Main Menu

আমেরিকায় মুসলমানদের ওপর ঘৃণাজনিত হামলা ৬৭ ভাগ বৃদ্ধি

+100%-

14794ডেস্ক ২৪::: মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা পরিসংখ্যান দিয়ে সোমবার বলেছে, দেশটিতে মুসলমানদের ওপর ঘৃণাজনিত হামলার মত অপরাধের পরিমাণ গত এক বছরে ৬৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ নাইন ইলেভেনে টুইন টাওয়ার হামলার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত মুসলমানদের ওপর ঘৃণাজনিত অপরাধের রেকর্ড পর্যালোচনা করে এফবিআই এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২০১৪ সালে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের ওপর এধরনের হামলার ঘটনা ঘটে ৫ হাজার ৪৭৯টি, এক বছরেই এ হার ৬ দশমিক ৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে গত বছর হামলার ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৮৫০টি। অথচ বিগত ২০০০ সালে এধরনের হামলার ঘটনা ছিল অতি নগন্য। বিশেষ করে সদ্য সমাপ্ত মার্কিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এধরনের হামলার ঘটনা আরও বেড়ে যায়।

গতবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে প্যারিস, সান বারনারডিনো, ক্যালিফোর্নিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা ছাড়াও দেশটিতে মুসলমান অভিবাসীদের বহিষ্কারে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনি প্রচারণায় যে হুঙ্কার ছাড়েন তাকে দায়ী করা হয়। সমালোচকরা বলছে ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য মুসলমানদের ওপর ঘৃণাজনিত হামলার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন পোভার্টি ল’ সেন্টারের মার্ক পটক বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত সেলিব্রেটি বা পাবলিক ফিগার হয়েও মুসলমানদের সম্পর্কে যেভাবে ঘৃণাজনিত বক্তব্য রাখেন তা শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসে রুপান্তরিত হয়। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্নস্থানে মুসলমানদের ওপর ২৫৭টি হামলার ঘটনা ঘটে যা এর আগের বছর ছিল ১৫৪টি। অর্থাৎ এক বছরেই এ হামলার হার বেড়েছে ৬৭ ভাগ। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের ওপর হামলার সংখ্যা ছিল ৪৮১ ভাগ।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনের মুখপাত্র ইব্রাহিম হুপার বলেন, গতবছর মুসলমানদের ওপর ঘৃণাজনিত হামলার সংখ্যা বৃদ্ধিতে তিনি আশ্চর্য হননি। কারণ এধরনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা দেখছি গতবছরের শেষ দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে যায়। এবং এধরনের হামলা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বরং নির্বাচন শেষ হবার পর মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনায় গতি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত ৮ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের দিন থেকেই বিভিন্নস্থানে বর্ণবৈষম্য ও ধর্মবিরুদ্ধ হামলার ঘটনা ঘটতে শুরু করে। পেনসিলভানিয়ার ইয়র্ক কাউন্টিতে একটি ভকেশনাল স্কুলের দুজন ছাত্র ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতীক বহন করার সময় তাদের একজন ‘সাদাদের ক্ষমতা’ বলে চিৎকার করতে থাকে এবং এ দৃশ্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়ে পড়ে।

মেরিল্যান্ডের সিলভার স্প্রিংএ এপিসকোপাল চার্চের সামনে এক ব্যক্তির হাতে একটি ব্যানারে স্প্যানিশ ভাষায় লেখা ছিল, ‘ট্রাম্প ন্যাশন, হোয়াইটস অনলি’। ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস, সান দিয়াগো ও সান জোসে হিজাব পরিহিতা নারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সান দিয়াগো ভার্সিটির ক্যাম্পাসে একজন মুসলিম নারীর গাড়ি দুই ব্যক্তি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ওই নারী তখন ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে তার বক্তব্য দিচ্ছিলেন। একই সময় শিকাগোতে একজন কালো মানুষ আরেকজন সাদা মানুষকে পেটাতে থাকে এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার জন্যে গালমন্দ করতে থাকে। এদৃশ্য একটি ভিডিও টেপে ছড়িয়ে পড়ে।

এফবিআই’এর প্রতিবেদন অনুসারে বেশিরভাগ হামলা ঘটে মুসলমানদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট অনুমান বা আন্দাজ থেকে। ৪ হাজার ২১৬টি ঘৃণাজনিত হামলার ঘটনা ঘটেছে জাতি বা জাতিগত বিরোধিতার কারণে। এর মধ্যে ৫২ ভাগ হামলার সঙ্গে জড়িত কালো, ১৮ দশমিক ৭ ভাগ সাদা ও ৯ দশমিক ৩ ভাগ হামলা হয়েছে হিস্পানিক বা ল্যাটিনোদের দ্বারা। ইহুদিদের ওপর হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ ভাগ। এমনকি পক্ষপাত যৌন প্রবৃত্তি জড়িত ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ৩ ভাগ।

যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজ এধরনের হামলার তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা আশঙ্কা করছেন ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন বিচার বিভাগকে আমূল পরিবর্তন করতে পারেন। বিশেষ করে এটা ব্যবহার হতে পারে পুলিশের মাধ্যমে বা ঘৃণাজনিত হামলার ব্যাপারে। স্টিভেন ব্যাননকে হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর এ আশঙ্কা আরও বেড়ে গেছে। কারণ স্টিভ ব্যানন ব্রেইটবার্ট নিউজ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন এবং ওয়েবসাইটটি বরাবরই সাদাদের পরিচয় ও অধিকার সংরক্ষণ ও বহু সংস্কৃতির বিপক্ষে কাজ করে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে মানহানির বিরুদ্ধে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান এ্যান্টি-ডিফামেশন লিগের কর্মকর্তা মাইকেল লিবারম্যান বলেছেন, এধরনের হামলা যাতে না ঘটে সেজন্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ফেডারেল এজেন্সিকে নির্দেশ দেয়া ছাড়াও কম্যুনিটি মিটিং করে সজাগ করা হচ্ছে। এধরনের ঘটনা ঘটার সাথে সাথে তা তদন্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বরং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এসব ঘটনার যে পরিসংখ্যান এফবিআই’এর কাছে পাঠাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে গত বছর তা ৩ ভাগ হ্রাস পেয়েছে।

তবে আরেক তদন্তে দেখা গেছে গত ৬ বছরে ১৭ ভাগ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে মুসলিমদের ওপর ঘৃণাজনিত হামলার কোনো প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি। ফলে এফবিআই যে এসব হামলার অনুসন্ধান আদৌ করছে কি না বা এধরনের অবহেলায় হামলার ঘটনা আরও বাড়ছে কি না।

অবশ্য লিবারম্যান আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের এ্যার্টনিদের আমরা চাপ দিয়ে এধরনের হামলার ঘটনার যথার্থ তদন্ত এবং তা যাতে আর না ঘটে এজন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলব।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মসজিদগুলোতে এযাবৎকালের সর্বাধিক হামলার কথা উল্লেখ করে দি কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক-রিলেশনস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের সময় এসেছে ইসলাম নিয়ে অযথা ভীতি প্রত্যাখ্যান করার। 






Shares