No One Is Perfect
মুহাম্মাদ তাওহীদ উল ইসলাম ::দৈনন্দিন কাজের তাগিদে এক ভদ্রলোককে এক শহর থেকে আরেক শহরে আসা যাওয়া করতে হয়। আর প্রাত্যহিক এই ভ্রমনে তিনি ট্রেনে যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
অন্যান্য দিনের মত তিনি একদিন ট্রেনে করে তার কর্মস্থল হতে নিজ শহরে ফিরছিলেন। পথের একটি স্টেশনে যখন ট্রেন থামলো তখন এক বৃদ্ধ পিতা তার যুবক ছেলেকে নিয়ে ট্রেনে উঠলো। ছেলেটির বয়স ২৫ এর কাছাকাছি হবে। তারা ওই লোকটির পাশের সিটেই বসে। লোকটি তার নিজ সিটে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন। ট্রেন ছাড়ার পর লোকটি লক্ষ্য করলেন ওই বৃদ্ধ লোকের ছেলেটি অস্বাভাবিক আচরণ করছে। সে জানালার দিকে তাকিয়ে তার বাবাকে বলছে, “ বাবা! এই দেখ পাখি উড়ে যাচ্ছে” “বাবা! এই দেখ মাঠে কত ফুল ফুটে আছে”। ছেলেটির এই শিশুসুলভ আচরণ লোকটিকে খানিকটা অবাক ও বিরক্ত করে। লোকটি পুনরায় পত্রিকা পড়ায় মনোযোগ দিল। একটু পরই লোকটি খেয়াল করলো ছেলেটি তার পত্রিকার একটা পৃষ্ঠা টেনে নিয়ে তার বাবাকে বলছিল “দেখ বাবা! আমি এখানের সব লেখা পড়তে পারছি”
একটা প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের এধরনের আচরণে লোকটি খুব বিরক্ত হল এবং অনেকটা জোরপূর্বক ছেলেটির হাত থেকে পত্রিকাটি কেড়ে নিলো। তারপর সে রাগান্বিত স্বরে ছেলেটির বাবাকে বলল, “আপনার ছেলেকে নিয়ে এভাবে ট্রেনে না ঘুরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান”
তখন ছেলেটির বৃদ্ধ বাবা মুচকি হেসে লোকটিকে বলল, “আমার ছেলের এমন আচরণের জন্য আমি দুঃখিত। আসলে আমরা দুজন ডাক্তারের কাছ থেকেই আসছি। আজ আমার ছেলের চোখের অপারেশন ছিল। ১০ বছর পর তার অন্ধকার জগতে আজ আলো ফিরে এসেছে, সে আজ তার নিজ চোখে পৃথিবীকে দেখছে। চারপাশের সব কিছুই আজ তার কাছে অসাধারন মনে হচ্ছে। এই কারণেই সে এমন শিশুসুলভ আচরণ করেছে”।
লোকটি এই কথাগুলো শুনে বিস্মিত হল, সে বুঝতে পারলো তার আচরনটা ছেলেটার প্রতি মোটেই ভালো ছিল না। সে তার ভুল বুঝতে পেরে বৃদ্ধ বাবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলো। এরপর ট্রেন ভ্রমণের বাকি সময়টুকুতে লোকটি ওই ছেলেটার সাথেই সময় কাটালো, চারপাশের প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে তাদের বাকি সময়টুকু অসাধারনভাবে কেটে গেল। এই ভ্রমণটাই হয়ে গেল তাদের উভয়ের জীবনের শ্রেষ্ঠ ভ্রমন। ছেলেটার আনন্দটা ছিল নিজের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবার, আর লোকটার আনন্দটা ছিল নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে সংশোধন করতে পারার!
আমাদের মধ্যে অনেকেই চারপাশের অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই সে ব্যাপারে নেতিবাচক ধারনা পোষণ করে বসি, অথচ তা কেন ঘটছে? যারা করছে তারা কেনই বা এমন করলো সেটা ভাবার সময় বোধহয় আমাদের হয়ে ওঠে না। সবকিছুকে নিজের মত চিন্তা করতেই আমরা পছন্দ করি, কখনো অন্যদের দিকটা চিন্তা করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু আমরা যদি এই সংকীর্ণতাকে দূর করতে পারি তাহলে আমাদের মধ্যেকার ভ্রাতৃত্ববোধ অনেক সুদৃঢ় হতো।
আমরা কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে না, “No One Is Perfect” কিন্তু পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আর সহমর্মিতার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধকে Perfect এর কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারি।
বদলে যাক, পরিপূর্ণতা পাক আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধ, এর মধ্যে দিয়ে যেন বদলাই আমরা।
আল্লাহপাক আমাদের মধ্যেকার ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করুন……
আগস্ট ২০১৩।