দিল্লিতেই থেকে যাচ্ছেন প্রণব
আনন্দবাজার:: রাজপথ, রাইসিনা হিলস, দিল্লি- ১০০০০৪। ঠিকানা আপাতত এই। কিন্তু এই ঠিকানা ছাড়ার পর কোথায় যাবেন তিনি?
জল্পনা অনেক রকম ছিল। কেউ বলেছিলেন, বীরভূমের মিরাটি গ্রামেই ফিরবেন। কেউ বলেছিলেন, মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে বাংলোটা বানিয়েছেন অবসর যাপনের জন্যই। কেউ বলছিলেন, কলকাতাই আদর্শ জায়গা হবে।
কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়াদ ফুরনোর বেশ খানিকটা আগেই সে জল্পনার অবসান হল। প্রণব মুখোপাধ্যায় অবসর জীবন দিল্লিতেই কাটাবেন, মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেল বিষয়টা। তিনি যে দ্বিতীয় বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়েও থাকছেন না, স্পষ্ট হয়ে গেল তাও।
নয়াদিল্লির ৩৪, এ পি জে আব্দুল কালাম রোডের বাংলোটাকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অবসর আবাস হিসেবে বরাদ্দ করছে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। রাষ্ট্রপতি চাইলে ওই বাংলোর ঢালাও সংস্কার হবে বলেও জানা গিয়েছে।
পূর্বতন ঔরঙ্গজেব রোড তথা বর্তমান এ পি জে আব্দুল কালাম রোডের ওই বাংলো শেষ বার বরাদ্দ হয়েছিল লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার পি এ সাংমার নামে। চলতি বছরেই প্রয়াত হয়েছেন সাংমা। কিন্তু মেন গেটে এখনও সাংমার নেমপ্লেট। বাংলোটি এখনও পর্যন্ত সাংমার পরিবারের হাতেই। পূর্ণ অ্যাজিটক সাংমার দীর্ঘ দিনের নির্বাচনী ক্ষেত্র মেঘালয়ের তুরা থেকে জয়ী হয়ে এখন লোকসভার সদস্য তাঁর ছেলে কনরাড সাংমা। কনরাড ওই বাংলোতেই থাকছেন। কিন্তু ৩৪, আব্দুল কালাম রোডের ওই বাংলো ভারত সরকারের টাইপ-এইট প্রপার্টি, অর্থাৎ সর্বোচ্চ স্তরের সরকারি আবাসন। প্রথম বার সাংসদ হয়েই কেউ টাইপ-এইট প্রপার্টিতে থাকতে পারেন না। তাই কনরাড সাংমাকে ওই বাংলো ছাড়তে বলেছে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। পরিবর্তে কনরাডকে সাংসদদের জন্য নির্দিষ্ট আবাসন দেওয়া হবে। আর ৩৪, এ পি জে আব্দুল কালাম রোডের ওই সুবিশাল বাংলোকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অবসর আবাস হিসেবে সাজিয়ে তোলা হবে।
রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়াদ এখনও বেশ খানিকটা বাকি। ২০১৭-র জুলাই মাস পর্যন্ত কার্যকাল তাঁর। কিন্তু নগরোন্নয়ন মন্ত্রক বলছে, রাষ্ট্রপতি পদে প্রণববাবুর মেয়াদ ফুরনোর খানিকটা আগেই তাঁর জন্য সাজিয়ে-গুছিয়ে অবসর আবাস তৈরি রাখতে চায় সরকার। তাই এখন থেকেই তোড়জোড় শুরু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন মঞ্চে একাধিক বার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বার বার বলেছেন, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো এক জন অভিজ্ঞ রাজনীতিককে দেশের শীর্ষ সাংবিধানিক পদে পেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁকে অভিভাবকের মতো পথ দেখিয়েছেন বলেও মোদী মন্তব্য করেছেন। নরেন্দ্র মোদীর এই সব মন্তব্য কিছুটা জল্পনার সৃষ্টি করেছিল রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হওয়া নিয়ে। আজীবন কংগ্রেসি প্রণব মুখোপাধ্যায়কেই রাষ্ট্রপতি পদে আবার চাইবেন সঙ্ঘের চোখের মণি নরেন্দ্র মোদী— এমন কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিল। তবে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক আব্দুল কালাম রোডের টাইপ-এইট বাংলোকে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্য অবসর আবাস হিসেবে সাজিয়ে তোলার তোড়জোড় শুরু করতেই, সব জল্পনায় ইতি।
প্রণববাবুর দ্বিতীয় বার রাষ্ট্রপতি হওয়ার জল্পনাতেই যে শুধু ইতি পড়েছে, তা কিন্তু নয়। অবসরের পর প্রণববাবু বাংলায় ফিরে আসবেন বলে যে জল্পনা ছিল, ইতি পড়েছে তাতেও। কোনও কোনও মহলের ধারণা ছিল, ‘কীর্ণাহারের ব্রাহ্মণ সন্তান’ অবসর জীবনটা কীর্ণাহারের মিরাটি গ্রামেই কাটাবেন, সেখানেই তৈরি হবে অবসর আবাস। কারও ধারণা ছিল, অবসর আবাস যেখানেই তৈরি হোক প্রণববাবু থাকবেন শেষমেষ রঘুনাথগঞ্জে। জঙ্গিপুরের সাংসদ থাকাকালীন নিজের কেন্দ্রে গঙ্গাতীরবর্তী ছোট্ট শহর রঘুনাথগঞ্জে যে নিরিবিলি, ছিমছাম বাংলো তৈরি করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়, অবসর তিনি নাকি সেখানেই কাটাবেন। কেউ কেউ আবার বলতেন, কলকাতার ঢাকুরিয়ার ফ্ল্যাটটাই অবসর জীবনের পক্ষে আদর্শ।
কিন্তু, প্রণব মুখোপাধ্যায় বেছে নিলেন সেই শহরকেই, যে শহরে তিনি সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সিংহভাগ সময়টা কাটিয়েছেন, যে শহরে বসে দশকের পর দশক গোটা ভারতের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেছেন।