প্রতিনিধি : এককালে গোলা ভরা ধানের সাথে পুকুর ভরা মাছের কথা প্রযোজ্য ছিলএ অঞ্চলের ক্ষেত্রে। মৎস্য অঞ্চল হিসেবে খ্যাত নাসিরনগর উপজেলায় বর্তমানে মাছের আকাল চলছে।উপজেলার নদ-নদী,খাল-বিল,পুকুর ও জলাশায় গুলোতে দেশী মাছশূন্য হয়ে পড়েছে।এ অঞ্চলের হাট-বাজারে দেশী প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। যদিও কিছু কিছু মাছ জেলেদের মাধ্যমে হাট-বাজারে আসে, তার দাম চড়া হওয়ায় নিম্ন আয়ের ক্রেতা তা কিনতে পারছে না। যে কারণে দেশী মাছের স্বাদ এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ভুলতেই বসেছেন। ফলে এলাকার শত শত মৎস্যজীবী তাদের জীবিকা নির্বাহ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে চলতি আশ্বিন-কার্ত্তিক মাস মাছের জন্য ভরা মৌসুম হলেও এ মাসে দেশীয় মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অন্য বছরগুলোতে এ সময় নাসিরনগরের বিভিন্ন হাট-বাজারে দেশীয় মাছের সয়লাব হয়ে যেত। বিশেষ করে বিভিন্ন বিলাঞ্চল থেকে মৎস্যজীবীরা কৈ,সিং ,মাগুর, বাইম, টেংড়া,পুটি চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ শিকার করে এ গুলো বিক্রি করে তাদের জীবিকা নিবার্হ করত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ মাছ গুলো দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে।মাঝে মধ্যে বাজারে এ মাছ গুলো দেখা গেলেও আকাশ চম্বি দাম হওয়ায় তা সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরে থেকে যায়। এ অঞ্চলের কয়েক হাজার জেলে পরিবার নদী,বিল ও জলাশয় থেকে মাছ ধরে হাট বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন অধিকাংশ নদ-নদীতে আগের মত মাছ পাওয়া যায় না। জেলেরা বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। যারা টিকে আছে তারা দুঃখ-কষ্ঠে জীবন অতিবাহিত করছে। যদি নদ-নদী ও বিলগুলো খনন ও সংস্কার করা হতো তাহলে একদিকে যেমন নদী পথে ব্যবসা-বানিজ্যের সমৃদ্ধি ঘটত অন্যদিকে মাছের উৎপাদন বাড়ত। জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে জীর্বিকা নির্বাহ করার সুযোগ পেত। নদী,বিল ও জলাশয় থেকে দেশী মাছ হারিয়ে যাওয়ার কারন গুলোর মধ্যে রয়েছে পানি স্বল্পতা; যেখানে সেখানে বাঁধ নির্মাণ,নাব্যতা হারানো,পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া,কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার,মাছের নিরাপদ আবাস না থাকা এবং প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হওয়া,প্লাবন ভুমির সাথে সংযোগ খালগুলো সংকুচিত হওয়া,খরা ও অনাবৃষ্টি, জমিতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে মাছের বংশ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নদীতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ না থাকায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এসব মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এরপরও নদী-নালা ,খার-বিল ও জলাশয়গুলোতে যে পরিমান মাছ সঞ্চিত থাকে তা নির্বিচারে শিকার করার ফলে দিন দিন দেশী প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ মনে করছেন। এক সময় পানি শুকানোর সাথে সাথে জেলেরা বেড়াজাল,বেশালজাল,ফাঁসজাল,ঝাঁকিজাল,সোতীজাল দিয়ে মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। তাদের আহরিত এ অঞ্চলের সুস্বাদু মিঠাপানির নানা প্রজাতির ভাল মাছ চলে যেত ভৈরব,কুলিয়ারচরসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর বাকি মাছগুলো যেত শুঁটকির চাতালে। আর এ মাছ কাটা ও শুকানোর কাজে মহাব্যস্ত থাকত মহিলা শ্রমিকরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শুকানো মৌসুমে বিশেষ করে কার্ত্তিক অগ্রায়ণ মাসে শুঁটকির চাতাল চোখে পড়ে।মাছ ধরার পেশায় জড়িত দরিদ্র পরিবার গুলো অধিক লাভের আশায় বছরের আশ্বিন মাসের প্রথম থেকে ৩ মাস শুঁটকির কাজ পেশা হিসেবে বেছে নেয়।তবে চাতাল ব্যবসায়ীদের সমস্যাও রয়েছে অনেক,সংরক্ষণ করতে না পারায় প্রতি বছরই প্রতিটি চাতাল থেকে শুঁটকি মাছ নষ্ট হয়। শুঁটকি তৈরিতে বিভিন্ন প্রকার মাছের মধ্যে পুঁটি,শৈল, টেংরা,লাটি,কৈ,মেনি উল্লেখ যোগ্য।
|