ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরো ৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত, পরীক্ষার উপকরণ নেই হাসপাতালে



ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ৮ জন। জেলার সিভিল সার্জন মো. শাহআলম জানান- বৃহস্পতিবার ৩৩ জন ডেঙ্গু রোগী ছিল। আর শুক্রবার ৮ জন বেড়ে তা এখন ৪১ জন হয়েছে। তবে আক্রান্তদের মধ্যে আবার ১৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অন্যদিকে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ৪ জনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। আক্রান্তদের বেশির ভাগ ঢাকা থেকে আসা বলেও জানান তিনি। এদিকে বৃহস্পতিবার কিট সরবরাহ পেয়েছেন জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে ফলোআপ পরীক্ষার জন্য যে উপকরণ (ওয়ান জি এম এবং ওয়ান জি জি) সরবরাহ নেই বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র।
হবিগঞ্জের মাধবপুর সদরে বাড়ি মোস্তাফিজুর রহমান (১৮)। ভর্তি রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে। মোস্তাফিজ ঢাকা মিরপুর বাংলা কলেজে পড়াশোনা করেন। তার মা সমতাজ বেগম জানান, গত রোববার তার জ্বর উঠে। সেখানে ডাক্তার দেখিয়ে গত বুধবার রাতে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। কারণ সেখানে তাকে দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না। বাড়িতে আসার পর কতক্ষণ পর পরই জ্বর উঠছিল তার। এই অবস্থায় পরদিন তাকে ভর্তি করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে।
পাভেলও (১৭) ঢাকা থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত্ত হয়ে বাড়িতে ফিরেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের পাঘাচং গ্রামের পাভেল ঢাকার মিরপুরে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে এক সপ্তাহ থেকে ২৯শে জুলাই বাড়িতে আসেন। এরপরই তার জ্বর ওঠে। পাভেল চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।
নবীনগর বাড়ি নূরুন্নাহারের (৩০)। ঢাকার হাজারীবাগে থাকেন। সেখানে আক্রান্ত হওয়ার পর বাড়িতে চলে আসেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত এ তিনজনই ভর্তি রয়েছেন জেলা সদর হাসপাতালের ১,৩ ও ৫ নম্বর কেবিনে। সদর উপজেলার চিনাইরের শাহিলাও (১৮) ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। তার বাবা আলী আজগর ভূঁইয়া জানান, বৃহস্পতিবার সকালের ট্রেনে তার মেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসে। এরআগে তার হালকা জ্বর ছিল। এরপর জেলা সদর হাসপাতালে এনে পরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শাহিলা তিতুমীর কলেজে পড়াশোনা করেন।
জেলা সদর হাসপাতালে খোলা হয়েছে ডেঙ্গু কর্নার। শুক্রবার বিকালে সেখানে খোঁজ নিয়ে ১৪ জন রোগী ভর্তির তথ্য পাওয়া যায়। তারা হচ্ছেন- আখাউড়া ধাতুরপহেলা গ্রামের জাহিদ হাসান (৩৮),সদরের চিনাইরের শাহিলা (১৮),বিরামপুর গ্রামের ফোরহান (২০), উচালিয়াপাড়ার জান্নাত (১৬), চান্দপুরের তায়েবা (৩৩), সোলেমান (৩০),ভাদুঘরের সোলেমান (৪০),ভোলাচং গ্রামের শিহাব (১৪), সরাইলের আখিতারার আকরামুল হাসান (১৮), সরাইল শাহপাড়ার পিয়াস (১৭), কালিকচ্ছের অপু (১৭), আশুগঞ্জের মোহনপাড়ার বিল্লাল (২৮), নবীনগর বিদ্যাকুটের শাকিল (১৫)। ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠায় আখাউড়া ঈদুলপুরের নাছিমা (৪৫) কে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তার স্বজনরা। এ ছাড়া ২ জন নাসিরনগর হাসপাতালে, ২ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং একজন নবীনগর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানান সিভিল সার্জন।
জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. শওকত হোসেন জানান- ৪ জনকে তারা এপর্যন্ত ঢাকায় পাঠিয়েছেন। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। ফলোআপের পর অবস্থা খারাপ দেখলে ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
সিভিল সার্জন মো. শাহআলম জানান- বৃহস্পতিবার তারা ১২০টি কিট পেয়েছেন। এরমধ্যে ৮০টি জেলা সদর হাসপাতালে দিয়েছেন। বাকি ৪০টি রিজার্ভ রাখা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগীর ডায়াগনস্টিক এবং ফলোআপ পরীক্ষায় ব্যবহৃত সিবিসি তাদের কাছে আগেই ছিল। এন এস ওয়ান-ও সরবরাহ পেয়েছেন। সরবরাহ নেই শুধু ওয়ান জি এম এবং ওয়ান জি জি। আক্রান্ত রোগীর ৫-৬ দিন গত হওয়ার পর পরীক্ষার জন্য দরকার হয় এই উপকরণের।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষায় অতিরিক্ত টাকা আদায় ও মূল্যতালিকা না টানানোর অভিযোগে একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।