কোনটা মূর্তিপূজা অার কোনটা নয়
অাল্লাহ এমন একটি সময়ে তাঁর শেষ রাসূল ও নবী মুহাম্মদ সাঃকে অারবের ভূখন্ডে সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত হিশেবে পৃথিবীতে পাঠালেন, যখন সেই যুগটাকে বলাই হতো অাইয়্যামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ । সেই সময়টিতে অারবে মানবতা ছিলো ভূলুন্ঠিত, ভালোবাসা ছিলো উপেক্ষিত, দুর্বলেরা ছিলো শোষিত, নির্যাতিত অার নারীরা ছিলো চরম অবহেলিত । অারবের সমাজব্যবস্থার এই বেহাল দশার কারণ কী ছিলো? তাঁরা নামায (অারবীতে সালাহ) পড়তো না বলে? হজ্জ করতো না বলে? অাল্লাহকে অাল্লাহ বলে স্বীকার করতো না বলে? ইসলামী লেবাস ছিলো না বলে? সন্তানদের নাম ইসলামী রাখতো না বলে । না, এর কোনোটিই সে কারণ ছিলো না । তাঁরা এসব মানতো এবং পালনও করতো। তাদের সন্তানদের নাম অাব্দুল্লাহ (অাল্লাহর বান্দা) রাখতো, হজ্জের মৌসুমে তারা ঠিকই হজ্জ করতো, কাবাঘর তাওয়াফ করতো, এমনকি কোন গোত্র কাবাঘরে হাজরে অাসওয়াদ বা কালো পাথর প্রতিস্থাপন করবে সেটা নিয়ে বাক-বিতর্ক, যুদ্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতো । তাহলে এমন কোন দোষ ছিলো যার কারণে তাদের সমাজব্যবস্থার এই করুণ দশা হয়েছিলো, এমন কী করেছিলো যার কারণে অাল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা হিশেবে বিশ্বাস করার পরেও অাল্লাহ তাদেরকে কাফির, মুশরিক বলেছিলো?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে অামাদেরকে প্রথমে জানতে হবে অাল্লাহ কোন কোন পরিস্থিতি সাপেক্ষে কোনো গোত্রে নবী-রাসূলদের প্রেরণ করেছেন এবং তাঁরা এসে প্রথমে কোন জিনিসটিকে অতিগুরুত্বপূর্ণ হিশেবে সবার সামনে তুলে ধরেছেন । অাল্লাহ তখনই প্রত্যেক গোত্রের মধ্যে স্ব স্ব ভাষায় স্ব স্ব জাতির পথপ্রদর্শক (হাদী) হিশেবে নবী-রাসূলদের প্রেরণ করেছেন যখন সে গোত্র অাল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার (দ্বীন) মূলভিত্তি অর্থ্যাৎ অাল্লাহর সার্বভৌমত্ব বা তওহীদ ভুলে গিয়ে অন্যায়-অবিচার-অশান্তিতে নিমজ্জিত হয়েছিলো । কারণ যখন সার্বভৌমত্ব ভুলে যাওয়া হয় তখন মূলত সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের মানদন্ড পরিবর্তন হয়ে বিপরীত হয়ে যায়, সত্য হয়ে যা মিথ্যা অার মিথ্যা হয়ে যায় সত্য । ধীরে ধীরে এই মানদন্ড সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে ঐ সমাজ হয়ে উঠে দারুল জাহান্নাম । তাই অাল্লাহ ঐ সমাজ বা গোত্রে নবী-রাসূলদের প্রেরণ করার সময় সর্বপ্রথম যে নির্দেশটি প্রদান করেন সেটা হলো অাল্লাহর সার্বভৌমত্ব বা তওহীদ । অাল্লাহ কোরঅানে বলেছেন, “আপনার (মুহাম্মদ সাঃ) পূর্বে আমি (আল্লাহ) যে বার্তাবাহকই প্রেরণ করেছি, তাঁকে এ আদেশেই প্রেরণ করেছি যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থ্যাৎ আমি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ (সার্বভৌমের মালিক বা হুকুমদাতা) নেই । ” [সূরা আম্বিয়াঃ ২৫)] তাই রাসূল মুহাম্মদ সাঃ আরবের মানুষকে এসেই প্রথমে বললেন না তোমাদের নামায হচ্ছে না, যাকাত হচ্ছে না, রোজা হচ্ছে না, বরং তিনি সর্বপ্রথম তওহীদের বালাগ দিলেন, অর্থ্যাৎ কেবলমাত্র এক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে বললেন । কারণ, অারবের মানুষরা তখন অাল্লাহকে সৃষ্টির দেবতা (সূত্রঃ কোরঅান-৩১:২৪, উইকিপিডিয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম) হিশেবে মানতো কিন্তু সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে তারা গোত্রের অাঞ্চলিকতা হিশেবে বিভিন্ন দেব-দেবীদের মানতো । অর্থ্যাৎ জীবনের বিভিন্ন হুকুম-অাহকাম, সিদ্ধান্তের ব্যাপারে যুগ যুগ ধরে চলে অাসা বিভিন্ন দেব-দেবীর নামে চালানো ধর্মপ্রধান বা গোত্রপ্রধানদের হুকুম বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকেই ঠিক মনে করতো । তারা যা বিচার-ফায়সালা করতো সেটাই তর্কের ঊর্ধ্বে সবাইকে মেনে নিতে হতো ।
তৎকালীন সময়ে অারবের উত্তরাঞ্চলীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গোত্রগুলো দুশারা (পর্বতের দেবতা), রুদ (রক্ষক দেবতা), অাতারসামাইন (ভেনাস) প্রভৃতিকে মানতো; অারবের পূর্বাঞ্চলীয় গোত্রগুলো ইনজাক ও মেসকিলাক দেবতার পূজা করতো । অার রাসূল সাঃ এর জন্মনগরী মক্কার কাবাঘরে সেসময়ে হুবাল নামের দেবতা সহ মোটি ৩৬০টি মূর্তি ছিলো । এই হুবালদের সংরক্ষণের দায়িত্ব ছিলো মক্কার কুরাইশদের উপর । তারা মানাফ (সূর্যের দেবতা) নামক দেবতারও পূজা করতো । অাল-লাত, অাল-উজ্জা এবং মানাত – মক্কার এই প্রধান তিন দেবীকে তারা অাল্লাহর কন্যা হিশেবে মানতোএবং এদের পৃথক পৃথক ক্ষমতা অাছে এটা বিশ্বাস করে তাদের মূর্তির পূজা করতো।
এককথায় বলতে গেলে তৎকালীন অারবে মূর্তিপূজার এতোই প্রসার ঘটেছিলো যে, অারবীয় লোকদের ঘরে ঘরে বিভিন্ন অাকৃতির বিভিন্ন মূর্তি রাখা হতো এবং তাদেরকে বিভিন্ন বিপদ-অাপদের ত্রানকর্তা, অাল্লাহর কাছে সুপারিশকারী হিশেবে মানতো । এক গোত্রের সাথে অারেক গোত্রের দেবতা নিয়ে চলতো দ্বন্দ্ব, মতভেদ । জাতীয় ব্যাপারে তাদের নিজস্ব দেবদেবীর নামে চালানো এক গোত্রপ্রধানদের সিদ্ধান্ত অারেক গোত্র প্রধানরা মেনে নিতে পারতো না । এই দ্বন্দ্ব প্রথমে সংঘর্ষে ও পরে যুদ্ধে পর্যন্ত গড়াতো । গোত্রে গোত্রে চলতো রক্তের প্রতিশোধ । এটা মূলত একটি কারণে হয়েছিলো, তারা এক ইলাহ (হুকুমদাতা)-র পরিবর্তে বহু ইলাহে বিশ্বাসী ছিলো । যার কারণে সার্বভৌমত্বের সাংর্ঘষিকতায় প্রতিনিয়ত তাদের এ ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো । অাল্লাহর শেষ রাসূল সাঃ যখন এক অাল্লাহর সার্বভৌমত্ব অর্থ্যাৎ তওহীদের কথা তাদের সামনে বললেন, তাদেরকে এক অাল্লাহকে ব্যক্তি থেকে জাতীয় জীবনে একমাত্র হুকুমদাতা হিশেবে মেনে নিতে বললেন তখন তারা এমনভাবে অাশ্চর্য্য হয়ে গেলো যেন অাকাশ থেকে তারা এসে পৃথিবীতে পড়লো । কিন্তু রাসূল সাঃ এই বক্তব্য বারবার তাদের সামনে উপস্থাপন করায় তারা যাঁকে তাঁর চরিত্র ও ব্যবহারের মাধুর্যতা একসময় অাল-অামিন উপাধি দিয়েছিলো তাঁকেই কিনা পাগল কবি, মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত করলো । অাল্লাহ কোরঅানে সেটা বলেছেন এভাবে, “তারা অাশ্চর্যবোধ করছে যে, তাদের নিকট তাদেরই মধ্য হতে একজন সতর্ককারী অাসলো এবং কাফিররা বলেঃ এতো এক যাদুকর, মিথ্যাবাদী । সে (মুহাম্মদ সাঃ) বহু ইলাহের পরিবর্তে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? এতো এক অাশ্চর্য ব্যাপার ! তাদের প্রধানরা সরে পড়ে এই বলেঃ তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের দেবতাগুলোর পূজায় তোমরা অবিচলিত থাকো । নিশ্চয় এই ব্যাপারটি উদ্দেশ্যমূলক । অামরা তো পূর্বের ধর্মে এরূপ কথা শুনিনি; এটা এক মনগড়া উক্তিমাত্র ।” [সূরা সোয়াদঃ অায়াত ৪-৭] অাল্লাহর রাসূল সাঃ তাদের এই উপহাস, অাশ্চর্যবোধকে তোয়াক্কা না করে বারবার কোরঅানের অায়াত পাঠ করে শোনান, “নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ এক” । [সূরা সাফফাতঃ ৪] মুহাম্মদ সাঃ এর এ অাহ্বানে সামান্য কয়েকজন তওহীদে ফিরে এসেছিলো অার বাকিরা উল্টো মুহাম্মদ সাঃকে উপেক্ষা করে অহংকার করতো অার পাগল কবি বলে উপহাস করতো । যেমনটি অাল্লাহ বলে দিয়েছেন, “যখন তাদেরকে বলা হতো যে, অাল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই তখন তারা অহংকার করতো । এবং বলতোঃ অামরা কি পাগল কবির কথায় অামাদের ইলাহদের বর্জন করবো?” [সূরা সাফফাতঃ ৩৫-৩৬] কিন্তু অাল্লাহ সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “অাল্লাহই সত্য এবং তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা বাতিল (অগ্রহণযোগ্য) ।” [সূরা হাজ্জঃ ৬২, সূরা লুকমানঃ ৩০]
এভাবেই দীর্ঘ কয়েক বছর অাল্লাহর রাসূল সঃ অসহ্য কষ্ট সহ্য করে বহু ইলাহের বিরুদ্ধে সত্য প্রচার চালিয়ে যান । একসময় তিনি পবিত্র কাবাঘরে ৩৬০ টি মূর্তি অপসারণে সমর্থ হন । তওহীদ ভিত্তিক জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য মদীনায় রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পর উনাকে বড় বড় অনেকগুলো যুদ্ধ করতে হয় । যে রাসূল সাঃ ও তাঁর অাসহাবরা একমাত্র অাল্লাহর সার্বভৌমত্ব তথা তওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে এতো সোচ্চার ছিলেন তিনি কখনো চাইবেন তাঁর ও তাঁর অাসহাবদের তিরোধানের পর তাঁর পরবর্তী অনুসারীরা অাবারো মূর্তিপূজায় ফিরে যাক? নিঃসন্দেহে নয় । তাই অাল্লাহর রাসূল সাঃ সে সময়ে মানুষ বা প্রাণির প্রতিচ্ছবি অঙ্কন, মানুষের বা প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণকারণ স্পর্শকাতর বিষয়গুলি খুব জোরদারের সহিত নিরুৎসাহিত করেছেন এবং এ ব্যাপারে জাহান্নামে শাস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন যা অামরা বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে পাই । যদি রাসূল সাঃ এ ব্যাপারে চুপ থাকতেন বা উৎসাহ দিতেন তাহলে একসময়ের বহু ইলাহে বিশ্বাসী পৌত্তালিকরা (মূর্তিপূজক) যে মুহাম্মদ সাঃ এর মূর্তি নির্মান ও তাঁর প্রতিচ্ছবি অঙ্কন করে মুহাম্মদ নামের অারেকটি দেবতার অবতারণা ও সে দেবতার পূজা করবেনা তার নিশ্চয়তা কী? এরা যে শুধু মুহাম্মদ নামের দেবতাটি নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকায় প্রয়োজনে অাবুবকর, উসমান, উমার, অালী, খালিদ প্রভৃতি অাসহাবদের নামে দেবতার অবতারণা করবেনা সেটাও অবিশ্বাসযোগ্য ছিলো না । অনেক ইসলামবিদ্বেষীরা বলে থাকেন মুহাম্মদ চরিত্রটি কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই । কারণ থাকলে তাঁর অন্ততপক্ষে একটা প্রতিচ্ছবি বা ভাস্কর্য পাওয়া যেতো, যেমনটি রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের গৌতম বুদ্ধের । তারা উপরোক্ত বিষয়টি না বুঝার কারণেই এমনটি ধারণা করে থাকে।
পাঠকরা নিশ্চয় অবহিত এ পর্যন্ত যা বলা হয়েছে তা কেবল মূর্তিপূজাকেই কেন্দ্র করে । কিন্তু অাজকের মুসলিম সমাজের অধিকাংশ মানুষই ‘কোনটা মূর্তিপূজা অার কোনটি নয়’ – এ ব্যাপারটি অতি দক্ষতার সহিত গুলিয়ে ফেলেন এবং যার কারণে বর্তমান সময়ে সৃজনশীল ভাস্কর্য, স্থাপত্য ও কলাবিদ্যায় মুসলিমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছে । অার মুসলিমদের মধ্যে যারা শুধুমাত্র মনের জোরে স্থাপত্য ও কলাবিদ্যায় কাজ করছেন তারা মনের ভিতর একটা কিন্তু নিয়ে করছেন । ফলে মনের একদিক থেকে তারা যথেষ্ট নিরুৎসাহবোধ করছেন । এই স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে অামার দুয়েকটি কথা অার অাপনারা সিদ্ধান্ত নিবেন নিজের বিবেক ও অাত্মা দিয়ে । অামরা যে সময়টিতে বসে কথা বলছি সেটা এমন একটি সময় যে সময় পূর্ববর্তী কোনো মানবজাতির নিকট অাসেনি । অামরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে প্রগতিময় সভ্যতায় বসবাস করছি সে সভ্যতা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কল্পনা করতে পারেনি পূর্ববর্তী সভ্যতাগুলোর মানুষ । একসময় মানুষ পায়রার মাধ্যমে, ঘোড়ায় চড়ে পরস্পর যোগাযোগ করতো । অাজ তো চিঠিব্যবস্থাও সেকেলে হয়ে গিয়েছে । ইমেইল ছেড়ে অামরা অাজ ভিডিও চ্যাটিং এর মাধ্যমে পরস্পর যোগাযোগ করি । সামনের দিনে হয়তো মোবাইলে কোনো অডিও কল ব্যবস্থাও থাকবেনা, সব ভিডিও কলে পরিণত হবে । ভাব প্রকাশের জন্য অাগে যারা স্থির চিত্র (স্ট্যাটিক ইমেজ) ব্যবহার করতো তারা কল্পনাও করতে পারেনি যে চিত্র কখনো সচল (ডাইনামিক ইমেজ যেমন অ্যানিমেশন, ভিডি) হতে পারে । অাজ শুধু দ্বিমাত্রিক সচল চিত্র নয়, ত্রিমাত্রিক ধারণা অামাদেরকে এমন চিত্র উপহার দিয়েছে যা বাস্তবতার সাথে পার্থক্য করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে । অাজকে অাপনাকে বেঁচে থাকতে হলে এগুলো স্বীকার করেই বেঁচে থাকতে হবে । চিত্র অাজ কোথায় ব্যবহার হচ্ছে না? খাবারের প্যাকেট থেকে শুরু করে জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট-ভিসা সর্বত্রই । এখন অাপনি যদি এ যুগে এসে বলেন ‘রাসূল সাঃ প্রাণির চিত্র অঙ্কন করতে নিষেধ করেছেন, তাই অামি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবো না’ – তবে তা হবে অাত্মঘাতী বচন । বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত রাসূল সাঃ পঞ্চ ইন্দ্রিয় থাকতে অন্ধত্ব অনুসরণ করতে বলেন নি এমনকি অাল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে বিবেক-বুদ্ধি খাঁটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন । অন্ধ অানুগত্য ইসলামে নেই । রাসূল সাঃ তৎকালীন অারবের অবস্থার কথা চিন্তা করেই চিত্র অঙ্কন ও ভাস্কর্য নির্মাণে নিরুৎসাহিত করেছেন এবং জাহান্নামের শাস্তির কথা বলেছেন । কিন্তু দেখবেন কোরঅানে এটা বলা নেই । শুধু বলা অাছে মূর্তিপূজা করা যাবে না । কোরঅানে অাল্লাহ এ জন্য এটা বলেন নি, কারণ কোরঅান রাসূল সাঃ এর সময় থেকে শুরু করে কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীর সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বশেষ ঐশীগ্রন্থ । অাল্লাহ কি জানেন না যে এমন একটি সময় অাসবে যখন মানুষ ছবিকে তথ্য প্রকাশে ব্যবহার করবে? তিনি কি জানতেন না একসময় মানুষ চিত্র ব্যবহার করবে রোগনিরূপণে ও তা সুস্পষ্টরূপে (যেমনঃ Radiography, Magnetic Resonance Imaging সংক্ষেপে MRI, Nuclear medicine, Photo-acoustic imaging, Tactile imaging, Ultrasound ইত্যাদি ) প্রকাশ করতে, ধাতু-উপধাতুর ধর্ম অাবিষ্কারে, বিভিন্ন ডিজাইনে? অবশ্যই তিনি জানতেন । কারণ তিনি সর্বজ্ঞাত ও মহাজ্ঞানী । তাই তিনি এটা হারাম বা নিষেধ করেন নি ।
সাধারণ জ্ঞানেই ‘মূর্তিপূজা’ শব্দটি দেখেই বুঝা যায় কোনগুলো মূর্তিকে পূজা করা অার কোনগুলো নয় । কেউ বলতে পারবেন একজন মুসলিম তার ছবি ঘরে টানিয়ে সেই ছবিকে ইলাহ বা হুকুমদাতা হিশেবে মেনে নিয়ে তার পূজার্চনা করে? কেউ প্রমাণ দেখাতে পারবেন একজন মুসলিম ভাস্কর্য নিমার্ণ করে সেই ভাস্কর্যকে ইলাহ বা হুকুম দাতা হিশেবে মেনে নিয়ে নিজে বা অন্যকে মেনে নিতে বলেন? কেউ করেনা । তবে হ্যা,যদি কোনো মুসলিম কারো প্রতিচ্ছবিকে, ভাস্কর্যকে সত্য সত্যই ক্ষমতাবান মনে করে তার প্রতি অানুগত্য দেখায় সেটা স্পষ্টত শিরক ও কুফর । এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই । যদিও এটা নিতান্তই অপ্রত্যাশিত ও অসম্ভাব্য ঘটনা । কারণ, এখনকার মুসলিমরা তৎকালীন অারবীয়দের মতো এতো নির্বোধ না যে সূর্যের প্রখরতা দেখে সূর্যকে ‘মানাফ’ বলে তার পূজা শুরু করবে । তাই যারা অতি প্রয়োজনে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে চান না, তারা শুধু নিজেকে প্রশ্ন করুন- অাপনি বা অাপনার কেউ কি এই ছবি ইলাহ বা হুকুমদাতা হিশেবে মেনে তাঁর পূজা করবে? মুসলিম ভাস্কর, চিত্রশিল্পী, ফটােগ্রাফারদের প্রতিও একই প্রশ্ন । এই প্রশ্নের উত্তরে অাপনিই বলে দিতে পারবেন, ‘কোনটা মূর্তিপূজা অার কোনটি নয়’ ।