিন্তু কোন পজেটিভ নিউজ দিতে পারল না। আবার ও এদিক সেদিক ফোন কিন্তু কোন নিউজ পাচ্ছিনা। মোটামোটি ৪৯ সদস্যের মধ্যে সম্ভাব্য ৩০-৩৫ জনের নাম টিভিতে চলে আসে। কিন্তু ছায়েদ চাচার নামটি দেখতে পাচ্ছিনা। লজ্জায় পুরাতন সুত্রকে আর ফোন করছি না। আবারও রায়হানকে ফোন… সে তখন বলল ক্যাপ্টেন তাজ (সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী), আব্বাকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং জানালো ২০০৮ সালেও এমনি ভাবে অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে সত্যি হয়নি। উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে গেল। সত্যিইত ফোন আসবে আগে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে তারপর অন্যরা অভিনন্দন জানাবে…। আবারও প্রশ্ন, উৎকণ্ঠা। এখানে উল্লেখ্য যে, সংসদ ভবনে যে নাম্বরটি অনেক দিন আগে জমা দিয়েছিলেন সেটা নাকি বন্ধ ছিল তাই ক্যাপ্টেন তাজকে নিউজটা চাচাকে জানাতে বললেন। সকল উৎকণ্ঠা কাটিয়ে ঐ রাতেই আমরা নিশ্চিত হলাম আমাদের প্রিয় মুখ বার বার নির্বাচিত এম,পি এডঃ ছায়েদুল হক হচ্ছেন নাসিরনগরের প্রথম মন্ত্রী যার মাধ্যমে পুর্ণ হলো চার দশকের (১৯৭৩-২০১৩) নাসিরনগরবাসীর একটি সুন্দর স্বপ্নের। সেই রাতেই চাচার সাথে ফোনে কথা হলো কিন্তু কথা ঠিক ভালো বুঝা যাচ্ছিল না। মনে হয় দীর্ঘ নির্বাচনী প্রচারনা ও ঠান্ডায় কণ্ঠ বসে গিয়েছিল, শুধু শুনলাম বাবা… বাবা আমার জন্য দোয়া করো যেন অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করতে পারি। রাতে ঘুমাতে পারলাম না। এদিক-সেদিক ফোন করা, পুরুনো সুত্রকে ধন্যবাদ দেয়া ইত্যাদি… এবং অপেক্ষার প্রহর কখন দেখা হবে নাসিরনগরের প্রথম মন্ত্রীর সাথে।
সকালে ফোন করলাম রায়হানকে এবং জিজ্ঞাস করলাম চাচা ঘুম থেকে উঠেছে কি না? আমি আসব কিছুক্ষণের মধ্যেই। আমি ফোন করার পরই রওয়ানা হলাম ন্যাম ফ্লাটের বাসার দিকে। পৌছে দেখলাম বি-বাড়িয়া জেলার নেত্রীবৃন্দ মেয়র হেলাল ভাইয়ের নেতৃত্বে চাচার সাথে কথা বলছে। আমি ঢুকতেই স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে চাচা বলল আলমগীর আস, বাবা কেমন আছ? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না, জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। মনে হল নাসিরনগরের একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান হিসেবে আজ আমার পুর্ণতার দিন। বাবা প্রয়াত বাচ্ছু মিয়া (সাবেক থানা আওয়ামীলীগ নেতা ও ফান্দাউক ইউপি চেয়ারম্যান) বড় ভাই প্রয়াত এম,এ,রউফ (সাবেক থানা আওয়ামীলীগ সাধারণ স¤পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান) অবদানের কথা এবং আমি চিরঋণী যে তারা একটি আদর্শিক সংগঠনের কর্মী ছিলেন।
চাচা বললেন ২টায় বঙ্গভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। চাচী ও রায়হানের সাথে সৌভাগ্যক্রমে আমি ও হবু মন্ত্রীর সফরসঙ্গী। প্রতিটি মিনিট গুনছি কখন যাচ্ছি বঙ্গভবনে। ঠিক তখনও আমরা নিশ্চিত নই পুর্ণমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, কোন মন্ত্রনালয় পাচ্ছি। একেকজন একেক বলছে,কেউ বলছে সমাজ কল্যাণ, কেউ বলছে ভুমি, পাট ইত্যাদি। আমাদের চিন্তা পুর্ণমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী নিয়ে,কেননা চাচা রাজনীতিতে অনেক সিনিয়র (১৯৭৩ এর এম,পি)। সততা থাকলে যে কোন মন্ত্রণালয়ে দক্ষতার সাথে কাজ করা যায় এটা উনার জন্য কোন ব্যাপার না। আমরা রওয়ানা হব, ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ঠিক ২.২০ বাজে। হঠাৎ নিচ থেকে একজন পিয়ন এসে বলে স্যার টিভির নিচে লেখা দেখলাম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। আমি এবং রায়হান পরস্পরের দিকে একবার তাকালাম এবং আমি বললাম রায়হান ভুলও হতে পারে, চাচা ও চাচীকে কিছু বলবা না। আমার মনে হয় তারা দুজনই আমাদের কথা শুনেছিলেন এবং এসে শুধু বললেন চল যাই। আমার খুব ইচ্ছে ছিল বের হওয়ার সময় চাচা এবং তার পরিবারের সদস্যদের সাথে একটা গ্রুপ ছবি উঠাব কিন্তু সাহস পেলাম না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি সাইলেন বাজিয়ে যাচ্ছে বঙ্গভবনের দিকে, মনে আনন্দ কিন্তু কেন জানি ভাল লাগছে না। কেউ কারও সাথে কথা নেই, গাড়ি চলছে, জানালা দিয়ে শুধু গাড়ি দেখছি, সচিবালয়ের কাছে সাধারণ মানুষ ও দলীয় কর্মীরা শ্লোগান দিয়ে ও ব্যানার নিয়ে নতুন মন্ত্রীসভা ও তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। ভাল লাগছে কিন্তু মনে শান্তি নেই পূর্ণমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বিষয়টি নিয়ে।
ঘড়িতে তখন বিকেল ৩টা বাজে, আমাদের নিয়ে আসা গাড়িটি সকল নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে বঙ্গভবনের ভিতরে। সেখান থেকে চুড়ান্ত নিরাপত্তা তল্লাশির পর আমরা তখন বঙ্গভবন দরবার হলে। হলের ভিতরে ঢুকেই আমাদের চোখ ছানাভরা,পুরো হল রুম তখন কানায় কানায় পুর্ণ। আমি একজন মহিলা নিরাপত্তা অফিসারের কাছে আমাদের বসার আসন কোথায় জিজ্ঞাস করলাম। আমার হাতে থাকা দাওয়াতপত্র দেখে অফিসার আমাদের আসন খোজার চেষ্টা করতে লাগল। অফিসার দেখার আগেই আমি আড়চোখে দেখতে পেলাম সিরিয়ালের ১৩ নম্বরটির পাশে আমাদের নেতার নাম। আমি জোরে জোরে রায়হানকে বলতে লাগলাম রায়হান চাচা পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। শব্দটি এত জোরে হয়েছে যে হলের বেশ কিছু অতিথি আমার দিকে হাস্যোজ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল এবং যারা চাচাকে চেনে তারা উচ্চস্বরে অভিনন্দন জানাতে লাগল। উচ্চারিত অভিনন্দন শব্দটি আমার কাছে শত মাইল দুরে থাকা অবহেলিত নাসিরনগরবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়াই যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বঙ্গভবনের কোণায় কোণায়। চাচা তার নির্ধারিত আসনে এবং আমরা আমাদের আসনে বসলাম। অবশেষে আসল সেই মহেন্দ্রক্ষন। অফিসিয়াল ফর্মালিটিজ এর পর মন্ত্রীপরিষদ সচিব একে একে পূর্ণমন্ত্রীদের নাম পড়া শুরু করলেন। যখনই তের নম্বরে আসলেন এবং উচ্চারণ করলেন এডঃ ছায়েদুল হকের নামটি তখন হল ভর্তি বিশিষ্ট অতিথিদের মাঝে শুধু আমরা তিনজন ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকলাম। আমার কাছে মনে হল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা, এডঃ ছায়েদুল হককে যে সম্মান দিয়েছেন এটা যেমন তার প্রাপ্য তেমনি এটা নাসিরনগরবাসীর বিজয়। কারণ ছায়েদুল হককে নাসিরনগরবাসী এর অনেক আগেই মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে অবশেষে নাসিরনগরবাসী তাদের প্রিয় মানুষটিকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে পেরে যারপর নাই আনন্দিত, গর্বিত ও সম্মানিত। আমি বিশ্বাস করি নাসিরনগরের মানুষ বিগত দিনের মত আগামী দিনেও থাকবে আওয়ামীলীগের পতাকাতলে এডঃ ছায়েদুল হকের নেতৃত্বে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে নাসিরনগরবাসীর পক্ষ থেকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
বঙ্গভবনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সম্মানিত অতিথিদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ। মাননীয় মন্ত্রীমহোদয়কে নিয়ে আমরাও গেলাম আপ্যায়ন টেবিলে। অনেক বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনেরা শুভেচ্ছা জানালেন নাসিরনগরের প্রাণ পুরুষকে। শুভেচ্ছার ধরণ ও আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ ও সম্মানিত করল এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে এই সু-সংবাদ পৌছে দিলাম নাসিরনগরের মানুষের কাছে। এমনই এক শুভক্ষণে হঠাৎ একজন স্মার্ট অফিসার এসে মন্ত্রীকে বললেন স্যার ‘আমি আশরাফ, আমার বাড়ি ফান্দাউকে, আমি বিমান বাহিনীর স্কোয়ার্ডন লিডার, এখন উপ-পরিচালক, বিশেষ নিরাপত্তা শাখা, প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যালয়ে কর্মরত এবং আজকে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তায় নিয়োজিত’। আমি দাড়িয়ে বললাম আশরাফ তুই! আশরাফ আমার স্কুল জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, জীবনের অনেক কিছুই কেমন করে জানি মিলে যায় বন্ধুটির সাথে জানি না? কিছু কিছু ঘটনা আছে অসম্ভব রকমের অবাক হওয়ার মত। উচ্চ শিক্ষায় বিদেশে থাকায় দীর্ঘ তিন বছর দেখা হয়নি বন্ধুটির সাথে। দেশে আসার দেড় মাসেও দেখা হয়নি ওর সাথে হরতাল, অবরোধের কারণে। অবশেষে দেখা হলো কোথায়? বঙ্গভবনে, তাও আবার নাসিরনগরের প্রথম মন্ত্রীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে! সত্যিই বলতে হবে কত মিল বন্ধু দুটির মাঝে। কয়েক মিনিট কৌশল বিনিময়ের পর অনুষ্ঠানের শেষে দেখা হবে বলে চলে গেল বন্ধুটি।
চা-চক্রের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি সকল আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে কৌশল বিনিময় করলেন ও আমাদের মন্ত্রীমহোদয়ের সাথেও কথা বললেন। অনেক গণমাধ্যমের কর্মীরা মন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিলেন। একে একে সবাই যখন চলে যাচ্ছিল আমরা চারজন তখন বসে আছি বঙ্গভবনের লনে। আমার বন্ধুটি তার ডিউটি শেষ করে আমাদের কাছে আসল এবং মন্ত্রীমহোদয়ের সাথে আবার কৌশল বিনিময় করল। আমরা একসাথে ছবি উঠালাম বঙ্গভবনের দরবার হলে,যেখানে বাধানো আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ছবি।
বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় চাচা আশরাফকে জিজ্ঞাস করল রাষ্ট্রপতি আছেন নাকি? আশরাফ দ্রুতই এসে বলল হ্যাঁ স্যার চেম্বারেই আছেন। চাচা রুমে ঢুকতেই রাষ্ট্রপতি বলে উঠলেন’ ছায়েদ ভাই কেমন আছেন? এখানে উল্লেখ্য যে, চাচা ও রাষ্ট্রপতি পাশাপাশি সংসদীয় আসন থেকে দীর্ঘদিন সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। চাচা ও রাষ্ট্রপতির কথোপকোথনের মাঝে আশরাফ আমাকে অন্য আরেক রুমে নিয়ে ফান্দাউকী কায়দায় ভাপা পিঠা ও চিথৈ পিঠা খাওয়াল। সত্যিই পিঠাগুলো খুবই সু-স্বাদু।
ইতিমধ্যে রায়হানের ফোন, আলমগীর ভাই আপনি কোথায়? আমি উত্তর দিলাম আসছি। ভিতরে ঢুকতেই চাচা তাঁর স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে রাষ্ট্রপতিকে বলছেন ও আলমগীর, নাসিরনগর আওয়ামীলীগ নেতা বাচ্চু ভাইয়ের ছেলে। আমি সালাম দিলাম রাষ্ট্রপতিকে। এখানেই শেষ নয়, আমি বিদেশে কোথায় পড়াশুনা করেছি, কি কি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি এবং আমার বাবার মুক্তিযুদ্ধকালীন নানান ইতিহাস রাষ্ট্রপতিকে শুনালেন। আমি নিরবে দাড়িয়ে আছি, তখন রাষ্ট্রপতি বললেন বস বাবা আমার কাছে এসে বস। আমার কাছে স্বপ্নের মত লাগছে। বঙ্গভবনের মত জায়গায় আমার বাবার নামটি উচ্চারিত হলো… রাষ্ট্রপতির সাথে চাচা আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, আমি রাষ্ট্রপতির পাশে বসলাম । নিজেকে সামলে নিলাম এবং মনে হলো মাত্র দেড় বছর বয়সে মাকে হারানো এবং দশ বছর বয়সে বাবাকে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যার পর যে কষ্টটুকু বুকে ধারণ করে আজ অবধি আওয়ামীলীগ করে যাচ্ছি, আজ থেকে আমার মনে আর কোন কষ্ট নেই। আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া।
বঙ্গভবন থেকে আমাদের চলে আসার পালা। আমরা রাষ্ট্রপতিকে সালাম জানিয়ে বিদায় নিলাম। বের হওয়ার সময় মন্ত্রীপরিষদ সচিবের কাছ থেকে চাচা জেনে নিলেন তার দপ্তর (মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়)। মাইকে ঘোষিত হলো মাননীয় মন্ত্রীমহোদয়ের গাড়ীর ড্রাইভারের নাম। আমাদের চোখের সামনেই আসল জাতীয় পতাকা শোভিত একটি জাম রং এর গাড়ি। পতাকা শোভিত গাড়ীতে উঠলেন নাসিরনগরের মাটি ও মানুষের নেতা, প্রিয় মানুষ এডঃ ছায়েদুল হক এবং সঙ্গে আছেন তার সহধর্মীনি। গাড়ীটি চলে যাচ্ছে সামনে ও পিছনে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে এবং মনে হচ্ছে এ গৌরব নাসিরনগরবাসীর, এ সম্মান অবহেলিত জনপদের এবং এ পাওয়া সামনে চলার প্রেরণা। বঙ্গভবনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আজ আমরা ও অংশীদার। জয় এডঃ ছায়েদুল হকের, জয় নাসিরনগরবাসীর।