প্রশ্ন ফাঁস আন্দোলনের শেষ অধ্যায় ::এ্যাড, সিরাজী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক
১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৫, প্রশ্ন ফাঁসের নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে প্রশ্ন ফাঁসের স্বরূপ প্রকাশ করেছে। আবার ফাঁসকৃত প্রশ্নেই পরীক্ষা নিয়েছে। ফলে যারা প্রশ্ন পেয়েছে, তারা সর্বোচ্চ নম্বরে উত্তীর্ণ হয়েছে। যে পরিমাণ নম্বর পেয়েছে, তা অবিস্মরণীয়। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উত্তীর্ণ ছাত্রদের অধিকাংশই বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতা ও তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের সন্তান-সন্তÍতি। আবার অনেকে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন কিনেও মেডিকেলের মতো স্পর্শকাতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এতে সরকারের রাজনৈতিক শক্তি একধাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পাশ করা মেধারী ছাত্ররা যথেষ্ট মেধা সত্তেও তাদের স্বপ্নের সিঁড়ি থেকে ছিটকে পড়েছে। তারা মেধার অধিকার প্রতিষ্ঠায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে। ক্রমে তা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। ইতিমধ্যে এ আন্দোলনটি সারাদেশ ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।
শেষ মুহুর্তে সরকার এ আন্দোলনকে নিজের জালে আটকে ফেলেছে। প্রথমত নানা কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছে। হীন থেকে হীনতর চক্রান্ত করেছে। সরকার তার বেতনভুক্ত ও পোষ্য ব্যক্তিদেরকে আন্দোলন সংগ্রামে প্রথম সারিতে রেখেছে। এমরান এইচ সরকার, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, প্রফেসর আনু মুহম্মদ প্রমূখ এ সারির ব্যক্তিবর্গ। তারা সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে বিরোধী নেত্রী রওশন এরশাদের মতোই ভূমিকা পালন করে থাকেন। তারা সরকার বিরোধী যে কোনো আন্দোলনে অগ্রগামী থাকেন। আন্দোলনটি যখন সরকারের বিরূদ্ধে মারাত্মক রূপ ধারণ করে, তখন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তা বানচালের চক্রান্ত করেন। ঠিক এমনিভাবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের আন্দোলনেও তারা সবার আগে ছিল। আন্দোলনের কঠিন মুহুর্তে তারা গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের মিথ্যা প্ররোচনায় বহু মেধাবী সাধারণ ছাত্র সরকারের উম্মত্ত পুলিশ বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অসংখ্য ছাত্র কারা প্রকোষ্ঠে বন্দি হয়েছে। আবার প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত সরকারের বড় বড় রাঘব বোয়ালদের নাম বেরিয়ে আসার ভয়ে একজন কর্মকর্তাকে বন্দি থাকাবস্থায় শহীদ করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনানুসারে স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধের শামিল। এ জঘন্য অপরাধ ঢাকতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার বেতনভুক্ত পোষ্য বাহিনীর অধীনে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। প্রফেসর আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি। বিএমএ সহ সভাপতি আব্দুর রউফের নেতৃত্বে আরেকটি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। উভয় কমিটি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বজায় রেখে যথারীতি কাজ করে যাচ্ছে। তারা ছাত্রদেরকে উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করতে বলেছে। চাহিদা পূরণ না হলে তারা যথারীতি রিপোর্ট দাখিলের হুমকিও দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিএমএ কমিটির কার্য্যক্রম চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছেছে। ছাত্ররা তাদেরকে পর্যাপ্ত প্রমাণ সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে প্রফেসর আনু মুহাম্মদের কমিটি আগামী ৩০ অক্টোবর গণশুনানী ও ২০ নভেস্বর প্রতিবেদন দাখিলের ঘোষণা দিয়েছে। বাইরে হাক-ডাক থাকলেও এ ঘুড়ির নাটাইও সরকারের হাতেই রয়েছে। শেষ পর্যন্ত মেডিকেল পুণঃ ভর্তি পরীক্ষা কিভাবে বাতিল করা হয়, তাই দেখার পালা।
মেধা বঞ্চিত ছাত্ররা যে আন্দোলনে নেমেছে, তা কি অবৈধ? কখনো নয়। তারা শুধু একটি সুন্দর ও সুষ্ঠ ভর্তি পরীক্ষার জন্য আন্দোলন করছে। সরকার এ বৈধ আন্দোলনকেও স্তিমিত করে দিচ্ছে। এভাবেই স্তিমিত হয়ে গেছে হাজার হাজার প্রবঞ্চিত বিডিআর জোয়ানের হাহাকার আর্তনাদ। বৃথা প্রমাণ হয়েছে, ১৯৭১ এর ত্রিশ লাখ শহীদের জীবনদান ও দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনের আত্মত্যাগ। বত্রিশ লাখ আত্মত্যাগীর বিপরীতে তালিকাভুক্ত হয়েছে মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাতে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। আর মেধার অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনকারীদের বিরূদ্ধে শাণিত হয়েছে খড়গ কৃপাণ।
মুলত সরকারের কোনো চক্রান্তই মেধাবী ছাত্রদেরকে পিছু হটাতে পারবেনা। যতক্ষণ নাটকীয় ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুণরায় সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা না হবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে ‘৫২ র ভাষা আন্দোলনের মতো এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। ১৯৭১ এর ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের মতো সংগ্রামী জনতা আবার প্রাণ বিসর্জন করবে। তবু এ আন্দোলন চলবে, ইনশাল্লাহ। এটি কোনো জঙ্গি আন্দোলন নয়, এটি বিদ্রোহও নয়। এটি অধিকার আদায়ের জন্য একটি শন্তিপুর্ণ অন্দোলন।