Main Menu

কম শ্রমে বেশি লাভ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ছে লিচু বাগান, ২৯ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা

+100%-

ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। মাথায় ও কাঁধে করে লিচুর ঝুড়ি নিয়ে হাজির লিচু বাগানিরা। রং বেরং এর লিচুতে সয়লাব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে বড় লিচুর হাট বিজয়নগর উপজেলার আওলিয়া বাজার। বাজারের মূল সড়কেই বসে এ হাট। ট্রাক- মিনি পিকআপ-সিএনজি নিয়ে হাজির দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররাও। ভোর রাত থেকে এবাজারে চলে বেঁচাকেনা। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা লিচু বেচাকেনা হয় এ বাজারে।

এবার সার্বিক উৎপাদন ভাল হলেও যথা সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় লিচুর আকার কিছুটা ছোট। ইতিমধ্যে পাটনাই ও বোম্বাই জাতের লিচু বিক্রি শুরু হয়েছে পুরোদমে। এখন চলছে  চায়না-২ ও থ্রি জাতের লিচুর সংগ্রহের প্রস্তুতি। আকার ভেদে পাটনাই জাতের প্রতি হাজার লিচু এক থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রী হলেও বোম্বে ও জাতের লিচু ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রী হচ্ছে। ফলন ভাল হওয়ার পাশাপাশি বাজারদর ভাল হওয়ায় চাষীরাও খুশি।

উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমুড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটি দাউপুর এলাকায় পাঁচ শতাধিক লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে দেশি লিচু, এলাচি লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু হয়।

আনুমানিক ২০০৩ সালের আগে থেকে বিজয়নগর উপজেলায় লিচুর চাষ শুরু হয়। কম শ্রমে বেশি লাভ হয় বলে ধানি জমিগুলোতেও লিচুগাছ লাগিছেন অনেক চাষি। লিচুগাছে মুকুল ও গুটি এলেই প্রথম দফায় স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনের কাছে গাছ বিক্রি করা হয়। গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর দ্বিতীয় দফায় গাছ বিক্রি হয়। লিচু ছোট আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় বিক্রি হয়। লিচু বড় আকার ধারণ করলে চতুর্থ দফায় বিক্রি হয়। তবে সব চাষি এক মৌসুমের জন্য গাছের সব লিচু বিক্রি করেন।

উপজেলার আউলিয়া বাজার, সিংগারবিল, হরষপুর, চান্দুরা, বিষ্ণুপুর, ছতরপুর, আজমপুর, চম্পকনগর বাজারেও লিচু বিক্রি হয়। এসব বাজার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুর, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, শায়েস্তাগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, ফেনী ও রাজধানী ঢাকার ব্যবসায়ীরা পায়কারি দরে লিচু কিনে পিকআপ ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে নিয়ে যান।

সেজামোড়া গ্রামের বাগানি বিল্লাল মিয়া, তার ৫০ টি গাছেই এবার লিচু এসেছে। এর মধ্যে ২০ টি পাটনাই, ও বোম্বাই-চাইনাথ্রি ১৫টি করে। তিনি এ পর্যন্ত ২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। বোম্বাই ও চাইনাথ্রি মিলিয়ে তার আয় ৫ লাখ হবে বলে আশা তার।

স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রবাস ফেরত যুবকরাও নিজ নিজ এলাকায় লিচু চাষ করছেন। প্রবাস ফেরত সুলতান আহমেদ জানান, এলাকায় কর্মসংস্থানের কম সুযোগ থাকায় তিনি বিদেশে চলে যান। সেখানে সুবিধা না করতে পারায় দেশে ফিরে লিচুর চাষ শুরু করেন। এতে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি।

কামাল ভূইয়া নামে স্থানীয় এক লিচু চাষী জানান, তার বাগানে ৪০টি গাছ রয়েছে। পরিচর্যা ও শ্রমিক খরচ মিলিয়র ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো, এবার তার দেড় লাখ টাকার মতো লাভ হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৯ কোটি টাকার লিচু উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তা ছাড়াও লিচু চাষ উৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।






Shares