Main Menu

টর্নেডো কি, কেন হয়, কোথায় বেশি হয়, বাঁচার উপায় কি?

+100%-

টর্নেডো কী?

টর্নেডো এক ধরনের ঝড়, যা বায়ুস্তম্ভের আকারে সৃষ্ট প্রচণ্ড বেগে ঘূর্ণায়মান ঝড় যা মেঘ (সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস, ক্ষেত্রবিশেষে কিউমুলাস) এবং পৃথিবীপৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত থাকে। টর্নেডোর আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি দৃশ্যমান ঘনীভূত ফানেল আকৃতির হয়, যার চিকন অংশটি ভূপৃষ্ঠকে স্পর্শ করে এবং এটি প্রায়শই বর্জ্যের মেঘ দ্বারা ঘিরে থাকে।

আবহাওয়া বিজ্ঞানের শব্দকোষ (Glossary of Meteorology) অনুযায়ী, টর্নেডো হল প্রচণ্ডবেগে ঘূর্ণনরত একটি বায়ুস্তম্ভ, যা ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে একটি কিউমুলিফর্ম মেঘ থেকে ঝুলন্ত বা এর নীচে থাকে, এবং প্রায়শই (কিন্তু সবসময় নয়) একটি ফানেলাকৃতির মেঘ হিসেবে দৃশ্যমান থাকে।

কী ভাবে টর্নেডো তৈরি হয়?

টর্নেডো তৈরি হয় অনেকটা কালবৈশাখীর নিয়ম মেনে। সমুদ্র থেকে গরম জলীয় বাষ্প ভরা বাতাস সমতলে ঢুকে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকে। এক সময়ে তা ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে চলে আসে। আর তার থেকেই তৈরি হয় উল্লম্ব মেঘ। উল্লম্ব মেঘ উচ্চতায় বাড়তে থাকে এবং এক সময় সেই মেঘ ভেঙে গিয়ে তৈরি হয় কালবৈশাখী। টর্নেডো তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটাও প্রায় একই রকম। তবে এ ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহের জটিলতায় দীর্ঘকায় উল্লম্ব মেঘের ভিতরে ঘূর্ণি তৈরি হয়। সেই ঘূর্ণি একটি সরু ফানেলের আকারে (মনে হয় যেন হাতির শুঁড়) নেমে আসে মাটির কাছাকাছি। আর মাটি ছুঁয়েই সেই দৈত্যাকৃতি ঘূর্ণায়মান ফানেল তার কেন্দ্রের দিকে সব কিছু টেনে নেয়। তার ফলে ওই ঘূর্ণায়মান ফানেল যে এলাকা দিয়ে যায় সেখানেই ধ্বংসলীলার স্বাক্ষর রেখে যায়।(কোন মেঘপুঞ্জ শেষ পর্যন্ত টর্নেডোতে রূপান্তরিত হবে, এখনও তা অজানা আবহবিজ্ঞানীদের।)

টর্নেডো বছরের কোন সময়ে হয়?

শীতের শেষ থেকে বর্ষার শুরু এই সময়টাতেই টর্নেডো হানা দেয় বেশি।

টর্নেডো কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে অধিকাংশই স্থায়ী হয় মিনিট দশেক।

টর্নেডোর আকৃতি:

অধিকাংশ টর্নেডো দেখতে একটি সরু ফানেলের মত হয়, ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বর্জ্যের ক্ষুদ্র মেঘ দ্বারা কয়েকশ গজ (কয়েকশ মিটার) বিস্তৃত থাকে। তবে, টর্নেডো বিভিন্ন আকার এবং আকৃতির হতে পারে।
ক্ষুদ্র, তুলনামূলকভাবে দুর্বল ভূমিস্তম্ভগুলিকে শুধুমাত্র একটি ছোট ধুলার ঘূর্নি হিসেবে ভূপৃষ্ঠে দেখা যায়। যদিও ঘনীভূত ফানেল অনেক সময় ভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত নাও থাকতে পারে, তবু যদি বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ মাইলের (বা ঘন্টায় ৬৪ কিমি) বেশী হয়, তবে এ ঘূর্ণন টর্নেডো হিসেবে বিবেচিত হয়। বৃহৎ এক-ঘূর্ণি টর্নেডোগুলি দেখতে অনেকটা ভূপৃষ্ঠে পোঁতা কীলকের (Wedge)মত দেখায়। এজন্য এগুলোকে Wedge বা কীলক টর্নেডো বলে। এই কীলকাকৃতির টর্নেডোগুলো এতই বিস্তৃত হয় যে শুধু ঘন কালো মেঘের স্তুপই দেখা যায়, বিস্তারে ভূপৃষ্ঠ থেকে মেঘের দূরত্বের চাইতেও বেশী বিস্তৃত হয়। এজন্য অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদরাও অনেক সময় দূর থেকে দেখে নীচু আকাশে ঝুলন্ত মেঘ এবং কীলকাকার টর্নেডোর মধ্যে পার্থক্য করতে হিমশিম খেয়ে যান
নিঃশেষিত পর্যায়ে টর্নেডো দেখতে সরু নল বা দড়ির মত লাগে, এবং অনেক সময় বেঁকে গিয়ে নানা জটিল আকৃতি নেয়। একে বলা হয় রোপিং আউট যেখানে টর্নেডোগুলো রজ্জু টর্নেডোতে পরিণত হয়। বহু-ঘূর্ণি টর্নেডোগুলো দেখতে একটি নির্দিষ্ট কেন্দ্রকে আবর্তিত অসংখ্য ঘূর্ণির মত লাগে, অথবা ঘনীভবন, ধুলাবালি এবং বর্জ্যের কারণে সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে একটি ফানেলের রূপ নেয়।
এসব আকৃতি ছাড়াও বৃষ্টি এবং ধূলার কারণে অনেক সময় টর্নেডোর আকৃতি বোঝা যায় না। এই টর্নেডোগুলো খুবই বিপদজনক, কারণ অভিজ্ঞ আবহাওয়াবিদরাও অনেক সময় এদের সনাক্ত করতে পারেন না।

টর্নেডোতে ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি হয় কেন?

উল্লম্ব মেঘের ঘূর্ণি ফানেলের আকৃতিতে একেবারে মাটির কাছাকাছি চলে আসে। ওই ফানেলের মধ্যে যা কিছু পড়ে, সব উড়িয়ে নিয়ে যায় ঝড়। সেই ঝড় একটা ট্রেনের কামরাকেও লাইন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে আছড়ে ফেলতে পারে। একটা বহুতল বাড়িকে ভেঙেচুরে স্রেফ লোহার কাঠামোয় পরিণত করে দিতে পারে অতি শক্তিশালী টর্নেডো।

পৃথিবীর কোথায় কোথায় টর্নেডো বেশি হয়?

পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ এবং আমেরিকায় মেক্সিকান খাঁড়ি সংলগ্ন এলাকা। ওকলাহামা এই এলাকার মধ্যেই পড়ে।

টর্নেডোর শক্তির পরিমাপ হয় কী ভাবে?

কোন টর্নেডো কতটা ক্ষতি করল, সেই নিরিখেই তার শক্তি পরিমাপ করা হয়। ১৯৭১ সালে টি থিওডর ফুজিতা একটি স্কেল (এফ স্কেল) তৈরি করেন। কোনও টর্নেডোর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এফ স্কেলে এক থেকে পাঁচের মধ্যে ধরা হয়। এফ-ফাইভ হল সব থেকে শক্তিশালী টর্নেডো। সোমবার ওকলাহোমার টর্নেডোটি ছিল এফ-ফোর শক্তির।

টর্নেডো কাছে চলে এলে কী ধরনের শব্দ হয়?

ট্রেন কাছে চলে এলে যে রকম শব্দ হয়, অনেকটা সেই রকম। আবার অনেক সময় জলপ্রপাতের শব্দও মনে হয়।

সব থেকে শক্তিশালী টর্নেডো কবে, কোথায় হয়েছিল?
১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল। বাংলাদেশে। মানিকগঞ্জ জেলায় মারা গিয়েছিলেন ১৩০০ মানুষ।

টর্নেডোর পূর্বাভাস সম্ভব কি?
মেঘপুঞ্জ কী ভাবে তৈরি হচ্ছে, ডপলার রেডারে তা বোঝা যায়। তার ভিত্তিতে সতর্ক বার্তা জারি করা হয়।

টর্নেডো পরিবার (Tornado family)

অনেক সময় দেখা যায় একটিমাত্র টর্নেডো থেকে অনেকগুলো টর্নেডো এবং মেসোসাইক্লোনের সৃষ্টি হয়। যখন একটি পৃথক মেসোসাইক্লোন থেকে একটি পৃথক টর্নেডোর সৃষ্টি হয়, এই প্রক্রিয়াকে বলে সাইক্লিক টর্নেডোজেনেসিস। একই টর্নেডো থেকে সৃষ্ট টর্নেডোসমূহকে বলা হয় টর্নেডো পরিবার। কখনো কখনো পৃথক একটি মেসোসাইক্লোন থেকে অনেক টর্নেডো একসাথে সৃষ্টি হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে দেখা যায় পুরনো টর্নেডো নতুন সৃষ্ট হওয়া টর্নেডোর সাথে একীভূত হয়ে যায়।

সাবধানতা অবলম্বনে কী করা উচিত?
বাড়িতে মাটির নীচে তৈরি ঘরে আশ্রয় নেওয়াই সব চেয়ে নিরাপদ। গাড়িতে থাকা একেবারেই উচিত নয়।

ক্রেডিট: বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।