রাশেদা পারভিন লস্করের এ প্লাস প্রাপ্তি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হল। যত আত্মবিশ্বাসই থাকুক রেজাল্টের দিন কার না বুক দুরু দুরু কাঁপে! ২০১৫ সালে ইছামতি ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ হতে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে একদিনের জন্যও বসে থাকেনি রাশেদা পারভিন লস্কর। পাঠ্য বই আর সাধারণ জ্ঞান নিয়ে সর্বদাই ব্যস্ত থাকতো। কিন্তু এত কিছুর পরেও এইচ এসসি পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে তার মনের মধ্যে বেশ উৎকণ্ঠা লেগেই থাকতো। অবশেষে ফলাফল প্রকাশিত হল। সবাইকে তাক লাগিয়ে বৃহত্তর জকিগঞ্জের সব কলেজগুলোর মধ্যে একমাত্র রাশেদাই পেল জিপিএ ৫! এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে রাশেদা বলে, “আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমি জিপিএ ফাইব পাব, কেবল এই ঐতিহাসিক সময়ের জন্যই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম”।
সে আরও বলে, “আজ বেলা বাড়ার সাথে সাথে দুশ্চিন্তাও যেন দ্বিগুণ তালে পাল্লা দিচ্ছিল। অবশেষে দুপুর ১২টা। ফোন করলাম প্রিন্সিপাল স্যারকে। স্যার বললেন, “জিপিএ ৫ পেয়েছি”। বিশ্বাস হচ্ছিল না! কিন্তু খবরটি শোনামাত্র সমস্ত শরীরে কী যে শিহরণ বয়ে যাচ্ছিল তা বোঝানো যাবে না। নিজের আত্মবিশ্বাসকে আরও গাঢ় করার জন্য স্যারকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম। স্যার হেসে বললেন-তুমিই একমাত্র নক্ষত্র যে আমাদের কলেজকে জিপিএ ৫ পেয়ে গৌরবান্নিত করেছ। অভিনন্দন! অভিনন্দন!!
রাশেদা ২০১৩ সালে হাফিজ মজুমদার বিদ্যানিকেতন থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল| এ নিয়ে দুটো পাবলিক পরীক্ষায় সে জিপিএ ৫ পেল। তার বাবা মো. হোসাইন আহমদ লস্কর ও মা সাহেলা বেগমের স্বপ্ন নিজের সর্বস্ব দিয়ে হলেও মেয়েকে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করাবেন। মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলবেন।
প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী মো. হোসাইন আহমদ লস্কর । পেশায় শিক্ষক। তিনি নিজের স্বল্প আয়ের সবটুকুই ব্যয় করেন সন্তানদের পড়াশোনার কাজে। তিনি মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে শিক্ষিত নারীরা। কাজেই নারীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত না হলে এ পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে সর্বদাই প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। রাশেদার জিপিএ পাঁচ পাওয়ার খবরে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত নন! তিনি মনে করেন, দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে ভর্তি হয়ে গ্রাজুয়েশনের পরই সেরা কৃতিত্বটি আসবে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেড়ে উঠা রাশেদার এ বিস্ময়ী ফলাফল সম্পর্কে কার প্রভাব রয়েছে জানতে চাইলে সে বলে, এ কৃতিত্বের সবটুকু আমার মা বাবা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও পরিশ্রমের প্রাপ্তি”। উল্লেখ্য, রাশেদার বড় বোন লস্কর হাসিনা পারভিনও বৃহত্তর জকিগঞ্জের মধ্যে এসএসসি ২০০৫ ও এইচএসসি ২০০৭ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিল।
আত্মবিশ্বাসী ও কঠোর পরিশ্রমী রাশেদার ভবিষ্যত লক্ষ্য হল দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ যে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে দেশের সবায় নিজেকে উৎসর্গ করা| এ ব্যাপারে সে সকলের দোয়া প্রার্থী|