পশু জবাইয়ে ছোট্ট একটি ভুলে কুরবানি হবে না
ডেস্ক : ত্যাগের মহিমায় আবার এলো পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদের মহিমা পশু কোরবানি। আত্মত্যাগের অনন্য ইবাদত সামথ্যবানদের জন্য ওয়াজিব। তাই কোরবানির পশু সঠিক নিয়মে কোরবানি করা উচিত। পশু কোরবানি নিজ হাতে করাই উত্তম।
কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম ও দোয়া অনেকেই জানেন না। হাদিসে এ সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। তাই কোরবানির আগে সবকিছু জেনে নেয়া উচিত। এ ইবাদত পালনের সময় সামান্য ভুলেও নষ্ট হয়ে যেতে পারে কুরবানি।
কুরবানি মহান আল্লাহ তাআলা নির্দেশ। তিনি কুরআনে এভাবে নির্দেশ দেন- ‘সুতরাং (আপনি) আপনার প্রভুর জন্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার : আয়াত ২)
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এ ইবাদত পালনের সময় সামান্য একটি ভুলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে কুরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সে কারণে খুব সতর্কতার সঙ্গে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানি করা জরুরি।
জবাই করার পর দ্রুত কোরবানি পশুর মৃত্যু নিশ্চিত করতে অনেকেই ঘাড়ের মেরুদণ্ডে আঘাত করেন। এই কাজ ঠিক নয়। এতে পশু কোরবানি না হয়ে তা হত্যায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মনে রাখবেন, জবাইয়ের পর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করলেই পশু নিস্তেজ হয়ে যায়।
জবাইয়ের ওই স্থানে মেরুদণ্ডে ছুরির আগা দিয়ে আঘাত করলে, অনেক সময় পশু স্বাভাবিক মৃত্যুর আগেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। যদি কোনো পশু ওই আঘাতে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় তবে ওই ব্যক্তির কুরবানি আদায় হবে না।
কোরবানির পশু জবাই করবেন যেভাবে
জবাই করার সময় পশু কিবলামুখী করে শুইয়ে দিয়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না উচ্চারণ করলে জবাইকৃত পশু হারাম বলে গণ্য হবে। পশু জবাই করার সময় ধারালো ছুড়ি দিয়ে জবাই করতে হবে যাতে জবাইয়ের সময় পশুর কষ্ট কম হয়।
জবাই করার সময় কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী, এবং উভয় পাশের দুটি রগ অর্থাৎ মোট চারটি রগ কাটতে হবে। তবে যদি এই চারটি রগের তিনটি রগ কাটা হয় তবে কোরবানি শুদ্ধ হবে, কিন্তু যদি দুটি রগ কাটা হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে না।
কোরবানির পশু কিবলার দিকে শোয়ানোর পর এ দোয়া পাঠ করতে হবে-
কুরবানির পশু জবেহ করার জন্য শোয়ানোর পর দোয়া পড়া। দোয়াটি হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। যদিও অনেকে দোয়াটির সনদের ব্যাপারে মতপার্থক্য করেছেন। তবে এ দোয়াগুলো পড়ে কুরবানি করা উত্তম। তবে কেউ শুধু বিসমিল্লাহ বলে নালীগুলো কেটে দিলেই কুরবানি শুদ্ধ হয়ে যাবে। দোয়াটি হলো-
اَللَّهُمَّ إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ اِبْرَاهِيْمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ – إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ – لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – بِسْمِ اللهِ اَللهُ اِكِبَر – اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَ لَكَ
উচ্চারণ- ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিল্লাতি ইবরাহিমা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
তারপর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে কুরবানির পশু জবাই করে এ পড়তে হবে- আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাতা ওয়াস সালাম। নিজের কোরবানির পশু নিজে জবাই করলে ‘মিন্নি’ উচ্চারণ করতে হবে আর অন্যের পশু জবাই করলে ‘মিন’ পড়তে হবে।