আসামীরা ঘুরছে প্রকাশ্যে, ধরছে না পুলিশ,অভিযোগ স্বজনদের
রিমন হত্যাকান্ড : প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তানহারা মা বাছিয়া পারভীনের আকুতি
বাছিয়া পারভীন, আপাত দৃষ্টিতে একজন বৃদ্ধা। তার আরও একটি পরিচয় আছে । তিনি একজন সন্তানহারা মা। যার সন্তানকে চাঁদার দাবিতে চোখের সামনেই কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। সন্তান হত্যার বিচার চেয়েও না পেয়ে আজ তিনি রাজপথে দাঁড়িয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সরকারপাড়ার বাছিয়া পারভীনের স্বামী মারা গেছে বছর তিনেক আগে। তারপর কিশোর বয়সেই সংসারের হাল ধরেন ছেলে রিমন। নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে পুরো পরিবারের ভরণ পোষণ করতেন তিনি। সবকিছু চলছিল ভালই বাছিয়া পারভীনের জীবনে। স্বামী হারানোর শোকও কাটিয়ে উঠেছিলেন তিনি। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। কিন্তু সুখের সংসারে ভাটা পড়ে গত ২জানুয়ারী। চাঁদা না দেয়ায় এলাকার চিহ্নিত টিকেট কালোবাজারি ও সন্ত্রাসী খেলু মিয়া, রনি মিয়া, শুভ মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, কাইয়ুম মিয়া, মো. শাহীন মিয়া, মো. লীল মিয়া, শাহআলম, হৃদয় মিয়া, জুলহাস মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা রিমনকে তার মায়ের সামনেই এলোপাতারি কুপিয়ে গুরুত্বরভাবে আহত করে। পরে স্থানীয় লোকজন মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
অবস্থার অবনতি হলে তাকে জরুরীভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ৮ জানুয়ারী ঢামেকের আইসিইউতে মারা যায় রিমন। এর মধ্যেই ৪ জানুয়ারী রিমনের মা বাদী হয়ে খেলুসহ ১০জনের নাম উল্লেখপূর্বক আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে।
তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এবং আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছেনা বলে অভিযোগ রিমনের পরিবারের। তাই রিমন হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী। একমাত্র ছেলে হত্যার বিচার দাবিতে বুকে পোস্টার জড়িয়ে বিলাপ করতে থাকেন মা বাছিয়া পারভীন।
তিনি বলেন, আমার পুতেরে (ছেলেকে) আমার চোখের সামনেই কুপিয়ে কুপিয়ে মারলো সন্ত্রাসীরা। আমি আজ তার বিচার পাচ্ছি না। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাকে হুমকিও দিচ্ছে। আমার ঘরে আমি, আমার ছেলের বউ, আমার দুই মেয়ে। আমরা সবাই নারী। আপনারা আমাকে নিরাপত্তা দিন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা ছেলে হত্যার বিচার চাই।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, পৌরসভার কাউন্সিলর শরীফ ভান্ডারী, নিহতের বোন বিউটি বেগম প্রমুখ। এ সময় তারা হত্যায় জড়িত কোনো আসামিকে ধরতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্মাণ শ্রমিক রিমনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রায় এক মাস হতে চললেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ কোনো আসামিকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। অবিলম্বে হত্যার সাথে জড়িত সকল আসামিদের গ্রেফতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। পরে মানবন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে কয়েকশ নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন জানান, রিমন হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। প্রযুক্তির সহায়তায় খুব দ্রুতই আসামীরা আইনের আওতায় আসবে বলেও জানান তিনি।