বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দেওয়ার জন্যে রাজি ছিল পাকিস্তান!
ডেস্ক ২৪ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান। নভেম্বর মাসে পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত হন,পরের বছর ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবি মেনে নিতে। সম্প্রতি এমনটাই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন আমেরিকার প্রাক্তন বিদেশসচিব হেনরি কিসিঞ্জার।
দ্য আটলান্টিক সাময়িকির সর্বশেষ সংখ্যায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিসিঞ্জার স্বীকার করেছেন, নিক্সন প্রশাসন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) পাকিস্তান সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম নৃশংসতার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। আমেরিকা ও চিনের সম্পর্কোন্নয়নে ইসলামাবাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্যই এটা করা হয়েছিল। সাক্ষাৎকারে কিসিঞ্জার জানান, ‘বাংলাদেশ সংকট ছিল মূলত বাঙালিদের পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার পদক্ষেপ। পাকিস্তান তা চরম সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।’ তিনি বলেন, ‘প্রকাশ্যে এসবের নিন্দা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেত। চিনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কোন্নয়ন হতে আরও কয়েক মাস সময় দরকার ছিল।’ কিসিঞ্জার জানান, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নকে কূটনৈতিকভাবে দুর্বল করা এবং শান্তির জন্য চিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়নকে আবশ্যক বলে বিবেচনা করেছিল নিক্সন প্রশাসন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ট্র্যাজেডির নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করা মার্কিন কূটনীতিকরা চিনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে জানতেন না। তাদের বর্ণনা ছিল আন্তরিক ও যৌক্তিক। কিন্তু আমরা প্রকাশ্যে কোনও সাড়া দিতে পারিনি।’ তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর খাদ্যের ব্যবস্থা করে এবং সংকট উত্তরণে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয় বলে জানান তিনি।
কিসিঞ্জার বলেন, ‘পাকিস্তানের মাধ্যমে চিনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার জন্য একাধিকবার আহ্বান জানায়। নভেম্বরে নিক্সনের সঙ্গে আলোচনায় পরবর্তী বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিতে একমত হন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট। আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সামরিক চুক্তির পর এবং শরণার্থী সংকট কাটাতে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) অভিযান শুরু করে ভারত।’ ‘ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রকে সোভিয়েত চাপ, ভারতের উদ্দেশ্য, চিনের সন্দেহ ও পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়েছে।’
প্রাক্তন মার্কিন বিদেশসচিব বলেন, ‘সমন্বয় করতেই হতো এবং তার জন্য নতুন কিছু দরকার ছিল। কিন্তু ফলাফল নিয়ে কোনও দুঃখপ্রকাশের সুযোগ ছিল না। সংকট শুরু হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শেষ হয়ে যায় এবং ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেজিংয়ে একটি সম্মেলনে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। সবই ঘটে ১৯৭২ সালের মার্চের আগেই।’ আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালের মে মাসে মস্কোতে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৭৪ সালের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয় মার্কিন-ভারত যৌথ কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে। যা এখনও ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।’ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সমর্থন করে কিসিঞ্জার বলেন, ‘সিরিয়া, লিবিয়া, মিসর, ইরাক ও আফগানিস্তানে যা ঘটছে ,সে তুলনায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যে ত্যাগ করেছে, সেটার অনেক বেশি সুস্পষ্ট সমাপ্তি ছিল।’