Main Menu

সালিশে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া আ’লীগ নেতা সহ ১২ সমাজপতির বিরুদ্ধে মামলা, ইউপি সদস্য গ্রেপ্তা�

+100%-
সরাইল প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পরকীয়া ও পরকীয়ায় সহযোগিতা করার অভিযোগে গ্রাম্য সালিশে প্রকাশ্যে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন সমাজপতিরা। এসময় সালিশকারকরা এক গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার সালিশে নির্যাতনের শিকার এক যুবকের মাতা বাদী হয়ে আ’লীগ নেতা সহ ১২ সমাজপতির বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সালিশকার এক ইউপি সদস্য মো. সহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার সহ ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করেন। এদিকে পুলিশ হেফাজতে থাকা গৃহবধূর কপালে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেলেও পুলিশ দাবি করছেন গৃহবধূকে সালিশে নির্যাতন করা হয়নি। তবে সালিশে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়ার বিষয়টি পুলিশ স্বীকার করেছেন। এলাকাবাসী জানান, উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের টিঘর গ্রামের জনৈক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া ও পরকীয়ায় সহযোগিতা করার অভিযোগে গত মঙ্গলবার দুপুরে গ্রাম্য সালিশে প্রকাশ্যে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন গ্রাম্য মাতব্বরা। সালিশে ওই দুই যুবককে প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে এক লাখ জরিমানা করা হয়। একই অপরাধে গৃহবধূকেও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। টিঘর গ্রামের ইউপি সদস্য মো. সহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচিত ওই সালিশ সভায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন গ্রাম্য মাতব্বর স্থানীয় আ’লীগ নেতা মো. কুতুব মিয়া, শের আলী, হেলিম মিয়া, আশরাফ আলী, হিরা মিয়া প্রমূখ। সালিশে সমাজপতিদের রায়ে প্রায় সহস্রাধিক লোকের উপস্থিতিতে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া করে দেন গ্রামের কৃষক মো. অন্তর মিয়া। এ বিষয়ে কৃষক অন্তর মিয়া বলেন, সালিশে বিচারকদের হুকুমে আমি দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া করেছি।  ওই সালিশের বিচারক গ্রাম্য মাতব্বর আশরাফ আলী (৬০) বলেন, আইনে কি আছে তা জানার দরকার নেই। সালিশে প্রকাশ্যে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া করার কারণ হল- এ বিচার দেখে গ্রামের অন্যান্য যুবকেরা যেন সতর্ক হয়। তিনি বলেন, অভিযুক্ত গৃহবধূকে মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত বেত্রাঘাত করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। গায়ের চামড়া তুলা হয়। এটিও করা হয়েছে অন্যান্য বৌ-ঝিদের বুঝিয়ে দিতে, তারা যেন এ ধরণের ভুল না করে। সালিশকারক শের আলী বলেন, তাদের কৃত অপরাধে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া সহ গৃহবধূকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এই অপরাধে এমন শাস্তিই হওয়া উচিত। দুই যুবকের পরিবার জানান, বিনা দোষে প্রভাবশালী মাতব্বররা সালিশে প্রকাশ্যে তাদের (দুই যুবকের) মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছেন। গৃহবধূকে মারধর করেছেন। যুবকরা লজ্জায় গ্রাম ছেড়ে গেছে। আমরা এ অমানবিক সাজা প্রদানকারী বিচারকদের শাস্তির দাবি করছি। থানা হাজতে থাকা সালিশকারক পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, কুতুব মিয়া, আশরাফ আলী, শের আলী, হেলিম মিয়া, হিরা মিয়া সহ ক’জন সালিশকারকের চাপে অভিযুক্ত দুই যুবকের মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। তবে ইউপি সদস্য দাবি করেন গৃহবধূকে সালিশে মারধর করা হয়নি। শুনেছি পরিবারের লোকজন গৃহবধূকে শাসন করেছেন।

এ ব্যাপারে পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা মো. নুরু মিয়া বলেন, বিষয়টি গত বুধবার জেনেছি। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক, অমানবিক ও অন্যায়।

সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, সালিশে দুই যুবকের মাথা ন্যাড়ার ঘটনায় ১২ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই দুই যুবকের বিরুদ্ধে গৃহবধূ বাদী হয়ে থানায় নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃত ইউপি সদস্যকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।  সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহে দুল ইসলাম বলেন, ইউপি সদস্য বা গ্রাম্য সালিশকারকদের এ ধরণের সালিশ করার কোনো এখতিয়ার নেই।






Shares