Main Menu

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত

+100%-

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে আজ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বছর ঘুরে আবারও ছলাৎ ছলাৎ শব্দে গর্জে উঠলো তিতাস তীরে সুন্দইরা মাঝির বৈঠা। উৎসবে মাতোয়ারা তিতাস নদীর তীর। পুরোটা বছর জুরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রীড়াপ্রেমীরা। চমৎকার এই ক্ষণে সামিল হতে সকাল থেকেই তিতাস পাড়ে ভিড় করেন শুরু করেন দর্শকরা।

তিতাসের বুকে বৃহষ্পতিবার পড়ন্ত বিকেলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এই নৌকা বাইচ দেখতে ভিড় করেন লাখো দর্শক। চমৎকার এই বাইচ দেখে দারুণ খুশি তারা। দিন দিন হারাতে বসেছে বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব আর দেশীয় সংস্কৃতি ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ । তবুও যেটুকু টিকে আছে, তাতেই খুশি সহজ সরল এই মানুষগুলো। পড়ন্ত বিকেলে চমৎকার এই নৌকা বাইচ তাদের নিয়ে গেছে এক রকম ঘোরের রাজ্যে। নৌকা বাইচ উপলক্ষে শহর জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। ভাদ্র মাসের তপ্ত দুপুর গড়ানোর আগেই জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট-বড় নৌকা নিয়ে দর্শকরা তিতাস নদীর দুই পাড়ে হাজির হতে থাকেন। ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর মাঝির বৈঠা গর্জে উঠার সাথে সাথে উত্তেজনায় ফেটে পড়ে ক্রীড়ামোদিরা। তিতাস নদীতে নৌকা বাইচ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের কাছ এক প্রাণের উৎসব। ভরা তিতাসের বুকে বাহারী দৌড়ের নৌকার নাও দৌড়ানী তিতাস পাড়ের মানুষজনকে নিয়ে চলে এক অন্য রকম আনন্দলোকে। তাদের দাবি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রতি বছর যেন এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।

নৌকা বাইচকে ঘিরে জেলা জুড়ে উৎসব ও আমেজ বিরাজ করেছে। বাইচ দেখতে তিতাস নদীর দুই পারে লক্ষাধিক উৎসুক নারী-পুরুষ ভিড় করেন। তিতাসের বুকভরা ঢেউ আর প্রাণভরা উচ্ছ্বাসে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি গাঁও গ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডার শিশু পরিবার এলাকায় তিতাস নদীতে অনুষ্ঠিত হয় এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। এবার ১৫টি প্রতিযোগী দল তাদের সুসজ্জিত নৌকা আর রং বে-রঙের বাহারি পোশাক পড়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিযোগিতা চলার সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে মাঝিদের ভাটিয়ালী গান আর পানিতে বৈঠার ছলাত ছলাত আওয়াজে পুরো এলাকা মুখরিত হয়।

বিকেল ৩টার দিকে পৌর এলাকার শিমরাইলকান্দি গাঁও গ্রাম এলাকায় নৌকা বাইচের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এসময় জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে নবীনগর উপজেলা নৌকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সরাইল উপজেলা নৌকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করে আশুগঞ্জ উপজেলার নৌকা।

পরে প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী প্রথম স্থান অর্জনকারী দলকে এক লাখ টাকা, দ্বিতীয় স্থান অর্জন কারীকে ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারীকে ৩০ হাজার টাকা এবং ট্রফি উপহার হিসেবে প্রদান করেন। এছাড়াও প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনকারী প্রত্যেক দলকে নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, যত দিন বাঙ্গালি ও বাংলা সংস্কৃতি থাকবে তত দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, তিতাসপাড়ে আজ হাজার হাজার মানুষ। এতেই বুঝা যায় মানুষ নৌকা বাইচকে কত ভালোবাসে। তিনি নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ জানান।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা চলার সময় শিমরাইলকান্দি গাঁও গ্রাম এলাকা থেকে মেড্ডা শিশু পরিবার এলাকা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০টি মোবাইল কোর্ট টিমসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, বিএনসিসি, নৌ-পুলিশ, ডুবুরীদল, ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম নিয়োজিত ছিল। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য আকাশে উড়ানো হয় ড্রোন। সূত্র:: বাসস






Shares