সর্বনাশের অন্য নাম “অবৈধ” সম্পর্ক
প্রত্যেকটি মানুষই সমাজের অন্তর্ভুক্ত। সমাজে চলতে গেলে আমাদের অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। আমরা অনেক নিয়ম কানুন মেনে সমাজে একজন উঁচু শ্রেণীর মানুষ রূপে পরিচিতি পাই এবং সমাজের মানুষের সাথে গড়ে উঠে সম্পর্ক। এরই মাঝে সম্পর্কের বেড়াজালে জড়িয়ে অনেকে তৈরি করে ফেলেন অবৈধ কিছু সম্পর্ক। এই সকল সম্পর্ক আমাদের সমাজে দেখা হয় ঘৃণার চোখে। কিন্তু নানান পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে অনেকেই এইসকল অবৈধ সম্পর্কের দিকে ঝুঁকে পড়েন ক্রমশ। প্রতিনিয়তই বেড়ে যাচ্ছে অবৈধ ও অন্যায় সম্পর্কের নানান কাহিনী।
দুষ্টুমি করে বলা হয় দেবর মানে “দ্বিতীয় বর”, আর শালী মানে নিঃসন্দেহে “আধা বউ”! কিন্তু যতই রসিকতার ছলে বলা হোক, কথা গুলো কি কারো কারো জীবনে রসিকতার পর্যায়ে থাকে? যত দিন যাচ্ছে, সমাজে ক্রমশ বেড়ে চলেছে অবৈধ ও অন্যায় সম্পর্কের হার। অনেকে বলবেন-”ভালোবাসা অবৈধ হয় না!” কিন্তু নিজের সন্তানের বন্ধু/বান্ধবীর সাথে কিংবা বাড়ির অপ্রাপ্ত বয়স্ক কাজের মেয়েটির সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলাটা আসলে কেমন ভালোবাসা? আদৌ কি ভালোবাসা?
চলুন তবে চিনে নেয়া যাক আমাদের সমাজে ক্রমশ বেড়ে চলা অবৈধ কিছু সম্পর্ক।
পরকীয়ার সম্পর্ক
বিয়ের পরে স্বামী বা স্ত্রীর অন্য কোনো নারী বা পুরুষের সাথে যে প্রেমের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেটিই আমরা পরকীয়ার সম্পর্ক হিসেবে জানি। একটি সাজানো গোছানো সুন্দর বিবাহবন্ধনে মারাত্মক বিষের মত কাজ করে পরকীয়ার অবৈধ সম্পর্ক। পরকীয়ার সম্পর্ক অনেক কারণেই গড়ে উঠতে পারে।স্বামী/স্ত্রীর একে ওপরের প্রতি ভালোবাসা না থাকা, পারিপার্শ্বিক অনেক কারণ এমনকি শুধুমাত্র জীবনে একটু আনন্দ নিয়ে আসার কারনেও অনেকে পরকীয়ার মত অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে? বিবাহ বন্ধনের মতো পবিত্র একটি বন্ধনেও আমরা নিয়ে আসছি পরকীয়ার মতো অপবিত্র একটি সম্পর্ক।
দেবর এবং ভাবীর প্রেমের সম্পর্ক
আগের যুগে দেবরদের জন্য ভাবা এবং বলা হতো ভাবী মায়ের মতো হয় এবং মায়ের পরে ভাবীর স্থান। কিন্তু বর্তমানের প্রেক্ষাপটে যখন ভাবী এবং দেবরের সম্পর্কটিতে যখন আসে ‘দেবর মানে দ্বিতীয় বর অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বামী’ তখন আমরা বুঝি আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের অধঃপতন কতোখানি। স্বামীর অনুপস্থিতিতে দেবর-ভাবীর মধ্যে গড়ে উঠা কোনো অবৈধ সম্পর্ককে আমাদের সমাজে দেখা হয় ঘৃণ্য দৃষ্টিতে। যারা এই ধরণের অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে যান তারা কি একবারও ভেবে দেখেন না এই ধরণের অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের কোনো মানসিকতা প্রকাশ পাচ্ছে।
শালী এবং দুলাভাইয়ের প্রেমের সম্পর্ক
অনেকই মজা করে বলেন, ‘শালী হচ্ছে অর্ধেক বউ’। কিন্তু এই কথাটি বলে আমরা কি অর্থ প্রকাশ করছি, তা কি কেউ ভেবে দেখেছি? তা সে যতই মজা করে বলা হোক! বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই শালী-দুলাভাইয়ের এই ধরণের অবৈধ সম্পর্কের রমরমা কাহিনী অনেকেরই নজরে আসে। আবার অনেক অবৈধ সম্পর্কই পড়ে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। কিন্তু সম্পর্ক আড়ালে থাকলেও বিবেক তো আর আড়ালে থাকে না। তারা কি নিজের বিবেককেও মেরে ফেলে এই কাজটি করছেন? বিশেষ করে মেয়েরা। একজন পুরুষ মানুষ, তার নজর এদিক সেদিক যায়, নিজের শালী না হলে অন্য একটি মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে নিতে তার বেশি সময় লাগবে না। কিন্তু মেয়েটি? সে কি একবার ভেবে দেখেছে যে সে তার নিজের বোনের ঘর ভাঙার কাজে লিপ্ত হচ্ছেন? মানসিকতা কতোটা নিম্নমানের হলে এই কাজটি করা সম্ভব।
নিজের ছেলেমেয়ের বন্ধুবান্ধবের সাথে সম্পর্ক
সব চাইতে নিকৃষ্টতম যে অবৈধ সম্পর্কটি আমাদের সমাজে দেখা যায় তা হচ্ছে নিজের ছেলে বা মেয়ের বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে গড়ে তোলা অবৈধ সম্পর্ক।
সম্পর্কটি খুঁজতে বেশিদূর যেতে হবে না, বিখ্যাত লেখক ‘হুমায়ূন আহমেদের’ ঘরের দিকে তাকালেই আমরা বুঝে নিতে পারবো। যদিও তিনি সম্পর্কটিকে বৈধ নাম দিয়েছেন বিয়ে করে। কিন্তু এই ধরণের সম্পর্কে নিজের সন্তানের ওপর কী ধরণের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় তা কেউই বুঝতে পারেন না। কোন ধরণের মানবিক অবক্ষয় হলে একজন মানুষ তার নিজের সন্তানের বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে এই ধরণের অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করতে পারেন তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? আমরা তাহলে কোন সমাজে বাস করছি।
গৃহ-পরিচালক বা গৃহ পরিচালিকার সাথে সম্পর্ক
আমাদের সমাজে উঁচু শ্রেণীর মানুষের টাকার দাপটে এই ধরণের অবৈধ সম্পর্ক ঢাকা পরে গেলেও এই ধরনের ঘটনা আমাদের অজানা নয়। বাসায় কাজ করতে আসা গৃহ-পরিচালক বা গৃহ পরিচালিকার সাথে বাড়ির কর্তা বা কর্ত্রীর গড়ে ওঠা অবৈধ সম্পর্কের পরিনতি হিসেবে কষ্ট পোহাতে হয় গরীব মানুষটিকেই। কিন্তু এই ধরণের ঘৃণ্য কাজের মূল ব্যক্তিটি সচরাচর রয়ে যায় আড়ালে।