‘তীব্র গতিতে বাড়ছে সংক্রমণ’, ইউরোপে নতুন ভরকেন্দ্র স্পেন
এ সপ্তাহেই করোনা-প্রকোপের চেহারা সব চেয়ে ভয়াবহ হতে চলেছে স্পেনে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সংক্রমণের গ্রাফ শীর্ষ স্তরে পৌঁছে যাবে বুধবারের মধ্যে। ইউরোপে করোনার মূল কেন্দ্র এ বার হয়ে উঠতে চলেছে এই দেশ।
আজ স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৩৩ হাজারের বেশি। গত কালের থেকে যা অন্তত সাড়ে ৪ হাজার বেশি। মৃতের সংখ্যা দু’হাজার। গত কালের থেকে তা ৪৬২ বেশি। স্পেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী কারমেন কালভো গত কাল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর করোনা-পরীক্ষার ফল আসা এখনও বাকি।
স্পেনের বেশ কিছু হাসপাতালের মেঝেতেই পড়ে রয়েছে করোনা রোগী। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এমন দৃশ্য। ওই সব রোগীদের দেখার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী অকুলান। একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, রোগীরা কাশছেন আর তাঁদের সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। মাদ্রিদের ইনফান্টা লিয়োনোর হাসপাতাল এবং সেভেরো ওকা ডে লেগানে হাসপাতালে উঠে এসেছে এমনই ছবি। ছবিগুলো দেখিয়ে দেশের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে কী ভয়ানক পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। গোটা স্পেনের মধ্যে মাদ্রিদেই মৃত্যুর হার সব চেয়ে বেশি। এখানেও স্বাস্থ্য পরিষেবা এক রকম ভেঙে পড়ার মুখে।
অন্য দিকে, ইটালির ছবিটা অবশ্য সামান্য আশা জাগাচ্ছে। সেখানে মৃতের সংখ্যা ৫,৪৭৬। ২৩ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে। তবে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমছে বলে শোনা যাচ্ছে। নতুন করে মৃত্যুর খবরও নেই।
আর কয়েক দিনের মধ্যে নিউ ইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা কম পড়তে পারে বলে আশঙ্কা। সেখানকার মেয়র বিল ডে ব্লাসিয়ো জানিয়েছেন, তাঁদের হাতে শুধু এই সপ্তাহটাই আছে। তার পরে তাঁরা কতটা মানুষকে বাঁচাতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ আগামী সপ্তাহ থেকেই রসদে টান পড়বে। সব হাসপাতালে শয্যা অন্তত ৫০ শতাংশ না বাড়ালে পরিস্থিতি সঙ্গিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকায় এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজারেরও বেশি। এঁদের মধ্যে শুধু নিউ ইয়র্কেই ২০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত। গোটা আমেরিকায় মারা গিয়েছেন ৪৫৯ জন। মেয়র ব্লাসিয়ো বলেছেন, ‘‘কয়েক দিন আগেও বলেছিলাম এপ্রিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন যে গতিতে এগোচ্ছে, সেটাও আর বলতে পারছি না।’’
যে ভাবে ইরানে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে, তা নিয়ে সে দেশের শীর্ষ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের সমালোচনা করেছেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো। তাঁর দাবি, ইরানের মিথ্যে দাবি ওদের দেশের ক্ষতি তো করছেই, গোটা বিশ্বের পক্ষেও বিপজ্জনক হচ্ছে। গত কাল খামেনেই অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘আমেরিকাই করোনাভাইরাস তৈরি করেছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, করোনার প্রতিষেধক তৈরিতে লোকে কেন আমেরিকার উপরেই ভরসা করছে? খামেনেই মনে করছেন, ইরানের সঙ্গে বিরোধিতা বাড়াতেই আমেরিকা এই ভাইরাস সৃষ্টি করেছে। পম্পেয়োর পাল্টা অভিযোগ, নিজের দেশের তথ্য গোপন করে ইরান প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। ইরানে আজ মৃতের সংখ্যা ১২৭। মোট মৃত্যু ১৮১২। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৪১১ জন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার টুইট করে বলেছেন, চিন আগে থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য দেয়নি এবং সহযোগিতাও করেনি। তাঁর কথায়, ‘‘এখন আমি চিনের ব্যাপারে একটু বিরক্ত। সত্যি বলছি, আমি প্রেসিডেন্ট শি (চিনফিং) এবং ওঁদের দেশের প্রশংসাই করি।’’
আজ সিঙ্গাপুরে আবার একসঙ্গে ৫৪ জনের দেহে ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস। এঁদের মধ্যে ৪৮ জন ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং এশিয়ার অন্য দেশ থেকে সিঙ্গাপুরে ঢুকেছিলেন বলে দাবি। এখানে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৫০৯। তবে পুরোপুরি সেরে উঠেছেন ১৫২ জন।
পাকিস্তানে এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮৭৩। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৭ জন। মারা গিয়েছেন মোট ৬ জন। করাচি এবং সিন্ধুপ্রদেশে লকডাউন করা হয়েছে। আংশিক লকডাউন রয়েছে লাহৌরেও। ওষুধ এবং মুদি দোকান ছাড়া সব বন্ধ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সোমবার জানিয়েছে, এখনও অতিমারি বেড়ে চলেছে অতি দ্রুত হারে।