নেপথ্যে যুবতী ইন্টার্ন, চীনের ল্যাব থেকেই লিক করোনা ভাইরাস?
বর্তমান, কলকাতা:: উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি। এখানে রয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে সুরক্ষিত গবেষণাগার। যেখানে সংরক্ষিত আছে ইবোলার মতো মারণ ভাইরাসও। গোপনে গবেষণা চলছিল এখানেই। কী নিয়ে, এখন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! এক যুবতী ইন্টার্নের দোষেই সেই গবেষণাগারের চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এসেছে বাদুড়ের দেহে থাকা সেই মারণ ভাইরাস। করোনা। তিনিই করোনার ‘পেশেন্ট জিরো’। এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি এমনটাই। কীভাবে এই ভাইরাস বাইরে বেরিয়ে এল, তার বিবরণ মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১১ সালের বিখ্যাত হলিউড সিনেমা ‘কন্টাজিয়নে’র কথা। স্টিভেন সোডারবার্গ পরিচালিত ওই সিনেমাটিতেও গোটা বিশ্বে এক অজানা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল বাদুড় থেকে। বাস্তবের ঘটনাও তার থেকে কোনও অংশে কম নয়।
করোনার আঁতুড়ঘর চীনের উহান। এতদিন মনে করা হচ্ছিল, এখানকার এক ‘সি ফুড মার্কেট’ থেকেই ছড়িয়েছে এই মারণ ভাইরাস। কিন্তু খটকা ছিল অন্য এক জায়গায়। এই বাজারে বাদুড় বিক্রি হয় না। আর বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারছিলেন, বাদুড় থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে সেই খটকা আর রইল না। তাদের দাবি, গবেষণাগার থেকে নজর সরাতেই সামুদ্রিক প্রাণীর বাজার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল।
উহানে ওই গবেষণাগারে অবশ্য কোনও জৈব মারণাস্ত্র তৈরির চেষ্টা চলছিল না। পরীক্ষার বিষয় ছিল বাদুড়ের শরীরে থাকা এক ভাইরাস। ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় চীন যে আমেরিকার থেকে কোনওভাবেই পিছিয়ে নেই, তা প্রমাণ করার চেষ্টায় ছিলেন সেখানকার বিজ্ঞানীরা। সেখানেই শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতেন এক যুবতী। সামান্য ইন্টার্নের জন্য সুরক্ষার তেমন কোনও বন্দোবস্তও ছিল না। করোনা কতটা সংক্রামক ও ভয়ঙ্কর, তখনও তা অজানাই ছিল। কাজ করতেই করতেই আক্রান্ত হন ওই যুবতী। খুব সম্ভবত তিনি তা বুঝতেও পারেননি। গবেষণাগারে অতি সতর্কতা ও নিরাপত্তার অভাব থাকায় সংক্রমণ নিয়ে বাইরেও বেরিয়ে পড়েছিলেন ওই ইন্টার্ন।
যুবতীর থেকেই সংক্রমণ ছড়ায় তাঁর প্রেমিকের শরীরে। বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে উহানের ওই ‘সি ফুড মার্কেটে’ যান তিনি। তার পরের ঘটনা আমাদের সকলেরই জানা। প্রথমে আক্রান্ত হন বাজারের এক মহিলা চিংড়ি বিক্রেতা। তারপর একে একে বিক্রেতাদের অনেকে। সর্দি-জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছড়াতে থাকে সংক্রমণ। তারপর ধাপে ধাপে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে করোনা।
করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকার নেওয়ার আগে থেকেই এর উৎপত্তি নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। উঠে এসেছে নানান তত্ত্ব। তবে সবই অস্বীকার করেছে চীন। কিন্তু এবার বিষয়টি নিয়ে যে দাবি উঠেছে, তা বাস্তবের অনেকটাই কাছাকাছি। শুক্রবার স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেদেশের সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, উহানের ল্যাব থেকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে যে রিপোর্ট সামনে এসেছে, সেসম্পর্কে নিশ্চিত হতে যাবতীয় তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। এনিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলে জানালেও আলোচনার বিষয়বস্তু খোলসা করেননি তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি শুধু বলতে পারি, এটা চীন থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে। যার ফল ভোগ করছে ১৮৪টি দেশ।’ এরপরেই উহানের লেভেল-৪ ল্যাবকে আর অর্থ সাহায্য করা হবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘ওবামা প্রশাসনের আমলে ৩৭ লক্ষ মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য করা হয়েছিল। আমরা দ্রুত তা বন্ধ করব।’ চীনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অবশ্য জানিয়েছেন, এই অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই। মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই এসব দাবি করা হচ্ছে।
২০১৫ সালে ৪ কোটি ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার ব্যয়ে শহরের এক প্রান্তে তৈরি উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি সম্পূর্ণভাবে চালু হয় ২০১৮ সালে। এখানকার সেন্টার ফর ভাইরাস কালচার কালেকশন হল এশিয়ার বৃহত্তম ভাইরাস ব্যাঙ্ক। যেখানে রয়েছে ১ হাজার ৫০০টির বেশি ভাইরাসের নমুনা। ফলে করোনার মতো ভাইরাস হাতে এলে তাও যে এই গবেষণাগারেই রাখা হবে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। উচ্চ নিরাপত্তা বিশিষ্ট ওই ল্যাব থেকে ‘পেশেন্ট জিরো’র মাধ্যমে বা অন্য কোনওভাবে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে কি না, তা খুঁজে বের করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।